30 March 2016

পরশুরামের প্রাসাদ

 পরশুরামের প্রাসাদ (Palace of Parshu Rama)


পরশুরামের প্রাসাদ মহাস্থানগড় দুর্গনগরের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় মহাস্থান গড়ে পরশুরামের প্রাসাদ পাওয়া গেছে।
পাল রাজাগণ এখানে ৭৫০ থেকে ১১২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। প্রচলিত মিথ অনুসারে রাজা নলের ছোট ভাই নীল ১০৮২-১১২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ রাজ্যের রাজা ছিলেন। সেসময় ভারতের দক্ষিণাত্বের শ্রীক্ষেত্র থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ মহাস্থানগড়ে আসেন। এই মাতৃহন্তারক ব্রাহ্মণ প্রথমে পুন্ড্রনগরের প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পান। পরে নল ও তার ভাইয়ের (নীল) মধ্যে মীমাংসা করেতে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। পরে নল ও নীলের সাথে প্রতারণা করে সে ব্রাহ্মণ পুন্ড্রনগরের রাজা হন। এ অভিশপ্ত ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। আর এ রামই মহাস্থানগড়ে পরশুরাম নামে পরিচিত। শাহ সুলতান বলখীর মাজার থেকে প্রায় ২৫০ মিটার এবং মহাকালীর কুণ্ড থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার উত্তরে এ এলাকার শেষ হিন্দু রাজা পরশুরামের প্রাসাদ ছিল। এখানে খননের (১৯৬১) ফলে পাল, মুসলিম ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের নানা সাংস্কৃতিক নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। খননের নিম্নতর স্তরে পাল আমলের নানা ভবনের ধ্বংসাবশেষ, কিছু পোড়ামাটির নকশি পাতলা ইট (ফলক) এবং এ স্থানের মধ্যস্থলে কিছু ভবনের অবশেষও এ ভবনের বলে অনুমিত কিছু পোড়া মাটির পাত্র পাওয়া গেছে। এগুলি মুসলিম শাসনামলের। খনন এলাকার সর্বোচ্চ স্তরে আঠারো কিংবা উনিশ শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত একটি বাসভবনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটিই পরশুরামের প্রাসাদ।
















প্রহরী কক্ষ

বর্গাকার কক্ষ আর প্রসস্থ দেয়াল



পরশুরামের প্রাসাদ
জিয়তকুণ্ড


দুর্গনগরীর সিংহ দরজা

মহাস্থানগড়ে প্রবেশের পূর্ব গেইট
মানকালীর কুণ্ড
মানকালীর কুণ্ড

মানকালীর কুণ্ড

মানকালীর কুণ্ড

মানকালীর কুণ্ড




জিয়তকুণ্ড 

জিয়তকুণ্ড 

জিয়তকুণ্ড      

শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী


হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:)-এর মাজার
 
শাহ সুলতান বলখীর মাজার কমপ্লেক্স
 মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে শিবগঞ্জ উপজেলায় হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর মাজার শরীফ অবস্থিত। কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। তাই তাকে মাহীসওয়ার বলা হয়। কথিত আছে, মীর বোরহান নামে একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানি দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার পুত্রকে বলির আদেশ দেন। তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে চড়ে শাহ সুলতান বলখীর আগমন ঘটে।
শাহ সুলতান দামেস্কে এক ধর্ম শিক্ষকের কাছে ১২ বছর শিক্ষার্জন করেন। পারস্য থেকে তিনি মাছের পিঠে আরোহন করে বগুড়ার বরেন্দ্রে (মহাস্থানগড়ে) আগমন করেন। মহাস্থানগড়ের প্রাচীন নাম ছিল বরেন্দ্র বা পুন্ড্র নগর। এক সময় মৌত, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজাদের রাজধানি ছিল পুন্ড্রনগর। সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার সাথে বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল-এর। এ-সময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে অসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে। তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে রাজা হন। এই ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত।
হযরত শাহ সুলতান বলখী (র:) প্রায় ১৫ বছর পরাক্রমশালী হিন্দু রাজা পরশুরামের সাথে যুদ্ধ করেন এবং অবশেষে তাকে পরাজিত করে এখানে ইসলাম প্রচার করেন। 
 
মাজার প্রাঙ্গনে প্রবেশদ্বার

সামনের অংশে কতগুলি বাঁধানো কবর


মানত করার স্থান

মাজার কমপ্লেক্স

মাজারের সামনে

মূল মাজার কমপ্লেক্স





মাজার প্রাঙ্গনেই একটি আরামদায়ক ব্যবস্থার মসজিদ




 
 

28 March 2016

বেহুলার বাসরঘর


বেহুলার বাসরঘর/গোকুলমেধ 



বগুড়া শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে ২ কিমি দক্ষিণে গোকুল নামের গ্রামে গোকুলমেধ বা বেহুলার বাসরঘর অবস্থিত । এটি বেহুলা লক্ষিন্দরের লোহার বাসর ঘর নামে পরিচিত। স্থানটির সাথে মঙ্গল কাব্যের মনসামঙ্গল অংশের ইতিহাস জড়িত বলে গবেষকগণ অনুমান করেন।  খ্রিস্টাব্দ সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে এটি নির্মিত । কারো কারো মতে, সম্রাট অশোক এ বেহুলার বাসরঘর নির্মণ করেছেন। ১৭২ টি কক্ষ এবং ২৪ কোণ বিশিষ্ট গোসলখানা রয়েছে ।
লোকে বেহুলার বাসরঘরের ছবির নিচে ‘মহাস্থানগড়’ ক্যাপশন দিয়ে থাকে। এটা গোকুল গ্রামে। মূল মহাস্থান গড় দুর্গ নগরী দু কিলোমিটার উত্তরে।

