30 August 2011

বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম

বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম 
তৎসম শব্দ

১.০১
তৎসম অর্থাৎ বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে। এসব শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে।

১.০২
তবে যেসব তৎসম শব্দে ই ঈ বা উ ঊ উভয় শুদ্ধ সেইসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার-কার চিহ্ন ই-কার উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন : কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিত্কার, ধমনি, পঞ্জি, ধূলি, পদবি, ভঙ্গি, মঞ্জরি, মসি, লহরি, সরণি, সূচিপত্র, উর্ণা, উষা।

১.০৩
রেফ-এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন : অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য।

১.০৪
সন্ধির ক্ষেত্রে ক খ গ ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) লেখা যাবে। যেমন : অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, শুভংকর, হৃদয়ংগম, সংঘটন। তবে অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, গঙ্গা, বঙ্গ, লঙ্ঘন, সঙ্গ, সঙ্গী, প্রভৃতি সন্ধিবদ্ধ নয় বলে ঙ স্থানে ং হবে না।


অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দ


২.০১ ই ঈ উ ঊ

সকল অ-তৎসম অর্থাত তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের-কার চিহ্ন ই-কার উ-কার ব্যবহৃত হবে। এমনকি স্ত্রীবাচক ও জাতিবাচক ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যেমন গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, ভারি (অত্যন্ত অর্থে), শাড়ি, তরকারি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, বাঙালি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, ছুরি, টুপি, সরকারি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বে-আইনি, ছড়ি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, মামি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, ছুঁড়ি, নিচ, নিচু, ইমান, চুন, পুব, ভুখা, মুলা, পুজো, উনিশ, উনচল্লিশ।

অনুরূপভাবে- আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন : খেয়ালি, বর্ণালি, মিতালি, সোনালি, হেঁয়ালি।

তবে কোনো কোনো স্ত্রীবাচক শব্দের শেষে ঈ-কার দেওয়া যেতে পারে। যেমন : রানী, পরী, গাভী।

সর্বনাম পদরূপে এবং বিশেষণ ও ক্রিয়া-বিশেষণ পদরূপে কী শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন : কী করছ? কী পড়ো? কী খেলে? কী আর বলব? কী জানি? কী যে করি! তোমার কী। এটা কী বই? কী করে যাব? কী বুদ্ধি নিয়ে এসেছিলে। কী আনন্দ! কী দুরাশা!

অন্য ক্ষেত্রে অব্যয় পদরূপে ই-কার দিয়ে কি শব্দটি লেখা হবে। যেমন : তুমিও কি যাবে? সে কি এসেছিল? কি বাংলা কি ইংরেজি উভয় ভাষায় তিনি পারদর্শী।
পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে ই-কার হবে। যেমন : ছেলেটি, লোকটি, বইটি।

২.০২ ক্ষ

ক্ষীর, ক্ষুর ও ক্ষেত শব্দ খির, খুর ও খেত না লিখে সংস্কৃত মূল অনুসরণে ক্ষীর, ক্ষুর ও ক্ষেত-ই লেখা হবে। তবে অ-তত্সম শব্দ খুদ, খুদে, খুর, খেপা, খিধে, ইত্যাদি লেখা হবে।

২.০৩ মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন

তত্সম শব্দের বানানে ণ, ন-য়ের নিয়ম ও শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে। এ-ছাড়া তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র কোনো শব্দের বানানে ণত্ব-বিধি মানা হবে না অর্থাত ণ ব্যব হার হবে না। যেমন : অঘ্রান, ইরান, কান, কোরান, গুনতি, গোনা, ঝরনা, ধরন, পরান, সোনা, হর্ন।

তত্সম শব্দে ট ঠ ড ঢ-য়ের পূর্বে যুক্ত নাসিক্য বর্ণ ণ হয়, যেমন : কণ্টক, লুণ্ঠন, প্রচণ্ড। কিন্তু তত্সম ছাড়া অন্য সকল শব্দের ক্ষেত্রে ট ঠ ড ঢ-য়ের আগেও কেবল ন হবে। ৪.০১ দ্রষ্টব্য।

৪.০১ ণত্ব-বিধি সম্পর্কে দুই মত

অ-তত্সম শব্দের যুক্তাক্ষরের বানানের ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যগণ একমত হতে পারেন নি। একটি মতে বলা হয়েছে যে, এসব শব্দের যুক্তাক্ষরে ণ্ট ণ্ঠ ণ্ড ণ্ঢ হবে। যথা : ঘণ্টা, লণ্ঠন, গুণ্ডা। অন্যমতে বলা হয়েছে যে, এসব শব্দের যুক্তাক্ষরে ন্ট ন্ঠ ন্ড ন্ঢ হবে। যথা : ঘন্টা, প্যান্ট, প্রেসিডেন্ট, লন্ঠন, গুন্ডা, পান্ডা, ব্যান্ড, লন্ডভন্ড।

২.০৪ শ, ষ, স

তত্সম শব্দে শ, ষ, স-য়ের নিয়ম মানতে হবে। এ-ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে সংস্কৃতের ষত্ব-বিধি প্রযোজ্য হবে না।

বিদেশী মূল শব্দে শ, স-য়ের যে প্রতিষঙ্গী বর্ণ বা ধ্বনি রয়েছে বাংলা বানানে তাই ব্যব হার করতে হবে। যেমন : সাল (=বত্সর), সন, হিসাব, শহর, শরবত, শামিয়ানা, শখ, শৌখিন, মসলো, জিনিস, আপস, সাদা, পোশাক, বেহেশ্ ত, নাশতা, কিশমিশ, শরম, শয়তান, শার্ট, স্মার্ট। তবে পুলিশ শব্দটি ব্যতিক্রমরূমে শ দিয়ে লেখা হবে। তত্সম শব্দে ট, ঠ বর্ণের পূর্বে ষ হয়। যেমন : বৃষ্টি, দুষ্ট, নিষ্ঠা, পৃষ্ঠা। কিন্তু বিদেশী শব্দে এই ক্ষেত্রে স হবে। যেমন : স্টল, স্টাইল, স্টিমার, স্টুডিয়ো, স্টেশন, স্টোর, স্ট্রিট।

কিন্তু খ্রিষ্ট যেহেতু বাংলায় আত্তীকৃত শব্দ এবং এর উচ্চারণও হয় তৎসম কৃষ্টি, তুষ্ট ইত্যাদি শব্দের মতো, তাই ষ্ট দিয়ে খ্রিষ্ট শব্দটি লেখা হবে।

২.০৫ আরবি-ফারসি শব্দে 'সে', 'সিন', 'সোয়াদ' বর্ণগুলির প্রতিবর্ণরূপে স, এবং 'শিন'-এর প্রতিবর্ণরূপে শ ব্যব হৃত হবে। যেমন ; সালাম, তসলিম, ইসলাম, মুসলিম, মুসলমান, সালাত, এশা, শাবান (হিজরি মাস), শাওয়াল (হিজরি মাস), বেহেশ্ ত। এই ক্ষেত্রে স-এর পরিবর্তে ছ লেখার কিছু প্রবণতা দেখা যায়, তা ঠিক নয়। তবে যেখানে বাংলায় বিদেশী শব্দের বানান সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে স ছ-য়ের রূপ লাভ করেছে সেখানে ছ ব্যব হার করতে হবে। যেমন : পছন্দ, মিছিল, মিছরি, তছনছ।

২.০৬ ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশি s বর্ণ বা ধ্বনির জন্য স এবং sh, -sion, -ssion, -tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্য শ ব্যবহৃত হবে।

২.০৭ জ, য

বাংলায় প্রচলিত বিদেশী শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি-অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন : কাগজ, জাহাজ, হুকুম, হাসপাতাল, টেবিল, পুলিশ, ফিরিস্তি, হাজার, বাজার, জুলুম, জেব্রা।

কিন্তু ইসলাম ধর্ম-সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে 'যে', 'যাল', 'যোয়াদ', 'যোই' রয়েছে, যার ধ্বনি ইংরেজি z-এর মতো, সেক্ষেত্রে উক্ত আরবি বর্ণ গুলির জন্য য ব্যবহৃত হওয়া সঙ্গত। যেমন : আযান, এযিন, ওযু, কাযা, নামায, মুয়ায্ যিন, যোহর, রমযান। তবে কেউ ইচ্ছা করলে এই ক্ষেত্রে য-এর পরিবর্তে জ ব্যবহার করতে পারেন। জাদু, জোয়াল, জো, ইত্যাদি শব্দ জ দিয়ে লেখা বাঞ্ছনীয়।

২.০৮ এ, অ্যা

বাংলায় এ বা এ-কার দ্বারা অবিকৃত এ এবং বিকৃত বা বাঁকা অ্যা এই উভয় উচ্চারণ বা ধ্বনি নিষ্পন্ন হয়। তৎসম বা সংস্কৃত ব্যাস, ব্যায়াম, ব্যাহত, ব্যাপ্ত, জ্যামিতি, ইত্যাদি শব্দের বানান অনুরূপভাবে লেখার নিয়ম রয়েছে। অনুরূপ তত্সম এবং বিদেশী শব্দ ছাড়া অন্য সকল বানানে অবিকৃত-বিকৃত নির্বিশেষে এ বা এ-কার হবে। যেমন : দেখে, দেখি, যেন, জেনো, কেন, কেনো (ক্রয় করো), গেল, গেলে, গেছে।

বিদেশি শব্দ অবিকৃত উচ্চারণের ক্ষেত্রে এ বা এ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন : এন্ড (end), নেট, বেড, শেড।

বিদেশি শব্দে বিকৃত বা বাঁকা উচ্চারণে অ্যা বা অ্যা-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন : অ্যান্ড (and), অ্যাবসার্ড, অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাক, ম্যানেজার, হ্যাট।

তবে কিছু তদ্ভব এবং বিশেষবভাবে দেশি শব্দ রয়েছে যার অ্যা-কারযুক্ত রূপ বহুল-পরিচিত। যেমন : ব্যাঙ, চ্যাঙ, ল্যাঙ, ল্যাঠা। এসব শব্দে অ্যা অপরিবর্তিত থাকবে।

২.০৯

বাংলা অ-কারের উচ্চারণ বহুক্ষেত্রে ও-কার হয়। এই উচ্চারণকে লিখিত রূপ দেওয়ার জন্য ক্রিয়াপদের বেশ কয়েকটি রূপের এবং কিছু বিশেষণ ও অব্যয় পদের শেষে, কখনো আদিতে অনেকে যথেচ্ছভাবে ও-কার ব্যবহার করছেন। যেমন : ছিলো, করলো, বলতো, কোরছ, হোলে, যেনো, কেনো (কীজন্য), ইত্যাদি ও-কারযুক্ত বানান লেখা হচ্ছে। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অনুরূপ ও-কার ব্যবহার করা হবে না। বিশেষ ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে এমন অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়াপদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা অন্য শব্দ যার শেষে ও-কার যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ব ঘটতে পারে। যেমন : ধরো, চড়ো, বলো, বোলো, জেনো, কেনো (ক্রয় করো), করানো, খাওয়ানো, শেখানো, করাতো, মতো, ভালো, আলো, কালো, হলো।

২.১০ ং, ঙ

তত্সম শব্দে ং এবং ঙ যেখানে যেমন ব্যবহার্য ও ব্যাকরণসম্মত সেইভাবে ব্যবহার করতে হবে। এ-সম্পর্কে পূর্বে ১.০৪ অনুচ্ছেদে কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে। তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দের বানানের ক্ষেত্রে ওই নিয়মের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এই ক্ষেত্রে প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে সাধারণভাবে অনুস্বার (ং) ব্যবহৃত হবে। যেমন : রং, সং, পালং, ঢং, রাং, গাং। তবে শব্দে অব্যয় বা বিভক্তি যুক্ত হলে কিংবা পদের মধ্যে বা শেষে স্বরচিহ্ন থাকলে ঙ হবে। যেমন : বাঙালি, ভাঙা, রঙিন, রঙের। বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দ-দুটি ং দিয়ে লিখতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে তাই করা হয়েছে।

