25 April 2016

কুসুম্বা মসজিদ

কুসুম্বা মসজিদ
কুসুম্বা, মান্দা, নওগাঁ
কুসুম্বা মসজিদ বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার মান্দা থানার কুসুম্বা গ্রামের একটি প্রাচীন মসজিদ। কুসুম্বা দিঘির পশ্চিম পাড়ে, পাথরের তৈরি ধুসর বর্ণের মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদের প্রবেশদ্বারে বসানো ফলকে মসজিদের নির্মাণকাল লেখা রয়েছে হিজরি ৯৬৬ সাল (১৫৫৪-১৫৬০ খ্রিস্টাব্দ)। আফগানী শাসনামলের শুর বংশে শেষদিকের শাসক গিয়াসউদ্দিন বাহাদুর শাহের আমলে সুলায়মান নামে একজন এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।
মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৫৮ফুট, প্রস্থে ৪২ফুট। দুই সারিতে ৬টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের গায়ে রয়েছে লতাপাতার নকশা। প্রাচীর ঘেরা মসজিদটির প্রধান ফটকে প্রহরী চৌকি ছিলো। মসজিদটিতে ইটের গাঁথুনি, সামান্য বাঁকানো কার্ণিশ এবং সংলগ্ন আটকোণা বুরুজ -এগুলো থেকে মসজিদের স্থাপত্যে বাংলা স্থাপত্যরীতির প্রভাব পাওয়া যায়। মসজিদের মূল গাঁথুনি ইটের হলেও এর সম্পূর্ণ দেয়াল এবং ভেতরের খিলানগুলো পাথরের আস্তরণে ঢাকা। মসজিদের স্তম্ভ, ভিত্তি মঞ্চ, মেঝে ও দেয়ালের জালি নকশা পর্যন্ত পাথরের। মসজিদটি আয়তাকার এবং এতে রয়েছে তিনটি বে এবং দুটি আইল। এর পূর্বপ্রান্তে তিনটি এবং উত্তর-দক্ষিণে একটি করে প্রবেশপথ। মসজিদের কেন্দ্রীয় মিহরাবটি পশ্চিম দিকের দেয়ালের থেকে আলাদা। পশ্চিম দেয়ালের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং মাঝামাঝি প্রবেশপথ বরাবর দুটো মিহরাব রয়েছে যা মেঝের সমান্তরাল। উত্তর-পশ্চিম কোণের বে-তে মিহরাবটি একটি উচু বেদীর উপর বসানো। মোট মিহরাব আছে ৩টি, যার সবগুলো কালো পাথরের তৈরি। মসজিদটির সম্মূখে ২৫.৮৩ একের আয়তনের একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে। মিহরাবে আঙ্গুরগুচ্ছ ও লতাপাতার নকশা খোদিত রয়েছে।




