মনসার পিতার নাম শিব। শিব সর্বভারতীয় প্রধান দেবতা। শিব পদ্মপল্লবে বীর্যপাত ঘটিয়ে মনসার জন্ম দিয়েছিলেন যার কারণে মনসার আরেক নাম পদ্মাবতী। চাঁদ সওদাগর ছিলেন শিবের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী। মনসা তাকে নিজের পূজারী বানানোর পরিকল্পনা করে। মনসা কৌশল অবলম্বন করে চাঁদ সওদাগরের মত বদলানোর চেষ্টা করলেও, চাঁদ সওদাগর শিবের কাছ থেকে দীক্ষা পাওয়া মন্ত্র ও বেদবাক্য দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। একসময় মনসা চাঁদ সওদাগরের কাছে সুন্দরী নারীর বেশে এসে হাজির হলে, চাঁদ সওদাগর তাকে তার গোপন কথা জানিয়ে দেয়। চাঁদ তার বেদবাক্যের ফলে প্রাপ্ত অলৌকিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চাঁদ শঙ্করের সাহায্য গ্রহণ করে। পূর্ণশক্তির ক্ষমতা চাঁদ সওদাগরের চেয়েও বেশি হলেও মনসা তাকে হত্যা করে চাঁদ সওদাগরকে পুনরায় অসহায় করে ফেলে। এরপরও চাঁদ সওদাগর মনসার পূজা করতে অস্বীকৃতি জানালে মনসা সাপ পাঠিয়ে তার ছয় সন্তানকে হত্যা করে। সুদিন দেখে, চাঁদ, ১৪ টি জাহাজের বহর সাজিয়ে বাণিজ্যে বের হল সিংহলের উদ্দেশে । সিংহল বাণিজ্য শেষ করে বিপুল সম্পদসমেত ফেরার পথে কালিদাহ সাগরে মনসাদেবী মহা প্রলয় সৃষ্টি করল এবং সবগুলো জাহাজ পানিতে ডুবে গেল।
এরপর চাঁদ সওদাগরের জাহাজ ডুবে যায় এবং মনসা তাকে একটি দ্বীপে নিয়ে আসে। এই দ্বীপে চাঁদ পুরনো বন্ধু চন্দ্রকেতুর দেখা পায়। চন্দ্রকেতু চাঁদ সওদাগরকে মনসার অনুসারী বানানোর চেষ্টা করলেও সে তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। সে ভিক্ষুকে পরিণত হয়েও কেবল শিব আর দূর্গার পূজা করতে থাকে। মনসার কাছে মাথা নোয়াতে অস্বীকার করায় সে তার স্বর্গের দুই বন্ধুর সাহায্য গ্রহণ করে। তারা পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্ম নিতে রাজি হয়। একজন চাঁদ সওদাগরের পুত্র ও অন্যজন চাঁদের ব্যবসায়িক বন্ধু সাহার কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। চম্পকনগরে ফিরে এসে চাঁদ সওদাগর নতুন করে তার জীবন গড়তে শুরু করে। তার একটি সন্তান জন্ম লাভ করে। এ সন্তানটি লক্ষিন্দর। কাছাকাছি সময়ে সাহার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় যার নাম রাখা হল বেহুলা।
দুটি শিশুই একসাথে বেড়ে ওঠে এবং যৌবনে উপনীত হয়। বেহুলা ও লক্ষিন্দর দুজনকে দু জনার জন্য নির্বাচন করা হয়। তাদের রাশি গণনা করে দেখা যায়, বিয়ের রাতে লক্ষিন্দর সাপের ছোবলে মৃত্যুবরণ করবে। তাদের বিয়ে ঠিক হয়। চাঁদ সওদাগর সতর্কতা হিসেবে এমন একটি বাসর ঘর তৈরি করেন যা সাপের পক্ষে ছিদ্র করে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।
কিন্তু সকল সাবধানতা স্বত্ত্বেও, মনসা তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সফল হয়। তার পাঠানো একটি সাপ ছোট একটি ফুটো দিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করে লক্ষিন্দরকে ছোবল দিয়ে হত্যা করে।
সাপের দংশনে নিহতদের স‌ৎকার না করে তাদের মৃতদেহ ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হত এ আশায়, দংশিত হয়ত কোন অলৌকিক পদ্ধতিতে জীবন ফিরে পাবে। মৃত স্বামীর সাথে ভেলায় চড়ে বসল বেহুলা সবার বাধা অগ্রাহ্য করে। একসময় ভেলা নেতাই ধোপানীর ঘাটে ভেড়ে এবং ধোপানীরে কাছে বেহুলা তার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইলে, ধোপানী একখণ্ড বাসক ডালে মন্ত্র পড়ে লক্ষিন্দরকে পুনর্জীবিত করে । বেহুলাকে নিয়ে ধোপানী শিবের নিকট উপস্থিত হয়। শিব মনসাদেবীর বিচার করে এবং চাঁদের ৬ পুত্র ও ডুবে যাওয়া ১৪ টি জাহাজ ফিরিয়ে দেয় ।
















 








বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...