২.১১ রেফ ও দ্বিত্ব

তত্সম শব্দের অনুরূপ বানানের ক্ষেত্রে যেমন পূর্বে বলা হয়েছে, অ-তত্সম সকল শব্দেও রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন : কর্জ, কোর্তা, মর্দ, সর্দার।

২.১২ বিসর্গ

শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন : কার্যত, মূলত, প্রধানত, প্রয়াত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ।

পদমধ্যস্থ বিসর্গ থাকবে। তবে অভিধানসিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়। যেমন : দুস্থ, নিস্পৃহ।

২.১৩ আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দ

আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে ও-কার যুক্ত করা হবে। যেমন : করানো, বলানো, খাওয়ানো, পাঠানো, নামানো, শোয়ানো।

২.১৪ বিদেশি শব্দ ও যুক্তবর্ণ

বাংলায় বিদেশি শব্দের বানানে যুক্তবর্ণকে বিশ্লিষ্ট করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যুক্তবর্ণের সুবিধা হচ্ছে তা উচ্চারণের দ্বিধা দূর করে। তাই ব্যাপকভাবে বিদেশি শব্দের বানানে যুক্তবর্ণ বিশ্লিষ্ট করা অর্থাত ভেঙে দেওয়া উচিত নয়। শব্দের আদিতে তো অনুরূপ বিশ্লেষ সম্ভবই নয়। যেমন : স্টেশন, স্ট্রিট, স্প্রিন্ট, স্প্রিং। তবে কিছু কিছু বিশ্লেষ করা যায়। যেমন : সেপটেম্বর, অকটোবর, মার্কস (ক-এর নিচে হসন্ত), শেকসপিয়র (ক-এর নিচে হসন্ত), ইসরাফিল (স-এর নিচে হসন্ত)।

২.১৫ হস্-চিহ্ন

হস্-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন : কাত, মদ, চট, ফটফট, কলকল, ঝরঝর, তছনছ, জজ, টন, হুক, চেক, ডিশ, করলেন, বললেন, শখ, টাক, টক।

তবে যদি ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকে তাহলে হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : উহ্, যাহ্।

যদি অর্থের বিভ্রান্তির আশঙ্কা থাকে তাহলেও তুচ্ছ অনুজ্ঞায় হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : কর্, ধর্, মর্, বল্।

২.১৬ ঊর্ধ্ব-কমা

ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করা হবে। যেমন : করল (=করিল), ধরত, বলে (=বলিয়া), হয়ে, দু জন, চার শ, চাল (চাউল), আল (=আইল)।



বিবিধ

৩.০১

যুক্ত-ব্যঞ্জনবর্ণগুলি যতদূর সম্ভব স্বচ্ছ করতে হবে অর্থাত পুরাতন রূপ বাদ দিয়ে এগুলির স্পষ্ট রূপ দিতে হবে। তার জন্য কতকগুলি স্বরচিহ্নকে বর্ণের নিচে বসাতে হবে। যেমন গু, রু, শু, দ্রু, শ্রু, রূ, ভ্রূ, হৃ, ত্র, ভ্র। (দু:খিত, কমপিউটারে এগুলোর কোনোটাই বর্ণের নিচে দেয়া গেলো না- খলিল মাহমুদ)।

তবে ক্ষ, জ্ঞ, ঞ্জ, ষ্ণ, হ্ম, ভ্র, হ্ন- এইসব ক্ষেত্রে পরিচিত যুক্তরূপ অপরিবর্তিত থাকবে। কেননা তা বিশ্লিষ্ট করলে উচ্চারণবিকৃতির সম্ভাবনা থাকে।

৩.০২

সমাসবদ্ধ পদগুলো একসঙ্গে লিখতে হবে, মাঝখানে ফাঁক রাখা চলবে না। যেমন : সংবাদপত্র, অনাস্বাদিতপূর্ব, পূর্বপরিচিত, রবিবার, মঙ্গলবার, স্বভাবগতভাবে, লক্ষ্যভ্রষ্ট, বারবার, বিষাদমণ্ডিত, সমস্যাপূর্ণ, অদৃষ্টপূর্ব, দৃঢ়সঙ্কল্প, সংযতবাক, নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র।

বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ পদটিকে একটি, কখনো একটির বেশি হাইফেন (-) দিয়ে যুক্ত করা যায়। যেমন মা-মেয়ে, মা-ছেলে, বেটা-বেটি, বাপ-বেটা, ভবিষ্য-তহবিল, সর্ব-অঙ্গ, বে-সামরিক, স্থল-জল-আকাশ-যুদ্ধ, কিছু-না-কিছু।


৩.০৩

বিশেষণ পদ সাধারণভাবে পরবর্তী পদের সঙ্গে যুক্ত হবে না। যেমন : সুনীল আকাশ, স্তব্ধ মধ্যাহ্ন, সুগন্ধ ফুল, লাল গোলাপ, ভালো দিন, সুন্দরী মেয়ে। কিন্তু যদি সমাসবদ্ধ পদ অন্য বিশেষ্য বা ক্রিয়াপদের গুণ বর্ণনা করে তাহলে স্বভাবতই সেই যুক্তপদ একসঙ্গে লিখতে হবে। যেমন : কতদূর যাবে, একজন অতিথি, তিনহাজার টাকা, বেশির-ভাগ ছেলে, শ্যামলা-বরন মেয়ে। তবে কোথাও কোথাও সংখ্যাবাচক শব্দ একসঙ্গে লেখা যাবে। যেমন : দুজনা।

৩.০৪

নাই, নেই, না, নি এই নঞর্থক অব্যয় পদগুলি শব্দের শেষে যুক্ত না হয়ে পৃথক থাকবে। যেমন : বলে নাই, যাই নি, পাব না, তার মা নাই, আমার ভয় নেই।

তবে শব্দের পূর্বে নঞর্থক উপসর্গরূপে না উত্তরপদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। যেমন : নারাজ, নাবালক, নাহক।

অর্থ পরিস্ফুট করার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভূত হলে না-এর পর হাইফেন ব্যবহার করা যায়। যেমন : না-বলা বাণী, না-শোনা কথা, না-গোনা পাখি।

৩.০৫

উদ্ধৃতি মূলে যেমন আছে ঠিক তেমনি লিখতে হবে। কোন পুরাতন রচনায় যদি বানান বর্তমান নিয়মের অনুরূপ না হয়, উক্ত রচনার বানানই যথাযথভাবে উদ্ধৃত করতে হবে। যদি উদ্ধৃত রচনায় বানানের ভুল বা মুদ্রণের ত্রুটি থাকে, ভুলই উদ্ধৃত করে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে শুদ্ধ বানানটির উল্লেখ করতে হবে। এক বা দুই ঊর্ধ্ব-কমার দ্বারা উদ্ধৃত অংশকে চিহ্নিত করতে হবে। তবে উদ্ধৃত অংশকে যদি ইনসেট করা হয় তাহলে ঊর্ধ্ব-কমার চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে না। তাছাড়া কবিতা যদি মূল চরণ-বিন্যাস অনুযায়ী উদ্ধৃত হয় এবং কবির নামের উল্লেখ থাকে সে-ক্ষেত্রেও উদ্ধৃতি-চিহ্ন দেওয়ার দরকার নেই। ইনসেট না হলে গদ্যের উদ্ধৃতিতে প্রথমে ও শেষে উদ্ধৃতি-চিহ্ন দেওয়া ছাড়াও প্রত্যেক অনুচ্ছেদের প্রারম্ভে উদ্ধৃতি-চিহ্ন দিতে হবে। প্রথমে, মধ্যে বা শেষে উদ্ধৃত রচনার কোনো অংশ যদি বাদ দেওয়া হয় অর্থাত উদ্ধৃত করা না হয়, বাদ দেওয়ার স্থানগুলিকে তিনটি বিন্দু বা ডট্ (অবলোপ চিহ্ন) দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে। গোটা অনুচ্ছেদ, স্তবক বা একাধিক ছত্রের কোনো বৃহত্ অংশ বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি তারকার দ্বারা একটি ছত্র রচনা করে ফাঁকগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে।

কোনো পুরাতন অভিযোজিত বা সংক্ষেপিত পাঠে অবশ্য পুরাতন বানানকে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী পরিবর্তিত করা যেতে পারে।

৪.০১ ণত্ব-বিধি সম্পর্কে দুই মত

অ-তত্সম শব্দের যুক্তাক্ষরের বানানের ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যগণ একমত হতে পারেন নি। একটি মতে বলা হয়েছে যে, এসব শব্দের যুক্তাক্ষরে ণ্ট ণ্ঠ ণ্ড ণ্ঢ হবে। যথা : ঘণ্টা, লণ্ঠন, গুণ্ডা। অন্যমতে বলা হয়েছে যে, এসব শব্দের যুক্তাক্ষরে ন্ট ন্ঠ ন্ড ন্ঢ হবে। যথা : ঘন্টা, প্যান্ট, প্রেসিডেন্ট, লন্ঠন, গুন্ডা, পান্ডা, ব্যান্ড, লন্ডভন্ড।



চলতি ভাষায় ক্রিয়াপদের কতকগুলি রূপ


হ-ধাতু :

হয়, হন, হও, হস, হই। হচ্ছে। হয়েছে। হোক, হোন, হও, হ। হলো, হলে, হলাম। হতো। হচ্ছিল। হয়েছিল। হবো, হবে। হয়ো, হস। হতে, হয়ে, হলে, হবার (হওয়ার), হওয়া।

খা-ধাতু :

খায়, খাও, খান, খাস, খাই। খাচ্ছে। খেয়েছে। খাক, খান, খাও, খা। খেল, খেলে, খেলাম। খেত, খাচ্ছিল। খেয়েছিল। খাব, খাবে। খেয়ো, খাস। খেতে, খেয়ে, খেলে, খাবার (খাওয়ার), খাওয়া।

দি-ধাতু :

দেয়, দেন, দাও, দিস, দিই। দিচ্ছে। দিয়েছে। দিক, দিন, দাও, দে। দিল, দিলে, দিলাম। দিত। দিচ্ছিল। দিয়েছিল। দেবো, দেবে। দিও (দিয়ো), দিস। দিতে, দিয়ে, দিলে, দেবার (দেওয়ার), দেওয়া।

নি-ধাতু :

নেয়, নেন, নাও, নিস, নিই। নিচ্ছে। নিয়েছে। নিক, নিন, নাও, নে। নিল, নিলে, নিলাম। নিত। নিচ্ছিল। নিয়েছিল। ণেব, নেবে। নিও (নিয়ো), নিস। নিতে, নিয়ে, নিলে, নেবার (নেওয়ার), নেওয়া।

শু-ধাতু :

শোয়, শোন, শোও, শুস, শুই। শুচ্ছে। শুয়েছে। শুক, শোন, শোও, শো। শুল, শুলে, শুলাম। শুত। শুচ্ছিল। শুয়েছিল। শোব, শুয়ো, শুস। শুতে, শুয়ে, শুলে, শোবার (শোওয়ার), শোয়া।

কর্-ধাতু :

করে, করেন, করো, করিস, করি। করছে। করেছে। করুক, করুন, করো, কর। করল, করলে, করলাম। করত। করছিল। করেছিল। করব, করবে। কোরো, করিস। করতে, করে, করলে, করবার (করার), করা।

কাট্-ধাতু :

কাটে, কাটেন, কাটো, কাটিস, কাটি। কাটছে। কেটেছে। কাটুক, কাটুন, কাটো, কাট। কাটল, কাটলে, কাটলাম। কাটত। কাটছিল। কেটেছিল। কাটব, কাটবে। কেটো, কাটিস। কাটতে, কেটে, কাটলে, কাটবার (কাটার), কাটা।

লিখ্-ধাতু :

লেখে, লেখেন, লেখো, লিখিস, লিখি। লিখছে। লিখেছে। লিখুক, লিখুন, লেখো, লেখ। লিখল, লিখলে, লিখলাম। লিখত। লিখছিল। লিখেছিল। লিখব, লিখবে। লিখো, লিখিস। লিখতে, লিখে, লিখলে, লেখবার (লেখার), লেখা।

শিখ্-ধাতু :

শেখে, শেখেন, শেখো, শিখিস, শিখি। শিখছে। শিখেছে। শিখুক, শিখুন, শেখো, শেখ। শিখল, শিখলে, শিখলাম। শিখতো। শিখছিল। শিখেছিল। শিখব, শিখবে। শিখো, শিখিস। শিখতে, শিখে, শিখলে, শেখবার (শেখার), শেখা।

উঠ্-ধাতু :

ওঠে, ওঠেন, ওঠো, উঠিস, উঠি। উঠছে। উঠেছে। উঠুক, উঠুন, ওঠো, ওঠ। উঠল, উঠলে, উঠলাম। উঠত। উঠছিল। উঠব, উঠবে। ওঠো, উঠিস। উঠতে, উঠে, উঠলে, ওঠবার (ওঠার), ওঠা।

ছবি: Abu Hena Mustafa Kamal

ছবি

আবু হেনা মোস্তফা কামাল

 

আপনাদের সবার জন্যে এই উদার আমন্ত্রণ
ছবির মতো এই দেশে একবার বেড়িয়ে যান।
অবশ্য উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো মনোহারী স্পট আমাদের নেই,
কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না- আপনার স্ফীত সঞ্চয় থেকে
উপচে পড়া ডলার মার্ক কিংবা স্টার্লিঙের বিনিময়ে যা পাবেন
ডাল্লাস অথবা মেম্ফিস অথবা কালিফোর্নিয়া তার তুলনায় শিশুতোষ !