Kushumba Masjid
Kushumba, Manda, Naogaon

রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি

রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি
পতিসর, আত্রাই, নওগাঁ।
কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের বাংলাদেশে শিলাইদহ, শাহাজাদপুর ও কালিগ্রাম পরগনাসহ মোট তিনটি জমিদারি ছিল। ভাগবাটোয়ারা সূত্রে রবীন্দ্রনাথের ভাগে পড়ে কালিগ্রাম পরগনা। গোলাম মুরশিদের মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে পতিসর আসেন ১৮৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে। আহমদ রফিকের মতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯১ সালের ১৩ জানুয়ারি শাহাজাদপুর হতে পতিসর অভিমুখে রওনা হয়ে সম্ভবত ১৬ জানুয়ারী পতিসর পৌঁছান। পতিসর থেকে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে পত্রে লেখেন-‘‘আজ আমি কালীগ্রামে এসে পৌঁছালুম, তিন দিন সময় লাগল।’’ কালিগ্রাম স্টেটের কাচারীবাড়ি ছিল পতিসরে । কাচারীবাড়ীটি নাগর নদীর তীরে অবস্থিত। কাচারীবাড়িটি নির্মাণের পর ১৯৯১ সালে সংস্কার করা হয়। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজরিত অনেক নিদর্শন রয়েছে। কাচারী বাড়িটির পাশেই রয়েছে দেবেন্দ্র মঞ্চ ও রবীন্দ্র সরোবর। এখানে প্রতি বছরের ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়।
এক বিঘা জমির উপর অবস্থিত কবিগুরুর এই কাছারি বাড়ি। এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বকবির পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর এই কালিগ্রাম পরগনা ক্রয় করে ঠাকুর পরিবারের জমিদারীর অংশে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর বিশ্বকবি ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জানুয়ারি পতিসরের কাছারি বাড়িতে প্রথম আসেন তার জমিদারী দেখাশোনা ও খাজনা আদায় করতে। সেই সময় এই পরগনা থেকে খাজনা আদায় হতো প্রায় ৫০,৪২০ টাকা। বিশ্বকবি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর পুরস্কারের অর্থ থেকে ৭৫ হাজার টাকা এই পরগনার প্রজাদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার জন্য তৎকালীন সময়ে এখানে অবস্থিত কৃষি ব্যাংক মারফত পাঠিয়েছিলেন। প্রত্যন্ত পল্লী এলাকার প্রজাদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কবি ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে পতিসরে এসে ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে কালিগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন স্থাপন এবং এই প্রতিষ্ঠানের নামে ২শ বিঘা জমি দান করেন। সে বছরের ২৬ জুলাই কবি শেষবারের মত এসেছিলেন তার পতিসরের কাছারি বাড়িতে।
১৮৯১ সালের পর কবি বহুবার এসেছেন পতিসর কুঠিবাড়িতে নাগর নদী পথে বজড়ায় চড়ে। এই পতিসরে বসে কবি রচনা করেছেন কাব্য নাটিকা , বিদায় অভিশাপ, গোরা ও ঘরে বাহিরে উপন্যাসে অনেকাংশ। ছোট গল্পের মধ্যে প্রতিহিংসা, ঠাকুরদা, ইংরাজ ও ভারতবাসী প্রবন্ধ। গানের মধ্যে যেমন “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা/ তুমি আমার নিভৃত সাধনা,” বধূ মিছে রাগ করোনা, তুমি নব রুপে এসো প্রানেসহ অনেক গান। দুই বিঘা জমি, তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে কবিতাসহ বিভিন্ন কবিতা। কবির স্মৃতি বিজড়িত মনিতলার পূজামন্ডপের সেই তাল গাছটি আজ আর নেই। ঝড়ে ভেঙে গেছে অনেক আগে। তবে রবীন্দ্র গবেষকগণের মতে, পতিসর কুঠিবাড়ির সামনে যে দুই বিঘার মাঠটি আছে সেটিই কবির রচিত কবিতা দুই বিঘা জমি’র সেই মাঠ।
পতিসর-কালীগ্রাম পরগনার জমিদারির সদর কাছারি এই গ্রামে বলেই এর গুরুত্ব ভিন্ন। এখানে এসে তিনি বৃহৎ গ্রামময় পল্লী বাংলা মানুষের দুঃভরা মুখ দেখতে পেয়েছিলেন। ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ নিয়ে মানুষের কাছে তাঁর অবস্থান নির্ধারণ করে কবি ধূলিধূসরিত মাটির পৃথিবীতে, তাঁর ভাষায় ‘সংসারের তীরে’ নেমে আসেন।
১৮৪০ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, নাটোরের রানি ভবানীর জমিদারির অংশ ডিহি শাহজাহাদপুর ১৩ টাকা ১০ আনায় কিনলে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত দ্বিতল ভবনটি পান ঠাকুর পরিবার৷ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৬৯ সালে এ বাড়িটি সংরক্ষিত ঘোষণা করে এখানে প্রতিষ্ঠা করে জাদুঘর৷
কবির ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই এলাকার প্রজাদের জন্য সর্বপ্রথম কলের লাঙল এনেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন সরকার ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে এক অর্ডিন্যান্স বলে কালিগ্রাম পরগনার জমিদারি কেড়ে নিলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর সস্ত্রীক পতিসরে যাতায়াত বন্ধ করে দেন। তৎকালীন রবীন্দ্রবিরোধী পাকিস্তান সরকার ১৯৪৭ হতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এখানে কোন অনুষ্ঠান করতে দেয়নি। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে পতিসরের এই রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় নিয়ে আসা হয় এবং সরকারিভাবে প্রতিবছর এখানে বিশ্বকবির জন্মোৎসব উদযাপন করা হয়।
নওগাঁ শহর থেকে পতিসরের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার। নওগাঁ, আত্রাই এবং নাটোর হতে মাইক্রোবাস, এবং সিএনজি অটোরিকশায় পতিসর যাওয়া যায়।


























 Rabindra Kacharibari
Patisar, Atrai, Naogaon

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...