15 May 2016

বাবা আদম মসজিদ

বাবা আদম মসজিদ
বাবা আদম মসজিদ বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। এটি পঞ্চদশ শতকে নির্মিত। এ মসজিদে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদের চত্বরে জনাব বাবা আদমের (রহ.)-এর মাজার অবস্থিত।
এ মসজিদের ছাদে ৬টি গম্বুজ রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে বিস্তারিত ভিত্তি এলাকা দৈর্ঘ্যে ৪৩ ফুট এবং প্রস্থে ৩৬ ফুট। এর দেয়াল ইটে নির্মিত যা প্রায় ৪ ফুট প্রশস্থ। ইটের আকার ১০ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি ও ৫ ইঞ্চি। এগুলো লাল পোড়ামাটির ইট। সম্মুখভাগে তিনটি খিলানাকৃতির প্রবেশ পথ রয়েছে যার মাঝেরটি বর্তমানে ব্যবহৃত হয়। অভ্যন্তরভাগে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব রয়েছে আর পূর্ব দেয়ালে রয়েছে আরবি লিপিতে উৎকীর্ণ একটি শিলাফলক। পশ্চিম দেয়ালের পশ্চাৎভাগ বাইরের দিকে তিন স্তরে বর্ধিত। পেছনের বর্ধিতাংশটি অতীব সুন্দর টেরাকোটা অলংকরণে নকশাকৃত, যার সাথে মোয়াজ্জমপুর মসজিদের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। মিহরাবের মাঝখানে এবং পূর্ব ফাসাদে ঝুলন্ত শিকল ঘণ্টা ও ঝুলন্ত তক্তীর নকশা রয়েছে। তাছাড়া কুলুঙ্গির মাঝখানে বহু খাঁজবিশিষ্ট খিলান, জ্যামিতিক নকশা ও খিলান শীর্ষে ‘রোজেট’ নকশা লক্ষণীয়; এরূপ নকশাসমৃদ্ধ ‘ফাসাদ’ দেখতে পাওয়া যায় সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত শাহজাদপুর মসজিদে।
১০৯৯ সালে বাবা আদম সৌদি আরবের মক্কা নগরের অদূরে তায়েফে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে আধ্যাত্মিক জ্ঞান সাধনায় বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর সাহচর্য পেতে বর্তমান ইরাকের বাগদাদে আসেন। বর্তমান বাংলাদেশের ধলেশ্বরীর তীরে মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমে আসেন ১১৭৮ সালে সেন শাসন আমলে। তখন বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ ছিল বল্লাল সেনের রাজত্বে। ওই বছরই বল্লাল সেনের হাতে প্রাণ দিতে হয় তাঁকে। হিজরী ৮৮৮ তথা ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয় বাবা আদম মসজিদ। মসজিদ নির্মাণে ৪ বছর সময় লেগেছিল।
দর্গা বাড়ীতেই শহীদ বাবা আদমের সমাধির পশ্চিম কোণে শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ বাবা আদম-এর খানকা শরীফের স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য সুলতান জালালউদ্দীন আবু জাফর শাহ-এর পুত্র মালিক কাফুরকে নির্দেশ দেন। ১৪৭৯ সালে মালিক কাফুর সুদৃঢ় বিস্তীর্ণ পাথর ভিতের উপর দুইটি স্তম্ভের কাঠামোতে মজবুত খিলানের উপর ছয় গম্ভুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
আনন্দ ভট্টের বল্লালচরিত নামক গ্রন্থে বল্লাল সেনের সঙ্গে বাবা আদমের যুদ্ধের কাহিনী পাওয়া যায়। এ গ্রন্থে বল্লালের শত্রুর নামকরণ করা হয়েছে ’বায়াদুম্ব’, যা স্পষ্টতই বাবা আদমের অপভ্রংশ। বাবা আদম এবং তাঁর অনুসারীদের ‘ম্লেচ্ছ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে (এ সময়ে মুসলমানদের বুঝাতে হিন্দু লেখকগণ প্রায়শ ম্লেচ্ছ শব্দটি ব্যবহার করতেন)। বলা হয় যে, বাবা আদম পাঁচ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী পরিচালনা করেন। রাজা এবং তার পরিবারের ভাগ্য কিংবদন্তিতে উল্লিখিত রূপেই বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আনন্দ ভট্টের সময়কাল নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। কাহিনীটি মূলগ্রন্থের একটি পরিশিষ্ট বিধায় কোনো কোনো আধুনিক পন্ডিত এর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ ধারণায় কিছুটা সত্যতা রয়েছে যে, তখন সেখানে বল্লাল সেন নামে একজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। তিনি চোদ্দ শতকের শেষের দিকে বিক্রমপুরে প্রতিপত্তি লাভ করেন। তিনি ছিলেন বৈদ্য সম্প্রদায়ভুক্ত এবং বারো শতকে খ্যাতি অর্জনকারী বল্লালসেন (বাংলার সেন বংশের) থেকে ভিন্ন ব্যক্তি। বৈদ্য সম্প্রদায়ের এ বল্লালসেনের অনুরোধেই আনন্দ ভট্ট তার বল্লালচরিত গ্রন্থ রচনা করেন। এ দ্বিতীয় বল্লাল সেনের সময়ে বাংলায় হিন্দু রাজশক্তি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছিল।
একসময় পন্ডিতদের ধারণা ছিল যে, বাবা আদম শহীদ ছিলেন তুর্কি বিজয়ের পূর্বে বাংলায় আগত সুফিদের একজন। কিন্তু তুর্কি বিজয়ের পূর্বে কোনো সুফি বাংলায় এসেছিলেন এমন ধারণার সপক্ষে কোনো সঠিক প্রমাণ নেই। বাবা আদমের সময় চৌদ্দ শতকের শেষ দিকে নির্ধারণ করা যেতে পারে। [আবদুল করিম]
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এ স্থাপনার তত্ত্বাবধান করছে।












No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...