আসুন, ছবির মতো এই দেশে বেড়িয়ে যান
রঙের এমন ব্যবহার, বিষয়ের এমন তীব্রতা
আপনি কোনো শিল্পীর কাজে পাবেন না, বস্তুত শিল্প মানেই নকল নয় কি ?
অথচ দেখুন, এই বিশাল ছবির জন্যে ব্যবহৃত সব উপকরণ অকৃত্রিম;
আপনাকে আরো খুলে বলি: এটা, অর্থাৎ আমাদের এই দেশ,
এবং আমি যার পর্যটন দপ্তরের অন্যতম প্রধান, আপনাদের খুলেই বলি,
সম্পূর্ণ নতুন একটি ছবির মতো করে
             সম্প্রতি সাজানো হয়েছে।

খাঁটি আর্যবংশদ্ভূত শিল্পীর কঠোর তত্ত্বাবধানে ত্রিশ লক্ষ কারিগর
দীর্ঘ নটি মাস দিনরাত পরিশ্রম করে বানিয়েছেন এই ছবি।
এখনো অনেক জায়গায় রং কাঁচা- কিন্তু কী আশ্চর্য গাঢ় দেখেছেন ?
ভ্যান গগ্-যিনি আকাশ থেকে নীল আর শস্য থেকে
             সোনালি তুলে এনে
ব্যবহার করতেন- কখনো, শপথ করে বলতে পারি,
             এমন গাঢ়তা দেখেন নি !

আর দেখুন, এই যে নরমুণ্ডের ক্রমাগত ব্যবহার- ওর ভেতরেও
একটা গভীর সাজেশান আছে- আসলে ওটাই এই ছবির-অর্থাৎ
এই ছবির মতো দেশের- থিম্ !

জেলখানার চিঠি: Najim Hiqmat

জেলখানার চিঠি 

নাজিম হিকমত

 

প্রিয়তমা আমার,
তোমার শেষ চিঠিতে
তুমি লিখেছো:
মাথা আমার ব্যথায় টনটন করছে,
দিশেহারা আমার হৃদয়।
তুমি লিখেছো:
যদি ওরা তোমাকে ফাঁসি দেয়
তোমাকে যদি হারাই,
            আমি বাঁচবো না।

তুমি বেঁচে থাকবে প্রিয়তমা বধূ আমার
আমার স্মৃতি কালো ধোঁয়ার মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
তুমি বেঁচে থাকবে, আমার হৃদয়ের রক্তকেশী ভগিনী,
বিংশ শতাব্দীতে,
            মানুষের শোকের আয়ু
                        বড়জোর এক বছর।

মৃত্যু ...
দড়ির একপ্রান্তে দোদুল্যমান শবদেহ
আমার কাম্য নয়, সেই মৃত্যু।
কিন্তু প্রিয়তমা আমার, তুমি জেনো
জল্লাদের লোমশ হাত
যদি আমার গলায়
ফাঁসির দড়ি পরায়
নাজিমের নীল চোখে ওরা বৃথাই খুঁজে ফিরবে ভয়।
অন্তিম ঊষার অস্ফুট আলোয়
আমি দেখব, আমার বন্ধুদের, তোমাকে দেখব।
আমার সঙ্গে কবরে যাবে
শুধু আমার
            এক অসমাপ্ত গানের বেদনা।
বধূ আমার,
তুমি আমার কোমল প্রাণ মৌমাছি
চোখ তোমার মধুর চেয়েও মিষ্টি।
কেন তোমাকে আমি লিখতে গেলাম
ওরা আমাকে ফাঁসি দিতে চায়
বিচার সবেমাত্র শুরু হয়েছে
আর মানুষের মুণ্ডুটা তো বোঁটার ফুল নয়
যে ইচ্ছে করলেই ছিঁড়ে নেবে।

ও নিয়ে ভেব না
ওসব বহু দূরের ভাবনা
হাতে যদি টাকা থাকে
আমার জন্যে কিনে পাঠিও গরম একটা পাজামা
পায়ে আমার বাত ধরেছে।
ভুলে যেও না
স্বামী যার জেলখানায়
            তার মনে যেন সব সময় স্ফুর্তি থাকে
বাতাস আসে, বাতাস যায়
চেরীর একই ডাল একই ঝড়ে
            দু’বার দোলে না।

গাছে গাছে পাখির কাকলি
পাখাগুলো উড়তে চায়।
জানলা বন্ধ:
টান মেরে খুলতে হবে।

আমি তোমাকে চাই:
তোমার মত রমণীয় হোক জীবন
আমার বন্ধু, আমার প্রিয়তমার মত।...

আমি জানি, দুঃখের ডালি
আজও উজাড় হয়নি
কিন্তু একদিন হবে।
নতজানু হয়ে আমি চেয়ে আছি মাটির দিকে
উজ্জ্বল নীল শাখার মঞ্জুরিতে ফুলের দিকে আমি তাকিয়ে
তুমি যেন মৃন্ময়ী বসন্ত, আমার প্রিয়তমা
আমি তোমার দিকে তাকিয়ে।

মাটিতে পিঠ রেখে আমি দেখি আকাশকে
তুমি যেন মধুমাস, তুমি আকাশ
আমি তোমাকে দেখছি, প্রিয়তমা।

রাত্রির অন্ধকারে, গ্রাম দেশে শুকনো পাতায় আমি জ্বালিয়েছিলাম আগুন
আমি স্পর্শ করছি সেই আগুন
নক্ষত্রের নীচে জ্বালা অগ্নিকুণ্ডের মত তুমি
আমার প্রিয়তমা, আমি তোমাকে স্পর্শ করছি।
আমি আছি মানুষের মাঝখানে, ভালোবাসি আমি মানুষকে
ভালোবাসি আন্দোলন,
ভালোবাসি চিন্তা করতে,
আমার সংগ্রামকে আমি ভালোবাসি
আমার সংগ্রামের অন্তস্থলে মানুষের আসনে তুমি আসীন
প্রিয়তমা আমার, আমি তোমাকে ভালোবাসি।

রাত এখন ন'টা
ঘণ্টা বেজে গেছে গুমটিতে
সেলে দরোজা তালাবন্ধ হবে এক্ষুনি।
এবার জেলখানায় একটু বেশী দিন কাটল
আটটা বছর।

বেঁচে থাকার অনেক আশা, প্রিয়তমা
তোমাকে ভালোবাসার মতই একাগ্র বেঁচে থাকা।
কী মধুর, কী আশায় রঙিন তোমার স্মৃতি।...
কিন্তু আর আমি আশায় তুষ্ট নই,
আর আমি শুনতে চাইনা গান।
আমার নিজের গান এবার আমি গাইবো।

আমাদের ছেলেটা বিছানায় শয্যাগত
বাপ তার জেলখানায়
তোমার ভারাক্রান্ত মাথাটা ক্লান্ত হাতের উপর এলানো
আমি আর আমাদের এই পৃথিবী একই সুচাগ্রে দাঁড়িয়ে।

দুঃসময় থেকে সুসময়ে
মানুষ পৌঁছে দেবে মানুষকে
আমাদের ছেলেটা নিরাময় হয়ে উঠবে
তার বাপ খালাস পাবে জেল থেকে
তোমার সোনালী চোখে উপচে পড়বে হাসি
আমার আর আমাদের এই পৃথিবী একই সূচাগ্রে দাঁড়িয়ে !

যে সমুদ্র সব থেকে সুন্দর
তা আজও আমরা দেখি নি।
সব থেকে সুন্দর শিশু
আজও বেড়ে ওঠেনি।
মধুরতম যে কথা আমি বলতে চাই
সে কথা আজও আমি বলিনি।

কাল রাতে তোমাকে আমি স্বপ্ন দেখলাম
মাথা উঁচু করে
ধূসর চোখ মেলে তুমি আবছা আমার দিকে তাকিয়ে
তোমার আর্দ্র ওষ্ঠাধর কম্পমান
কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম না।
কৃষ্ণপক্ষ রাত্রে কোথাও আনন্দ সংবাদের মতো ঘড়ির টিক্ টিক্ আওয়াজ
বাতাসে গুন্ গুন্ করছে মহাকাল
আমার ক্যানারীর লাল খাঁচায়
গানের একটি কলি
লাঙ্গল চষা ভূঁইতে
মাটির বুকফুঁড়ে উদগত অঙ্কুরের দুরন্ত কলরব
আর এক মহিমান্বিত জনতার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ন্যায্য অধিকার
তোমার আর্দ্র ওষ্ঠাধর কম্পমান
কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম না।

আশাভঙ্গের অভিশাপ নিয়ে জেগে উঠলাম।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বইতে মুখ রেখে
অতগুলো কণ্ঠস্বরের মধ্যে
তোমার স্বরও কি আমি শুনতে পাইনি ?

_________________________________
(অনুবাদ: সুভাষ মুখোপাধ্যায়) 

মাকে লেখা চিঠি

মাকে লেখা চিঠি

সের্গেই আলেসান্দ্রোভিচ ইয়েসেনিন

 তুমি কি এখনও বেঁচে আছো, মা আমার, প্রিয় বুড়িটি আমার?
আমিও বেঁচে আছি। অভিবাদন তোমাকে, শুভকামনা, মা!
অপার্থিব এই সন্ধ্যার শুভাকাঙ্খাময় আলোকমালা আজ বয়ে যাক
তোমার জীর্ণ-পুরনো কুটিরখানি ঘিরে।
ওরা লিখেছে আমায়, আমার জন্য তোমার সমূহ দুর্ভাবনা ধামাচাপা দিতে,
তুমি নাকি তোমার সেই সেকেলে ধাঁচের জীর্ণ শুশান জামাটা গায়ে চাপিয়ে
খুব বিষন্নতা আর প্রতীক্ষা নিয়ে প্রায়ঃশই দাঁড়িয়ে থাকো উঁচু রাস্তার ধারে।
সন্ধ্যায়, প্রগাঢ় নীল অন্ধকার নেমে এলে,
বরাবরেই মতই, তোমার নাকি এখনও মনে হয়,
ক্যাবোকের কলহপ্রিয় কোনও হতচ্ছাড়া পাঁজি লোক, এই এক্ষুণি বুঝি,
তার চকচকে ধারালো ছুরিটি বসিয়ে দিলো একদম আমার বুক বরাবর!
সব ঠিকঠাক আছে, তুমি কিচ্ছুটি ভেবো না, প্রিয় বুড়িটি আমার! শান্ত হও।
এ হলো তোমার শংকিত মনের গহীনে জেগে ওঠা, ভয়ানক এক দুঃস্বপ্নমাত্র।
তোমার সাথে দেখা না করেই মরে যাবার মতো,
এতোটা বেঘোর-মাতাল এখনও হয়ে যাইনি আমি।
এখনও সেই আগের মতই লাজুক আর নরম স্বভাবেরই আছি আমি,
আর অবাধ্য বিষণ্ণতা-তাড়িত এই আমি, এখন মাত্র একটাই স্বপ্ন দেখি,
কখন ফিরে যাবো আমাদের সেই ছোট্ট বাড়িটায়।
আমাদের শাদা বাগানটায় আবার যখন ডালপালা মেলবে ফুলগাছগুলো,
দেখো, ঠিক ফিরে আসবো আমি।
তখন কিন্তু খুব সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙ্গিও না তুমি,
যেমনটি করতে, আট বছর আগের সেই দিনগুলোতে!
যে স্বপ্নগুলো দেখা হয়ে গেছে, আর জাগিও না তাদের,
উস্কে দিও না ওইসব স্বপ্ন, যারা কোনওদিনও মুখ দেখেনি সত্যের---
আমার এই ক্ষুদ্র জীবনের খুব শুরুতেই, অভিজ্ঞতার স্বাদ পেতে হয়েছে
স্বজন হারানোর আর অবসন্নতার।
আর, তুমি কিন্তু আমাকে শিখিয়ে দিও না, প্রার্থণার নিয়মাবলী; একদম না।
পেছনে ফিরে যাবার আর কোনও পথই খোলা নেই।
তুমিই আমার একমাত্র আশা, একমাত্র আনন্দ
তুমিই আমার একমাত্র আলোর নিশানা।
তাই, ভুলে যাও সব উদ্বিগ্নতা, আমার জন্য আর ভেবো না,
আমার জন্য যন্ত্রণাকাতর নীলকণ্ঠী হয়ো না,
তোমার সেকেলে জীর্ণ শুশান জামাটি গায়ে চাপিয়ে
উঁচু রাস্তার ধারে, আর দাঁড়িয়ে থেকো না, প্রতীক্ষায়।
_________________________________________
A Letter to Mother
Translated by Lyuba Coffey

 

হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ


মানুষ সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু আসলে গাধাকেই পছন্দ
করে।


পুঁজিবাদের আল্লার নাম টাকা, মসজিদের নাম ব্যাংক।


সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক আকর্ষনীয়। কিন্তু
ভন্ডরা বলেন উল্টো কথা।


হিন্দুরা মুর্তিপূজারী; মুসলমানেরা ভাবমুর্তিপূজারী। মুর্তিপূজা
নির্বুদ্ধিতা; আর ভাবমুর্তিপূজা ভয়াবহ।


শামসুর রাহমানকে একটি অভিনেত্রীর সাথে টিভিতে দেখা
গেছে। শামসুর রাহমান বোঝেন না কার সঙ্গে পর্দায়, আর কার
সঙ্গে শয্যায় যেতে হয়।


আগে কারো সাথে পরিচয় হ’লে জানতে ইচ্ছে হতো সে কী পাশ?
এখন কারো সাথে দেখা হ’লে জানতে ইচ্ছে হয় সে কী ফেল?


শ্রদ্ধা হচ্ছে শক্তিমান কারো সাহায্যে স্বার্থোদ্ধারের বিনিময়ে
পরিশোধিত পারিশ্রমিক।


আজকাল আমার সাথে কেউ একমত হ'লে নিজের সম্বন্ধে গভীর
সন্দেহ জাগে। মনে হয় আমি সম্ভবত সত্যভ্রষ্ট হয়েছি, বা
নিম্নমাঝারি হয়ে গেছি।


‘মিনিষ্টার’ শব্দের মূল অর্থ ভৃত্য। বাঙলাদেশের মন্ত্রীদের দেখে
শব্দটির মূল অর্থই মনে পড়ে।

১০
আগে কাননবালারা আসতো
পতিতালয় থেকে, এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

১১
জনপ্রিয়তা হচ্ছে নেমে যাওয়ার সিঁড়ি। অনেকেই আজকাল
জনপ্রিয়তার পথে নেমে যাচ্ছে।

১২
উন্নতি হচ্ছে ওপরের দিকে পতন। অনেকেরেই আজকাল ওপরের
দিকে পতন ঘটছে।

১৩
ব্যর্থরাই প্রকৃত মানুষ, সফলেরা শয়তান।

১৪
আমাদের অঞ্চলে সৌন্দর্য অশ্লীল, অসৌন্দর্য শ্লীল। রুপসীর একটু নগ্ন
বাহু দেখে ওরা হৈ চৈ করে, কিন্তু পথে পথে ভিখিরিনির উলঙ্গ দেহ
দেখে ওরা একটুও বিচলিত হয় না।

১৫
পরমাত্মীয়ের মৃত্যুর শোকের মধ্যেও মানুষ কিছুটা সুখ বোধ করে যে
সে নিজে বেঁচে আছে।

১৬
একটি স্থাপত্যকর্ম সম্পর্কেই আমার কোনো আপত্তি নেই, তার
কোনো সংস্কারও আমি অনুমোদন করি না। স্থাপত্যকর্মটি হচ্ছে
নারীদেহ।

১৭
প্রতিটি দগ্ধ গ্রন্থ সভ্যতাকে নতুন আলো দেয়।

১৮
বাঙলার প্রধান ও গৌণ লেখকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রধানেরা
পশ্চিম থেকে প্রচুর ঋণ করেন, আর গৌণরা আবর্তিত হন
নিজেদের মৌলিক মূর্খতার মধ্যে।

১৯
মহামতি সলোমনের নাকি তিন শো পত্নী, আর সাত হাজার
উপপত্নী ছিলো। আমার মাত্র একটি পত্নী। তবু সলোমনের
চরিত্র সম্পর্কে কারো কোনো
আপত্তি নেই, কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।

২০
বাঙালি মুসলমানের এক গোত্র মনে করে নজরুলই পৃথিবীর
একমাত্র ও শেষ কবি। আদের আর কোনো কবির দরকার নেই।

২১
বাঙালি যখন সত্য কথা বলে
তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে।

২২
আধুনিক প্রচার মাধ্যমগুলো
অসংখ্য শুয়োরবৎসকে মহামানবরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

২৩
অধিকাংশ রূপসীর হাসির শোভা মাংসপেশির কৃতিত্ব,
হৃদয়ের কৃতিত্ব নয়।

২৪
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে
আসে, তখনও।

২৫
আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও আবর্জনাই থাকে।

২৬
নিজের নিকৃষ্ট কালে চিরশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্যে
রয়েছে বই; আর সমকালের নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার
জন্যে রয়েছে টেলিভিশন ও সংবাদপত্র।

২৭
শৃঙ্খলপ্রিয় সিংহের থেকে স্বাধীন গাধা উত্তম।

২৮
বাঙলায় তরুণ বাবরালিরা খেলারাম, বুড়ো বাবরালিরা
ভণ্ডরাম।

২৯
প্রাক্তন বিদ্রোহীদের কবরে যখন
স্মৃতিসৌধ মাথা তোলে, নতুন বিদ্রোহীরা তখন কারাগারে
ঢোকে, ফাসিঁকাঠে ঝোলে।

৩০
একনায়কেরা এখন গণতন্ত্রের স্তব করে, পুজিঁপতিরা ব্যস্ত
থাকে সমাজতন্ত্রের প্রশংসায়।

৩১
বেতন বাঙলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা।
এক মাস খাটিয়ে এখানে পাঁচ দিনের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।

৩২
পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো;
দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।

৩৩
এক-বইয়ের-পাঠক সম্পর্কে সাবধান।

৩৪
অভিনেত্রীরাই এখন প্রাতঃস্মরণীয় ও সর্বজনশ্রদ্ধেয়।

৩৫
কবিরা বাঙলায় বস্তিতে থাকে,
সিনেমার সুদর্শন গর্দভেরা থাকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রাসাদে।

৩৬
মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর
বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।

৩৭
বুদ্ধিজীবীরা এখন বিভক্ত তিন গোত্রে।
ভন্ড, ভন্ডতর, ভন্ডতম।

৩৮
শিক্ষকের জীবনের থেকে চোর, চোরাচালানি, দারোগার জীবন
অনেক আকর্ষণীয়। এ সমাজ শিক্ষক চায় না, চোর-
চোরাচালানি-দারোগা চায়।

৩৯
শয়তানের প্রার্থনায় বৃষ্টি নামে না, ঝড় আসে; তাতে অসংখ্য সৎ
মানুষের মৃত্যু ঘটে।

৪০
যে বুদ্ধিজীবী নিজের সময় ও সমাজ নিয়ে সন্তুষ্ট, সে গৃহপালিত
পশু।

৪১
আর পঞ্চাশ বছর পর আমাকেও ওরা দেবতা বানাবে; আর
আমার বিরুদ্ধে কোনো নতুন প্রতিভা কথা বললে ওরা তাকে
ফাঁসিতে ঝুলোবে।

৪২
আমি এতো শক্তিমান আগে জানা ছিলো না।
আজকাল মিত্র নয়, শত্রুদের সংখ্যা দেখে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই।

৪৩
পা, বাঙলাদেশে, মাথার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
পদোন্নতির জন্যে এখানে সবাই ব্যগ্র,
কিন্তু মাথার যে অবনতি ঘটছে, তাতে কারো কোনো উদ্বেগ নেই।

৪৪
হায় ! থাকতো যদি একটি লম্বা পাঞ্জাবি, আমিও খ্যাতি পেতাম
মহাপণ্ডিতের।

৪৫
এখানকার একাডেমিগুলো সব ক্লান্ত গর্দভ; মুলো খাওয়া
ছাড়া ওগুলোর পক্ষে আর কিছু অসম্ভব।

৪৬
জন্মাতরবাদ ভারতীয় উপমহাদেশের অবধারিত দর্শন। এ-
অঞ্চলে এক জন্মে পরীক্ষা দিতে হয়, আরেক জন্মে ফল বেরোয়,
দু-জন্ম বেকার থাকতে হয়, এবং ভাগ্য প্রসন্ন হ’লে কোন এক
জন্মে চাকুরি মিলতেও পারে।

৪৭
রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিলো না,
কিন্তু দরকার ছিলো বাঙলা সাহিত্যের। পুরস্কার না পেলে
হিন্দুরা বুঝতো না যে রবীন্দ্রনাথ বড়ো কবি; আর
মুসলমানেরা রহিম, করিমকে দাবি করতো বাঙলার শ্রেষ্ঠ
কবি হিশেবে।

৪৮
বাঙলাদেশে কয়েকটি নতুন শাস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে;
এগুলো হচ্ছে স্তুতিবিজ্ঞান, স্তবসাহিত্য, সুবিধাদর্শন ও
নমস্কারতত্ত্ব।

৪৯
এখানে অসতেরা জনপ্রিয়, সৎ মানুষেরা আক্রান্ত।

৫০
টেলিভিশন, নিকৃষ্ট জিনিশের একনম্বর পৃষ্ঠপোষক,
হিরোইন প্যাথেডিনের থেকেও মারাত্মক। মাদক গোপনে নষ্ট
করে কিছু মানুষকে, টেলিভিশন প্রকাশ্যে নষ্ট করে কোটি কোটি
মানুষকে।

৫১
পৌরানিক পুরুষেরা সামান্য অভিজ্ঞতা ভিত্তি ক‘রে অসামান্য সব
সিদ্ধান্ত নিতেন। যযাতি পুত্রের কাছে থেকে যৌবন
ধার ক’রে মাত্র এক সহস্র বছর
সম্ভোগের পর সিদ্ধান্তে পৌছেন যে সম্ভোগে কখনো তৃপ্তি
আসে না! এতো বড়ো একটি সিদ্ধান্তের জন্যে
সহস্র বছর খুবই কম সময় : আজকাল কেউ এতো কম
অভিজ্ঞতায় এতো বড়ো একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস করবে না।

৫২
অভিনেতারা সব সময়ই অভিনেতা; তারা যখন বিপ্লব করে তখন
তারা বিপ্লবের অভিনয় করে। এটা সবাই বোঝে,
শুধু তারা বোঝে না।

৫৩
বাঙলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায়
টেলিভিশনে
কোনো আলোচনা-অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমন্ডলিতে
উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খশিরোমণি।

৫৪
বাঙলা, এবং যে-কোনো, ভাষার শুদ্ধ বানান লেখার
সহজতম উপায় শুদ্ধ বানানটি শিখে নেয়া।

৫৫
পৃথিবী জুড়ে প্রতিটি নরনারী এখন মনে ক’রে তাদের জীবন
ব্যর্থ; কেননা তারা
অভিনেতা বা অভিনেত্রী হ'তে পারে নি।

৫৬
মৌলিকতা হচ্ছে মঞ্চ থেকে দূরে অবস্থান।

৫৭
এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশদূষণ : অন্যান্য
সরকারগুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত
করেছে নারীদেরও।

৫৮
বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা
অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ’লেই বাঙালিকে পুরস্কার দেয়া উচিত।

৫৯
একজন চাষী বা নদীর মাঝি
সাংস্কৃতিকভাবে যতোটা মূল্যবান, সারা সচিবালয় ও
মন্ত্রীপরিষদও ততোটা মূল্যবান নয়।

৬০
মানুষ ও কবিতা অবিচ্ছেদ্য। মানুষ থাকলে
বুঝতে হবে কবিতা আছে : কবিতা থাকলে বুঝতে হবে মানুষ
আছে।

৬১
বাঙালি আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনোকখনো
সফল হয়; এবং সফল হওয়ার পর মনে থাকে না
কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো।

৬২
এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর
বাঙালি মুসলামান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো;
এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি
মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি
থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে
জন্ম নিচ্ছে পিতামহ।

৬৩
নিন্দুকেরা পুরোপুরি অসৎ হ’তে পারেন না, কিছুটা সততা
তাঁদের পেশার জন্যে অপরিহার্য; কিন্তু প্রশংসাকারীদের পেশার
জন্যে মিথ্যাচারই যথেষ্ট।

৬৪
বাস্তব কাজ অনেক সহজ অবাস্তব কাজের থেকে ; আট ঘন্টা
একটানা শ্রম গাধাও করতে পারে, কিন্তু একটানা এক ঘন্টা
স্বপ্ন দেখা রবীন্দ্রনাথের পক্ষেও অসম্ভব।

৬৫
একটি নির্বোধ তরুণীর সাথেও আধ ঘণ্টা কাটালে যে-জ্ঞান
হয়, আরিস্ততলের সাথে দু-হাজার বছর
কাটালেও তা হয় না।

৬৬
প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বোঝায়
যে কবি প্রেমিকাকে পায় নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা
বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।

৬৭
বিলেতের কবিগুরু বলেছিলেন যারা সঙ্গীত ভালোবাসে
না,
তারা খুন করতে পারে; কিন্তু আজকাল হাইফাই শোনার
সাথেসাথে এক ছুরিকায় কয়েকটি-গীতিকার, সুরকার,
গায়ক/গায়িকাএক-খুন করতে ইচ্ছে হয়।

৬৮
এখন পিতামাতারা গৌরব বোধ করেন যে তাঁদের পুত্রটি
গুন্ডা। বাসায় একটি নিজস্ব গুন্ডা থাকায় প্রতিবেশীরা
তাঁদের সালাম দেয়, মুদিদোকানদার
খুশি হয়ে বাকি দেয়, বাসার মেয়েরা নির্ভয়ে একলা পথে
বেরোতে পারে, এবং বাসায় একটি মন্ত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা
থাকে।

৬৯
তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার :
বন্দুক ও কবর।

৭০
প্রতিটি বিজ্ঞাপনে পণ্যটির থেকে পণ্যাটি অনেক
লোভনীয়;
তাই ব্যর্থ হচ্ছে বিজ্ঞাপনগুলো। দর্শকেরা পণ্যের থেকে
পণ্যাটিকেই কিনতে ও ব্যবহার
করতে অধিক আগ্রহ বোধ করে।

৭১
কোন দেশের লাঙলের রূপ দেখেই বোঝা যায় ওই দেশের
মেয়েরা কেমন নাচে, কবিরা কেমন কবিতা লেখেন,
বিজ্ঞানীরা কী আবিষ্কার করেন, আর রাজনীতিকেরা
কতোটা চুরি করে।

৭২
যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়,
তারা ধার্মিকও নয়, বিজ্ঞানীও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে
বিতারিত করা হয়েছিলো, তারা তার বংশধর।

৭৩
যতোদিন মানুষ অসৎ থাকে, ততোদিন তার কোনো শত্রু
থাকে না; কিন্তু যেই
সে সৎ হয়ে উঠে, তার শত্রুর অভাব থাকে না।

৭৪
নারী সম্পর্কে আমি একটি বই লিখছি; কয়েকজন মহিলা
আমাকে বললেন, অধ্যাপক হয়ে আমার এ-বিষয়ে বই লেখা
ঠিক হচ্ছে না। আমি জানতে চাইলাম, কেনো ? তাঁরা
বললেন, বিষয়টি অশ্লীল !

৭৫
এদেশে সবাই শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক : দারোগার
শোকসংবাদেও লেখা হয়,
‘তিনি শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন!'

৭৬
শিল্পকলা হচ্ছে নিরর্থক জীবনকে অর্থপূর্ণ করার ব্যর্থ প্রয়াস।

৭৭
কিছু বিশেষণ ও বিশেষ্য পরস্পরসম্পর্কিত; বিশেষ্যটি এলে
বিশেষণটি আসে, বিশেষণটি এলে বিশেষ্যটি আসে।
তারপর একসময় একটি ব্যবহার করলেই অন্যটি বোঝায়,
দুটি একসাথে ব্যবহার করতে হয় না। যেমন : ভন্ড বললেই
পীর আসে, আবার পীর বলতেই ভন্ড আসে।
এখন আর ‘ভন্ড পীর’ বলতে হয় না; ‘পীর’ বললেই ‘ভন্ড
পীর’ বোঝায়।

৭৮
ভক্ত শব্দের অর্থ খাদ্য। প্রতিটি ভক্ত তার গুরুর খাদ্য। তাই
ভক্তরা দিনদিন জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হয়ে আবর্জনায়
পরিণত হয়।

৭৯
মূর্তি ভাঙতে লাগে মেরুদণ্ড, মূর্তিপূজা করতে লাগে
মেরুদণ্ডহীনতা।

৮০
আমাদের সমাজ যাকে কোনো মূল্য দেয় না, প্রকাশ্যে তার
অকুণ্ঠ প্রশংসা করে, আর যাকে মূল্য দেয় প্রকাশ্যে তার নিন্দা
করে। শিক্ষকের কোনো মূল্য নেই, তাই তার প্রশংসায় সমাজ
পঞ্চমুখ; চোর, দারোগা, কালোবাজারি
সমাজে অত্যন্ত মুল্যবান, তাই প্রকাশ্যে সবাই তাদের নিন্দা
করে।

৮১
সৌন্দর্য রাজনীতির থেকে সব সময়ই উৎকৃষ্ট।

৮২
ক্ষুধা ও সৌন্দর্যবোধের মধ্যে গভীর
সম্পর্ক রয়েছে। যে-সব দেশে অধিকাংশ মানুষ
অনাহারী, সেখানে মাংসল হওয়া রূপসীর লক্ষণ; যে-সব
দেশে প্রচুর খাদ্য আছে,
সেখানে মেদহীন হওয়া রূপসীর লক্ষণ। এজন্যেই হিন্দি আর
বাঙলা ফিল্মের নায়িকাদের দেহ থেকে মাংস চর্বি উপচে
পড়ে। ক্ষুধার্ত দর্শকেরা সিনামা দেখে না, মাংস ও চর্বি
খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে।

৮৩
বাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে বই খুলুন,
অবাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে টেলিভিশন খুলুন।

৮৪
স্তবস্তুতি মানুষকে নষ্ট করে।
একটি শিশুকে বেশি স্তুতি করুন, সে কয়েকদিনে পাক্কা
শয়তান হয়ে উঠবে। একটি নেতাকে
স্তুতি করুন, কয়েকদিনের মধ্যে দেশকে সে একটি একনায়ক
উপহার দেবে।

৮৫
ধনীরা যে মানুষ হয় না, তার কারণ ওরা কখনো নিজের
অন্তরে যায় না। দুঃখ পেলে ওরা ব্যাংকক যায়, আনন্দে
ওরা আমেরিকা যায়। কখনো ওরা নিজের অন্তরে যেতে পারে
না, কেননা অন্তরে কোনো বিমান যায় না।

৮৬
বাঙলাদেশের রাজনীতিকেরা স্থূল
মানুষ, তারা সৌন্দর্য বোঝে না ব'লে গণতন্ত্রও বোঝে না;
শুধু লাইসেন্স-পারমিট-মন্ত্রীগিরি বোঝে।

৮৭
এমন এক সময় আসে সকলেরই জীবনে যখন
ব্যর্থতাগুলোকেই মনে হয় সফলতা, আর সফলতাগুলোকে
মনে হয় ব্যর্থতা।

৮৮
রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পুর্ণ বিপরীত বস্তু ; একটি ব্যাধি অপরটি স্বাস্থ্য।

৮৯
মহিলাদের ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রবল।
আমার এক বন্ধুপত্নী স্বামীর সাথে টেলিফোনে আলাপের
সময়ও তার স্বামীর মুখে হুইস্কির ঘ্রাণ পান।

৯০
আগে প্রতিভাবানেরা বিদেশ যেতো;
এখন প্রতিভাহীনেরা নিয়মিত বিদেশ যায়।

৯১
অধিকাংশ সুদর্শন পুরুষই আসলে সুদর্শন গর্দভ; তাদের
সাথে
সহবাসে একটি দুষ্প্রাপ্য প্রাণীর সাথে সহবাসের
অভিজ্ঞতা হয়।

৯২
বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের
প্রতিনিধি নয় ; তারা সবাই রুগ্ন পিতৃতন্ত্রের প্রিয় সেবাদাসী।

৯৩
কোন বাঙালি আজ পর্যন্ত আত্মজীবনী লেখে নি, কেননা
আত্মজীবনী লেখার জন্যে দরকার সততা।
বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার
আত্মজীবনী।

৯৪
মানুষের তুলনায় আর সবই ক্ষুদ্র : আকাশ তার পায়ের নিচে,
চাঁদ তার এক পদক্ষেপের দূরত্বে, মহাজগত
তার নিজের বাড়ি।

৯৫
কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো
সাক্ষাৎ না করা।

৯৬
চারাগাছেও মাঝেমাঝে ফোটে ভয়ংকর ফুল।

৯৭
পুরুষ তার পুরুষ বিধাতার হাতে লিখিয়ে নিয়েছে নিজের
রচনা; বিধাতা হয়ে উঠেছে পুরুষের প্রস্তুত বিধানের
শ্রুতিলিপিকর।

৯৮
হিন্দুবিধানে পুরুষ দ্বারা দূষিত না হওয়া পর্যন্ত
নারী পরিশুদ্ধ হয় না!

৯৯
উচ্চপদে না বসলে এদেশে কেউ মূল্য
পায় না। সক্রেটিস এদেশে জন্ম নিলে তাঁকে কোনো
একাডেমির মহাপরিচালক পদের জন্যে তদ্বির চালাতে
হতো।

১০০
সব ধরনের অভিনয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে রাজনীতি;
রাজনীতিকেরা অভিনয় করে সবচেয়ে বড় মঞ্চে ও পর্দায়।

১০১
সক্রেটিস বলেছেন তিনি দশ সহস্র
গর্দভ দ্বারা পরিবৃত। এখন থাকলে তিনি ওই সংখ্যার ডানে
কটি শূন্য যোগ করতেন?

১০২
বাঙালি মুসলমান জীবিত প্রতিভাকে
লাশে পরিনত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি
জ্বালে।

১০৩
নজরুলসাহিত্যের আলোচকেরা
সমালোচক নন, তাঁরা নজরুলের মাজারের খাদেম।

১০৪
ভ্রষ্ট বাঙালিকে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ
উপায় তার গালে শক্ত ক’রে একটি চড় কষিয়ে দেয়া।

১০৫
ভিখিরির জীবন মহৎ উপন্যাসের
বিষয় হ'তে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধানদের জীবন সুখপাঠ্য
গুজবনামারও অযোগ্য।

১০৬
বাঙালির জাতিগত আলস্য ধরা পড়ে ভাষায়। বাঙালি ‘দেরি
করে’, ‘চুরি করে’,
'আশা করে', এমনকি ‘বিশ্রাম করে’। বিশ্রামও বাঙালির
কাছে কাজ।

১০৭
বাঙালি অভদ্র, তার পরিচয় রয়েছে
বাঙালির ভাষায়। কেউ এলে বাঙালি জিজ্ঞেস করে, ‘কী
চাই?’ বাঙালির কাছে আগন্তুকমাত্রই ভিক্ষুক। অপেক্ষা করার
অনুরোধ জানিয়ে বাঙালি বলে, ‘দাঁড়ান’। বসতে বলার
সৌজন্যটুকুও বাঙালির নেই।

১০৮
এখানে সাংবাদিকতা হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট-বলপয়েন্ট-মিথ্যার
পাচঁন।

১০৯
মানুষ মরণশীল, বাঙালি অপমরণশীল।

১১০
এ-সরকার মাঝে মাঝে গোপন চক্রান্ত ফাঁস ক'রে ফেলে।
সরকার মাটি আর মানুষের সমন্বয় ঘটানোর
সংকল্প ঘোষণা করেছে। আমি ভয় পাচ্ছি, কেননা
মাটি ও মানুষের সমন্বয় ঘটে শুধু কবরে।

১১১
আজকালকার আধিকাংশ পি এইচ ডি অভিসন্দর্ভই মনে আশার
আলো জ্বালায়; মনে হয় এখানেই নিহিত আমাদের
শিক্ষাসমস্যা সমাধানের বীজ। প্রথম বর্ষ অনার্স শ্রেণীতেই
এখন পি এইচ ডি কোর্স চালু করা সম্ভব, এতে
ছাত্ররা আড়াই বছরে একটি ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে পারে।
এখানকার অধিকাংশ ডক্টরেটই স্নাতকপূর্ব ডক্টরেট;
অদূর ভবিষ্যতে উচ্চ-মাধ্যমিক ডক্টরেটও পাওয়া যাবে।

১১২
সত্য একবার বলতে হয়; সত্য
বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে
হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য ব’লে মনে হয়।

১১৩
ফুলের জীবন বড়োই করুণ। অধিকাংশ ফুল অগোচরেই
ঝ’রে যায়, আর বাকিগুলো ঝোলে
শয়তানের গলায়।

১১৪
ঢাকা শহরে, ক্রমবর্ধমান এ-পাগলাগারদে, সাতাশ বছর
আছি। ঢাকা এখন বিশ্বের বৃহত্তম পাগলাগারদ; রাজধানি নয়,
এটা পাগলাধানি; কিন্তু বদ্ধপাগলেরা
তা বুঝতে পারে না।

১১৫
বদমাশ হওয়ার থেকে পাগল হওয়া অনেক মানবিক।

১১৬
টেলিভিশনে জাহাজমার্কা আলকাতরার বিজ্ঞাপনটি
আকর্ষণীয়, তাৎপর্যপূর্ণ; তবে অসম্পুর্ণ । বিজ্ঞাপনটিতে জালে,
জাহাজে, টিনের চালে আলকাতরা লাগানোর উপকারিতার
কথা বলা হয়; কিন্তু বলা উচিত ছিলো যে জাহাজমার্কা
আলকাতরা লাগানোর উৎকৃষ্টতম স্থান হচ্ছে টেলিভিশনের
পর্দা, বিশেষ ক’রে যখন বাঙলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান
দেখা যায়।

১১৭
রবীন্দ্রনাথ এখন বাঙলাদেশের মাটি
থেকে নির্বাসিত, তবে আকাশটা তাঁর। বাঙলার আকাশের
নাম রবীন্দ্রনাথ।

১১৮
গণশৌচাগার দেখলেই কেনো
যেনো আমার বাঙালির আত্মাটির কথা বারবার মনে পড়ে।

১১৯
আমাদের অধিকাংশের চরিত্র
এতো নির্মল যে তার নিরপেক্ষ বর্ণনা দিলেও মনে হয় অশ্লীল
গালাগাল করা হচ্ছে।

১২০
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি,
তুমি কথা বলো।

১২১
বিনয়ীরা সুবিধাবাদী, আর সুবিধাবাদীরা বিনয়ী।

১২২
মোল্লারা পবিত্র ধর্মকেই নষ্ট ক’রে ফেলেছে; ওরা হাতে রাষ্ট্র
পেলে তাকে জাহান্নাম ক’রে তুলবে ।

১২৩
জীবন খুবই মূল্যবান : জীবনবাদীরা
যতোটা মূল্যবান মনে করে, তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।
আর শিল্পকলা জীবনের থেকেও মূল্যবান।

১২৪
দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম ব'লে কিছু নেই। মানুষ
যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।

১২৫
মার্ক্সবাদের কথা শুনলে এখন মোল্লারাও ক্ষেপে না,
সমাজতন্ত্রের কথা তারা সন্তোষের সাথেই শোনে; কিন্তু
শরীরের কথা শুনলে লম্পটরাও ধর্মযুদ্ধে নামে।

১২৬
কোন কালে এক কদর্য কাছিম দৌড়ে হারিয়েছিলো এক
খরগোশকে, সে-গল্পে কয়েক হাজার ধ’রে মানুষ
মুখর। তারপর খরগোশ কতো সহস্রবার হারিয়েছে
কাছিমকে, সে-কথা কেউ বলে না।

১২৭
বিধাতা মৌলবাদী নয়।
কে প্রার্থনা করলো, কে করলো না; কে কোন তরুণীর গ্রীবার
দিকে তাকালো, কোন রূপসী তার রূপের কতো অংশ
দেখালো, এসব তাকে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন করে না।
কিন্তু বিধাতার পক্ষে এতে ভীষণ উদ্বিগ্ন বোধ করে ভণ্ডরা।

১২৮
খুব ভেবে চিনতে মানুষ আত্মসমর্পণ
করে, আর অনুপ্রাণিত মুহূর্তে ঘোষণা করে স্বাধীনতা।

১২৯
মানুষ যখন তার শ্রেষ্ঠ স্বপ্নটি দেখে তখনি সে বাস করে তার
শ্রেষ্ঠ সময়ে।

১৩০
এ-বদ্বীপে দালালি ছাড়া ফুলও ফোটে না, মেঘও নামে না।

১৩১
আমার লেখার যে-অংশ পাঠককে
তৃপ্তি দেয়, সেটুকু বর্তমানের জন্যে; আর যে-অংশ তাদের
ক্ষুব্ধ করে সেটুকু ভবিষ্যতের জন্য।

১৩২
পৃথিবীতে একটি মাত্র দক্ষিনপন্থী সাম্যবাদী দল রয়েছে।
সেটি আছে বাঙলাদেশে।

১৩৩
আমাদের প্রায়-প্রতিটি মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকের ভেতরে একটি
ক’রে মৌলবাদী বাস করে। তারা পান করাকে পাপ মনে
করে, প্রেমকে গুনাহ্ মনে করে, কিন্তু চারখান বিবাহকে
আপত্তিকর মনে করে না।

১৩৪
শ্রেষ্ঠ মানুষের অনুসারীরাও কতোটা নিকৃষ্ট হ'তে পারে
চারদিকে তাকালেই তা বোঝা যায়।

১৩৫
ঋষি রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখলে বাল্যকাল থেকেই তাঁর
জন্মাব্দ ১৮৬১র আগে দুটি বর্ণ যোগ করতে আমার ইচ্ছে
হয়। বর্ণ দুটি হচ্ছে খ্রিপূ।

১৩৬
বাঙলার প্রতিটি ক্ষমতাধিকারী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ
দুর্বৃত্তদের সংঘ।

১৩৭
কবিতা এখন দু-রকম: দালালি, ও গালাগালি।

১৩৮
বাঙলাদেশের সাহিত্যে আধুনিকতাপর্বের পর কি আসবে
আধুনিকতা-উত্তর-পর্ব ? না। আসতে দেখছি গ্রাম্যতার পর্ব।

১৩৯
পাকিস্থানের ইতিহাস ঘাতক আর শহীদদের ইতিহাস।
বাঙলাদেশের ইতিহাস শহীদ আর
ঘাতকদের ইতিহাস।

১৪০
বাঙলার বিবেক খুবই সন্দেহজনক। বাঙলার চুয়াত্তরের
বিবেক সাতাত্তরে পরিণত হয় সামরিক
একনায়কের সেবাদাসে।

১৪১
বাঙলাদেশ অমরদের দেশ। এ-দেশের প্রতি বর্গমিটার মাটির
নিচে পাঁচ জন ক’রে অমর ঘুমিয়ে আছেন।

১৪২
একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার
মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।

১৪৩
পৃথিবী জুড়ে সমাজতন্ত্রের সাম্প্রতিক দুরবস্থার সম্ভবত
গভীর ফ্রয়েডীয় কারণ রয়েছে। সমাজতন্ত্রের মার্ক্সীয়,
লেলিনীয়, স্তালিনীয় আবেদন ছিলো,
কিন্তু যৌনাবেদন ছিলো না।

১৪৪
স্বার্থ সিংহকে খচ্চরে আর বিপ্লবীকে ক্লীবে পরিণত করে।

১৪৫
অপন্যাস হচ্ছে সে-ধরনের সাহিত্য, যা বছরে
লাখ টন উৎপাদিত হ’লেও সাহিত্যের কোনো উপকার হয়
না; আর আধ কেজি উৎপাদিত না হ’লেও
কোনো ক্ষতি হয় না।

১৪৬
আঠারো তলা টাওয়ারের থেকে শিশিরবিন্দু অনেক উঁচু।
চিরকাল শিশিরবিন্দুর পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু অনেক
টাওয়ারের চুড়োয় উঠেছি।

১৪৭
সৎ মানুষ মাত্রই নিঃসঙ্গ, আর সকলের আক্রমণের
লক্ষ্যবস্তু।

১৪৮
বিপ্লবীদের বেশি দিন বাঁচা ঠিক নয়।
বেশি বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।

১৪৯
পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড়ো ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম
প্রেম।

১৫০
জীবনের সারকথা কবর।

১৫১
শাড়ি প’রে শুধু শুয়ে থাকা যায়; এজন্যে বাঙালি নারীদের
হাঁটা হচ্ছে চলমান শোয়া।

১৫২
শাশ্বত প্রেম হচ্ছে একজনের শরীরে ঢুকে
আরেকজনকে স্বপ্ন দেখা।

১৫৩
প্রেম হচ্ছে নিরন্তর অনিশ্চয়তা; বিয়ে ও সংসার
হচ্ছে চূড়ান্ত নিশ্চিন্তির মধ্যে আহার, নিদ্রা,
সঙ্গম, সন্তান, ও শয়তানি।

১৫৪
মধ্যবিত্ত পতিতাদের নিয়ে সমস্যা
হচ্ছে তারা পতিতার সুখ ও সতীর পূণ্য দুটিই দাবি করে।

১৫৫
ইতিহাস হচ্ছে বিজয়ীর হাতে লেখা বিজিতের নামে একরাশ
কুৎসা।

১৫৬
এখানে কোনো কিছু সম্পর্কে কিছু লেখাকে মনে করা হয়
গভীর শ্রদ্ধার প্রকাশ। গাধা সম্পর্কে আমি একটি বই
লিখেছি, অনেকে মনে করেন আমি গাধার প্রতি যারপরনাই
শ্রদ্ধাশীল। গরু সম্পর্কে আমি একটি বই
লিখেছি, অনেকে মনে করেন গরুর প্রতি আমি প্রকাশ
করেছি আমার অশেষ শ্রদ্ধা। নারী সম্পর্কে আমি একটি বই
লিখেছি। একটি পার্টটাইম পতিতা, যার তিনবার
হাতছানিতেও আমি সাড়া দিই নি, অভিযোগ করেছেন,
নারী সম্পর্কে বই লেখার কোনো অধিকার আমার নেই,
যেহেতু আমি পতিতাদের শ্রদ্ধা করি না, অর্থাৎ তাদের
হাতছানিতে সাড়া দিই না।

১৫৭
পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা।

১৫৮
গত দু-শো বছরে গবাদিপশুর অবস্থার যতোটা উন্নতি ঘটেছে
নারীর অবস্থার ততোটা উন্নতি ঘটে নি।

১৫৯
মসজিদ ভাঙে ধার্মিকেরা, মন্দিরও ভাঙে
ধার্মিকেরা, তারপরও তারা দাবি করে তারা ধার্মিক, আর
যারা ভাঙাভাঙিতে নেই তারা অধার্মিক বা নাস্তিক।

১৬০
মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে
ভগবানের কিছু যায় আসে না; যায় আসে শুধু ধর্মান্ধদের।
ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

১৬১
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম
রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
কিন্তু ওরা তাকে চালায় ধর্মের নামে।

১৬২
মসজিদ ও মন্দির ভাঙার সময় একটি সত্য দীপ্ত হয়ে ওঠে
যে আল্লা ও ভগবান কতো নিষ্ক্রিয়, কতো অনুপস্থিত।

১৬৩
পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ
লোভী দুষ্ট লোকগুলো কী করবে?

১৬৪
ক্ষমতায় যাওয়ার একটিই উপায়;
সমস্যা সৃষ্টি করা। সমস্যা সমাধান ক’রে কেউ ক্ষমতায় যায়
না, যায় সৃষ্টি ক'রে।

১৬৫
পশু আর পাখিরাই মানবিক।

১৬৬
অন্যদের কাহিনীর ক্ষীণ সূত্র নিয়ে হ্যামলেট বা ওথেলো বা
ম্যাকবেথ লেখা, আর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের
পাঁচালী কেটে কেটে, নষ্ট ক'রে, সত্যজিতের পথের পাঁচালী
তৈরি করা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। অন্যের কাহিনীসূত্র নিয়ে
হ্যামলেট লেখা মানবপ্রজাতির একজনের বিস্ময়কর প্রতিভার
লক্ষণ, আর বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী ছিঁড়ে
সত্যজিতের পথের পাঁচালী তৈরি চিত্রগ্রহণদক্ষতার
পরিচায়ক। আরেকটি উৎকৃষ্টতর হ্যামলেট বা ওথেলো বা
ম্যাকবেথ, বা মেঘনাদবধ মানুষের ইতিহাসে আর লেখা হবে
না; কিন্তু সত্যজিতের পথের পাঁচালীর থেকে উৎকৃষ্ট পথের
পাঁচালী হয়তো তৈরি হবে আগামী দশকেই।

১৬৭
সত্যজিত যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষণ বিশ্বরত্ন,
সভ্যতারত্ন; কিন্তু অসভ্য প্রচারের যুগে মহৎ বিভূতিভূষণকে
পৃথিবী কেনো ভারতও চেনে না, চেনে
গৌণ সত্যজিৎকে।

১৬৮
বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীর পাশে সত্যজিতের চলচিত্রটি
খুবই শোচনীয় বস্তু, ওটি তৈরি না হ’লেও ক্ষতি ছিলো না;
কিন্তু বিভূতিভূষণ যদি পথের পাঁচালী না লিখতেন,
তাহলে ক্ষতি হতো সভ্যতার।

১৬৯
সৌন্দর্য যেভাবেই থাকে সেভাবেই সুন্দর।

১৭০
শরীরই শ্রেষ্ঠতম সুখের আকর।
গোলাপের পাপড়ির ওপর লক্ষ বছর শুয়ে থেকে, মধুরতম
দ্রাক্ষার সুরা কোটি বছর পান ক’রে, শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীত সহস্র
বছর উপভোগ ক’রে যতোখানি সুখ পাওয়া যায়,
তার চেয়ে অর্বুদগুণ বেশি সুখ মেলে কয়েক মুহূর্ত শরীর
মন্থন ক’রে।

১৭১
মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে
দুটি তত্ত্ব রয়েছে : অবৈজ্ঞানিকটি অধঃপতনতত্ত্ব,
বৈজ্ঞানিকটি বিবর্তনতত্ত্ব। অধঃপতনতত্ত্বের সারকথা
মানুষ স্বর্গ থেকে অধঃপতিত। বিবর্তনতত্ত্বের সারকথা মানুষ
বিবর্তনের উৎকর্ষের ফল। অধঃপতনবাদীরা অধঃপতনতত্ত্বে
বিশ্বাস করে; আমি যেহেতু মানুষের উৎকর্ষে
বিশ্বাস করি, তাই বিশ্বাস করি
বিবর্তনতত্ত্বে। অধঃপতন থেকে উৎকর্ষ সব সময়ই উৎকৃষ্ট।

১৭২
শোনা যায় পুরোনো কালে ঘটতো নানা অলৌকিক ঘটনা,
তবে পুরোনো কালের অলৌকিক ঘটনাগুলো
বানানো বা ভোজবাজি। প্রকৃত অলৌকিক ঘটনার কাল হচ্ছে
বিশশতক। পুরোনো কালের কোনো মোজেজ লাঠিকে সাপ
বানাতে, বা সমুদ্রের উপর সড়ক তৈরি করতে
পারতেন- ক্ষণিকের জন্যে। ওগুলো নিম্নমানের যাদু। সত্য
স্থায়ী অলৌকিকতা সৃষ্টি করতে পেরেছে শুধু বিশশতকের
বিজ্ঞান। বিদুৎ, বিমান, টেলিভিশন, কম্পিউটার,
নভোযান, এমনকি সামান্য শেলাইকলটিও অতীতের যে-
কোন অলৌকিক ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি
অলৌকিক। বিজ্ঞান অলৌকিকতাকে সত্যে পরিণত করেছে
ব’লে গাধাও তাতে বিষ্মিত হয় না, কিন্তু পুরোনো তুচ্ছ
অলৌকিকতার কথায় সবাই বিহ্বল হয়ে ওঠে।

১৭৩
পুরোনো কালের মানুষ যদি দৈবাৎ একটি টেলিভিশনের
সামনে এসে পড়তো, তাহলে তাকে দেবতা মনে
ক’রে পুজো করতো। আজো সেই পুজো চলতো।

১৭৪
ধর্মের কাজ মানুষের মধ্যে বিভেদ
সৃষ্টি করা; তাই এক ধার্মিকের রক্তে সব সময়ই গোপনে
শানানো হ’তে থাকে অন্য ধার্মিককে জবাই করার ছুরিকা।

১৭৫
ধার্মিক কখনোই সম্পুর্ন মানুষ নয়, অনেক সময় মানুষই নয়।

১৭৬
মৃত সিংহের থেকে জীবিত গাধাও কতো জোতির্ময় উজ্জ্বল !

১৭৭
আমার অনুরাগীরা চরম অনুরাগ প্রকাশের সময় খুব
আবেগভরে বলেন যে আমার মতো পণ্ডিত ও প্রতিভাবান
লোক আর নেই; তাই আমার অনেক কিছুই হওয়া উচিত।
যেমন অবিলম্বে আমার হওয়া উচিত কোনো একাডেমির
মহাপরিচালক, বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য
ইত্যাদি।
শুনে আমি তাঁদের ও নিজের
জন্যে খুব করুণা বোধ করি। আমি হ'তে চাই মহৎ, আর
অনুরাগীরা আমাকে ক'রে তুলতে চান ভৃত্য।

১৭৮
আপনি যখন হেঁটে যাচ্ছেন
তখন গাড়ি থেকে যদি কেউ খুব আন্তরিকভাবে মিষ্টি হেসে
আপনার দিকে হাত নাড়ে, তখন তাকে বন্ধু মনে করবেন
না।
মনে করবেন সে তার গাড়িটার দিকে
আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ ক'রে আপনাকে কিছুটা পীড়ন ক'রে
সুখী হ'তে চায়।

১৭৯
শিশু, সবুজ, তরুণীরা আছে ব’লে বেঁচে থাকা আজো
আমার কাছে আপত্তিকর হয়ে ওঠে নি।

১৮০
টাকাই অধিকাংশ মানুষের একমাত্র ইন্দ্রিয়।

১৮১
শিল্পীর কতোটা স্বাধীনতা দরকার ? নির্বোধেরা মনে করে
এবং দাবি করে যে শিল্পীর দরকার অবাধ স্বাধীনতা। যেনো
শিল্পীকে সমাজরাষ্ট্র অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে দেবে,
আর সে মনের আনন্দে শিল্পকলা সৃষ্টি ক'রে চলবে। এটা
শিল্পকলা ও স্বাধীনতা সম্পর্কে এক মর্মস্পর্শী ভ্রান্তি। সত্য
এর বিপরীত। সাধারণ মানুষের থেকে একবিন্দুও বেশি
স্বাধীনতা শিল্পীর দরকার নয়; সাধারণ মানুষেরই দরকার অবাধ
স্বাধীনতা, কেননা তার স্বাধীনতা সৃষ্টি করতে পারে না।
শিল্পীর কোনো দরকার পড়ে না দিয়ে দেয়া
স্বাধীনতার, কেননা শিল্পীর কাজই স্বাধীনতা সৃষ্টি করা, আর
স্বাধীনতা সৃষ্টি করার প্রথাগত নাম হচ্ছে শিল্পকলা।

১৮২
মানুষ মরলে লাশ হয়, সংস্কৃতি মরলে
প্রথা হয়।

১৮৩
ক্ষমতায় থাকার সময় যারা
সত্য প্রকাশ করতে দেয় না, ক্ষমতা হারানোর পর তারা
অজস্র মিথ্যার প্রকাশ রোধ করতে পারে না।

১৮৪
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।

১৮৫
পৃথিবীর প্রধান বিশ্বাসগুলো
অপবিশ্বাস মাত্র। বিশ্বাসীরা অপবিশ্বাসী।

১৮৬
শয়তানই আজকাল আল্লা আর ঈশ্বরের নাম নিচ্ছে প্রাণ
ভ’রে। আদিম শয়তান আর যাই হোক রাজনীতিবিদ ছিলো
না, কিন্তু শয়তান এখন রাজনীতি শিখেছে; আল্লা আর ঈশ্বর
আর জেসাসের নামে দিনরাত শ্লোগান দিচ্ছে।

১৮৭
মৌলবাদ হচ্ছে আল্লার নামে শয়তানবাদ।

১৮৮
একটি ধর্মান্ধের মুখের দিকে
তাকালেই বোঝা যায় আল্লা অমন লোককে পছন্দ করতে
পারে না।

১৮৯
ঐতিহ্য বলতে এখানে লাশকেই বোঝায়।
তবে লাশ জীবনকে কিছুই দিতে পারে না।

১৯০
গাধা একশো বছর বাঁচলেও সিংহ হয় না।

১৯১
একটি আমলা আর একটা মন্ত্রীর সাথে পাঁচ মিনিট
কাটানোর
পর জীবনের প্রতি ঘেন্না ধ’রে গেলো; তারপর
একটি চড়ুইয়ের সাথে দু-মুহূর্ত কাটিয়ে জীবনকে আবার
ভালবাসলাম।

১৯২
আমি ঈর্ষা করি শুধু তাদের যারা আজো জন্মে নি।

১৯৩
ভাবাদর্শগত জীবন হচ্ছে বন্দী জীবন।
মানুষ জীবন যাপনের জন্যে জন্মেছে, ভাবাদর্শ যাপনের
জন্যে জন্মে নি।

১৯৪
মুসলমানের মুক্তি ঘটে নি, কারণ তারা অতীত ও তাদের
মহাপুরুষদের সম্পর্কে কোনো সত্যনিষ্ঠ
আলোচনা করতে দেয় না।

১৯৫
গান্ধি দাবি করেন যে তিনি একই সাথে
হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, বৌদ্ধ, ইহুদি, কনফুসীয় ইত্যাদি।
একে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা মহৎ ব্যাপার ব’লে মনে
করেছেন। কিন্তু এটা প্রতারণা, ও অত্যন্ত ভয়ঙ্কর
ব্যাপার,-
তিনি নিজেকে ক’রে তুলেছেন সব ধরনের খারাপের
সমষ্টি।
এমন প্রতারণা থেকেই উৎপত্তি হয়েছে বাবরি মসজিদ
উপাখ্যানের। তিনি যদি বলতেন
আমি হিন্দু নই, খ্রিস্টান নই, মুসলমান নই, বৌদ্ধ নই,
ইহুদি নই, কনফুসীয় নই; আমি মানুষ,
তাহলে বাবরি মসজিদ উপখ্যানের সম্ভাবনা অনেক
কমতো।

১৯৬
ভারতীয় সাম্প্রদায়িকতা ও
মৌলবাদের আধুনিক উৎস মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধি।

১৯৭
সতীচ্ছদ আরব পুরুষদের জাতীয় পতাকা।

১৯৮
পাপ কোনো অন্যায় নয়, অপরাধ অন্যায়। পাপ ব্যক্তিগত,
তাতে সমাজের বা অন্যের, এমনকি পাপীর নিজেরও কোনো
ক্ষতি হয় না; কিন্তু অপরাধ সামাজিক,
তাতে উপকার হয় অপরাধীর, আর ক্ষতি হয় অন্যের বা
সমাজের।

১৯৯
সবচেয়ে হাস্যকর কথা হচ্ছে একদিন
আমরা কেউ থাকবো না।

২০০
পৃথিবীতে যতোদিন অন্তত একজনও প্রথাবিরোধী মানুষ
থাকবে, ততো দিন পৃথিবী
মানুষের।

Have Some Fun

  • "i am” সবচেয়ে ছোট ইংরেজি বাক্য।
  •  “Abstemious ও Facetious ” শব্দে সবগুলো vowel আছে। মজার ব্যাপার হল শব্দের vowel গুলো ক্রমানুসারে ( a-e-i-o-u) আছে।
  • Psychology বানানটি কঠিন? ”পিছে চলো যাই” --- এমন হলে মনে থাকবে? দেখুন: পি (p) ছে (sy) চলো (cholo) যাই (gy)। মজা!!
  • ইংরেজি Q দিয়ে গঠিত সকল শব্দে Q এ পরে u আছে।
  • Queueing এমন একটি শব্দ যার মধ্যে ৫টি vowel একসঙ্গে আছে।
  •  একই অক্ষরের পুনরাবৃত্তি না করে সবচেয়ে দীর্ঘ শব্দ হল Uncopyrightable।
  •  Rhythm সবচেয়ে দীর্ঘ ইংরেজি শব্দ যার মধ্যে vowel নাই।
  •  Floccinaucinihilipilification সবচেয়ে বেশি vowel সমৃদ্ধ শব্দ যাতে ১৮টি vowel আছে।
  •  vowel যুক্ত সবচেয়ে ছোট শব্দ হল Aও I।
  • Vowel বিহীন সবচেয়ে ছোট শব্দ হল By।
  • গুপ্তহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Assassination মনে রাখার সহজ উপায় হল গাধা-গাধা-আমি-জাতি।
  • Lieutenant শব্দের উচ্চারণ লেফট্যান্যান্ট বানান মনে রাখার সহজ উপায় হল মিথ্যা-তুমি-দশ-পিপড়া।
  • University লেখার সময় v এর পরে e ব্যবহৃত কিন্তু Varsity লেখার সময় v এর পরে a ব্যবহৃত হয়।
  • “Uncomplimentary” শব্দে সবগুলো vowel আছে। মজার ব্যাপার হল শব্দের vowel গুলো উল্টো ক্রমানুসারে ( u-o-i-e-a) আছে।
  • “Exclusionary” ৫টি vowel সমৃদ্ধ এমন একটি শব্দ যার মধ্যে কোন অক্ষরের পূনারাবৃত্তি নাই।
  • ”study, hijak, nope, deft” শব্দগুলোর প্রথম ৩ টি অক্ষর ক্রমানুসারে আছে।
  •  “Executive ও Future”এমন দুটি শব্দ যাদের এক অক্ষর পর পর vowel আছে।
  • Mozambique এমন একটি দেশের নাম যাতে সবগুলো vowel আছে।
  • A1 একমাত্র শব্দ যাতে ইংরেজী অক্ষর ও সংখ্যা আছে।
    সবচেয়ে লম্বা ইংরেজি শব্দ হল- Floccinaucinihilipilification
  • “Education” ও “Favourite” শব্দে সবগুলো vowel আছে।
  • ইংরেজি madam ও reviver শব্দকে উল্টো করে পড়লে একই হবে।
  • “a quick brown fox jumps over the lazy dog” বাক্যটিতে ইংরেজি ২৬টি অক্ষর আছে।
  • ৮0 কে letter marks বলা হ্য় কারণ L=12, E=5, T=20, T=20, E=5, R=18(অক্ষরের অবস্হানগত সংখ্যা) সুতরাং 12+5+20+20+5+18=80
  • ইংরেজিতে One Thousand লিখতে একটি a এর দরকার হয়। কিন্তু One থেকে Nine hundred & ninety nine পর্যন্ত সংখ্যাগুলো লিখতে একবারের জন্যও a অক্ষরটির প্রয়োজন হয় না।
  •  Four লিখতে চারটি অক্ষর লাগে। ইংরেজি ভাষায় আর কোনো সংখ্যা নেই যা লিখতে সংখ্যার মানের সমান অক্ষর লাগে। একটি স্ট্যান্ডার্ড কম্পিউটার বা টাইপ রাইটারে মাত্র তিন সেট অক্ষর আছে যেগুলো ইংরেজি বর্ণমালায় ক্রমানুসারে
  • Cleave হচ্ছে এমন একটি শব্দ যার দুটি সমার্থক শব্দ Adhere এবং Separate. এ দুটি শব্দ আবার একে অপরের বিপরীতার্থক।
  • Dreamt হচ্ছে ইংরেজি ভাষায় একমাত্র শব্দ যার শেষ দুটি অক্ষর mt.
  • ইংরেজি ভাষায় Set শব্দটির এত বেশি সংজ্ঞা আছে যে অন্য কোনো শব্দের তা নেই।
  • ইংরেজি ভাষায় সাত অক্ষরের একটি শব্দ Therein, যার মধ্যে থাকা অক্ষরগুলো দিয়ে আপনি the, there, he, in, rein, her, here, ere, herein শব্দগুলো লিখতে পারবেন অক্ষরগুলো কোনো রকম ওলট-পালট না করে।
  • Underground একমাত্র শব্দ যার শুরু এবং শেষে und অক্ষরগুলো আছে।

 সূত্র: নেট থেকে সংকলিত।

    29 August 2011

    Prepositions...

    Direct and Indirect Speech

    1. In an indirect question, we place the subject of the reported clause before the verb as in a statement. We usually change the tense of the verb as well as the pronouns, possessive adjectives and time expressions in the reported clause.

    Example:

    a)  We said to Janet, “Are you leaving the company next month?”

    b) We asked Janet if  she was leaving the company

       (Reporting clause) (Subject + verb) (reporting clause)

    the following month. (right)

    c)   We asked Janet if was she leaving the company

                                      (verb + subject)

    the following month. (wrong)

     

    2.  When a direct question has a yes or no answer, we use whether or if to begin the reported clause.

    Example:

    Mum said, “Are the twins in their room?”

    Mum asked me if/whether the twins were in their room.

     

    3.  When a direct question begins with the verb ‘to do’ or a (wh-word) with the verb ‘to do’, we leave out the verb ‘to do’ in the indirect question and change the tense of the main verb.

     

    Example:

    Direct question                            Indirect question

    Does ….want (present tense)    wanted (past tense)

    Did …..end (past tense)       had ended (past perfect tense)

    Jeff said to us, “When did the match end?”

    Jeff asked us when the match had ended. (right)

    Jeff asked us when did the match had ended. (wrong)

      

    4.  When a direct question begins with a wh-word & the negative form of the verb ‘to do’, we need to retain the verb ‘to do’ in the indirect question because it is the verb ‘to do’ which carries the tense.

    Example:

    Direct question                         Indirect question

    Doesn’t understand               didn’t understand

    (present tense)                            (past tense)

    Didn’t understand                 hadn’t understood

    (past tense)                                (past perfect tense)

    Susie said, “Who doesn’t want milk in their tea?”

    Susie asked who didn’t want milk in their tea.

    Tony said, “Sara, Why didn’t you inform me earlier?”

    Tony asked Sara why she hadn’t informed him earlier.

     

    Source: http://learningenglishgrammar.wordpress.com

    Prepositions of place and position

    Prepositions of place and position

    1. at, in, on, against

    We use the prepositions at, in, on and against differently in these ways:

    a)  At – to show the exact location of a person or thing, or a particular point.

    Example:      

    Joe is at the back of the bus. (exact location)

    The writer’s signature is at the bottom of the page.

    (at a particular point)

     

    b) In –to point to an enclosed area or something which has volume.

    Example:      

    There’s a crack in the mirror.  (enclosed area)

    There are a lot of beautiful illustrations in this book.       (volume)

     

    c)   On – to show that a person or thing is in a higher position than something and is touching or covering its surface.

    Example:      

    The acrobat is standing on the tightrope.

    (touching the surface)

    The chairman report is on page 5

    (covering the surface)

     

    d) Against – to someone or something is next to and touching the surface of something or being supported by it.

    Example:      

    I prefer to have my desk against the wall.

    (next to and touching the wall)

    John is leaning against hi car.

    (being supported by the car)

     

    2. before, after, on the left/right, to the left/right.

    We use before and after to show which person or thing is closer to us and is further from us.

    We use to the left and to the right to show on which side of a person or thing another person or thing is:

    Example:      

    The railway station is before the public library.

    The public library is after the railway station.

    The railway station is to the left of the public library.

    The post office is to the right of the public library.

    NOTE:     if we are standing in front of the public library and facing the road, we would describe the position of the railway station and the post office in this way:

    The railway station is on my right.

    The post office is on my left.

     

    3. Across, along, opposite

    We use the prepositions across, along, and opposite in these ways:

    a)  Across – To point to the other side of a line or space.

    Example:       Helen lives across the road from me.

    b) Along – To point to someone or something located next to a space which has a long thin shape. For example a road or a river.

    Example:       Larry lives along Smith Street.

    c)   Opposite – To point to someone or something directly facing a person or a space

    Example:       Kim sat opposite John during dinner.

    (the table is between them)

    Jenny’s favourite bakery is opposite a toy shop.

    (the road is between the two shops)

     

    Remember:

    In the expression the opposite of, the opposite is a noun, not a preposition. The opposite of is used to show that someone or something is very different from the person or thing compared with.

    Example:

    David is the opposite of James. James likes to be with people but David prefers to be by himself.

    The word ‘happy’ is the opposite of ‘sad’.

    Remember:

    The preposition before can also be used to mean in front of.

    Example:

    The little boy stood before his parent’s guests and sang confidently.

     

    4. inside, outside

    We use inside and outside to show that a person or thing is in an enclosed area or in something which has volume.

    We use outside to show the person or thing is not inside something. When we use inside and outside, we do not use the preposition of after them.

    Example:

    The children are inside the car.

    The workmen are standing outside the construction site.

     

    Source: http://learningenglishgrammar.wordpress.com

    Verb: 02

    Verbs
    • To change a verb into the past tense we add ed. (played, worked, waited)
    • If the verb ends with an e, only add a d. (moved, hoped, liked)
    • If the verb ends with a y, we change the y to an i and add ed. (dry - dried, tidy - tidied, copy- copied)
    • If the verb ends in a consonant and has a short vowel sound we double the consonant and add ed. (robbed, stopped, tapped)
    Write out the following sentences in your exercise books, fill in the missing verb(s) and add the correct ending.
    1) The dog_______ at the postman. (bark)
    2) I _______to catch the ball, but I_______ it. (try) (drop)
    3) I have _______up my pocket money to buy a toy. (save)
    4) Peter _______loudly then his nose_______. (sneeze) (wipe)
    5) Janet _______when she fell and her knee_______. (cry) (bang)
    6) The taxi_______ when the man_______ it down. (stop) (flag)
    7) Betty _______up the box and it _______to the table. (lift) (carry)
    Contributed by Michele Papageorghiou - Teaching Ideas - www.teachingideas.co.uk

    Verb: 01

    Verbs
    • When ing is added to a verb ending in e, the e is dropped, e.g. ride - Roger is riding his pony.
    • When ing is added to some verbs the last letter is doubled. These words have a short vowel sound and a consonant. The consonant is doubled before adding ing. e.g. put - He is putting his toys away.
    • Other verbs have no change and ing is added to the end.
    Fill in the gaps using the verb shown (remembering to use the correct ending).
    1) Andy kept _________ on the ice. (slip)
    2) The boy is _________ under the tree. (sleep)
    3) John passed his _______ test first time. (drive)
    4) The man is ________ his car. (wash)
    5) People were ________ on the pond. (skate)
    6) Ben was _________ in the bushes. (hide)
    7) Carol was ________ a sweater. (knit)
    8) The girl is ________ an apple. (eat)
    9) Roy went out without ________ the door. (shut)
    10) Pam is _________ to us across the road. (wave)
    Contributed by Michele Papageorghiou - Teaching Ideas - www.teachingideas.co.uk

    বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...