27 October 2011


নতুন রুট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না পেলে এগোবে না জাইকা

পথহারা মেট্রোরেল

এ কে এম জাকারিয়া ও আনোয়ার হোসেন

বিকল্প পথ ঠিক করার পরও প্রস্তাবিত মেট্রোরেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি। বিমানবাহিনীর আপত্তিতে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের পথ বিজয় সরণির পরিবর্তে সংসদ ভবন এলাকা দিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তবে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এখনো জাতীয় সংসদ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে পারেনি। প্রকল্পের অর্থায়নে প্রতিশ্রুতি দেওয়া জাপানি ঋণদান সংস্থা জাইকা বলছে, সংসদ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া তারা এগোবে না।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ-সচিব মোজাম্মেল হক খান বিজয় সরণির পরিবর্তে সংসদ ভবন এলাকা হয়ে খামারবাড়ির সামনে দিয়ে মেট্রোরেলের নতুন পথ সম্পর্কে অবহিত করতে জাইকাকে চিঠি পাঠান। চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকার সংসদ এলাকার পাশ ঘেঁষে মেট্রোরেল নির্মাণের বিষয়ে মতামত দিয়েছে। জাইকা এখন এই পথ ধরে এগোতে পারে।’ তবে এটিই চূড়ান্ত পথ কি না, চিঠিতে তা বলা হয়নি।
চিঠি পাওয়ার পর ৬ অক্টোবর জাইকা মেইল করে কিছু প্রশ্ন জানতে চায় যোগাযোগ-সচিবের কাছে। জাইকা বলেছে, বিজয় সরণি পথ পরিহার করে বিকল্প পথে মেট্রোরেল হলে সংসদ ভবন এলাকার কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সংসদের অনুমোদন লাগবে। এই অনুমোদন-প্রক্রিয়া কীভাবে হবে এবং কে অনুমোদন করবে, তা জানাতে হবে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এখনো জাইকাকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলের পথ সম্পর্কে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা থাকায় জাইকাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংসদ কিংবা সংসদ সচিবালয়। সেটা কীভাবে হবে, তা জানে না যোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, নতুন পথ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদ যোগাযোগমন্ত্রীকে ফোনে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। যোগাযোগমন্ত্রী স্পিকারকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে সংসদের জায়গা ব্যবহার না করে বিদ্যমান সড়কের ওপর দিয়ে মেট্রোরেল নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীও স্পিকারকে জানিয়েছেন, সংসদ ভবনের জমি ছাড়াই বিকল্প পথে মেট্রোরেল হবে।
জাইকা সূত্র জানিয়েছে, বিকল্প পথে মেট্রোরেল হলে সংসদ এলাকার ৫৫ মিটার ভেতরে ঢুকতে হবে। সে ক্ষেত্রে লম্বালম্বি এই ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। আর সংসদ ভবনের জমি বাঁচাতে গেলে খামারবাড়ির ১২ তলা তিনটি ভবন, ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল ভাঙা পড়তে পারে।
মেট্রোরেল নির্মাণের পর এর মাধ্যমে ঘণ্টায় গড়ে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব। ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। জাপানের আন্তর্জাতিক ঋণদান সংস্থা জাইকা সহজ শর্তে প্রকল্পের জন্য ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জাইকা প্রাক-সমীক্ষা করেছে। চূড়ান্ত সমীক্ষার পর রুটও ঠিক হয়েছে। শেষ পর্যায়ে রুটের ব্যাপারে আপত্তি এসেছে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে। তাদের দাবি, উত্তরা থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটারের মেট্রোরেল রুটটির যে অংশ বিজয় সরণি দিয়ে যাওয়ার কথা, তা তেজগাঁও বিমানবন্দরের উড়োজাহাজ ওঠানামার পথকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বিকল্প প্রস্তাবও। তবে তা নিয়ে আবার আপত্তি আছে স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদদের।
আলোচনায় তেজগাঁও বিমানবন্দর: বিমানবাহিনীর আপত্তির মূল বিষয় হচ্ছে ট্রেনসহ মেট্রোরেল লাইনটির উচ্চতা (৬৬ ফুট)। বলা হচ্ছে, রানওয়ে থেকে ৭০১ ফুট দূরে এই উচ্চতার লাইনটি বিমান ওঠানামাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। কিন্তু বিমানবন্দরটির মালিকানা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (ক্যাব)। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হচ্ছে, সাতটি স্টল (শর্ট টেকঅফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং) পোর্টের একটি হচ্ছে তেজগাঁও। এ ধরনের বিমানবন্দরে সাধারণত এমন উড়োজাহাজই ওঠানামা করে, যেগুলো ছোট রানওয়েতে ওঠানামা করতে পারে। তবে ১৫ অক্টোবর ওয়েবসাইটটি হালনাগাদ করে তেজগাঁওকে বিমানবন্দর দেখানো হয়েছে।
তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে দীর্ঘদিন বেসামরিক বিমান পরিচালনা করেছেন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত বৈমানিক বলেছেন, প্রতিটি বিমানবন্দরের মতো তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ের দুই পাশে অতিরিক্ত আরও ৫০০ ফিট করে ওভার রান রয়েছে। এখন যদি দক্ষিণ দিকের এই রান ওভার ও সঙ্গে আরও এক থেকে দুই হাজার ফুট রানওয়ে ‘ডিসপ্লেসড থ্রেসহোল্ড’ (যে চিহ্নিত অংশটি বাদ দিয়ে রানওয়েতে বিমান নামতে পারবে) হিসেবে চিহ্নিত করে এ অংশটি বাদ দিয়ে এয়ারক্রাফট নামে, তবে মেট্রোরেল লাইনে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এরপর আরও সাত হাজার ফুটের বেশি রানওয়ে থাকবে, যাতে অনায়াসে যেকোনো বিমান নামতে পারবে। বিমানবাহিনী সি-১৩০ এয়ারক্রাফটের কথা বলেছে, এটি নামতে সর্বোচ্চ রানওয়ে লাগে পাঁচ হাজার ফুট।
একাধিক বৈমানিক জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে রানওয়ের সক্ষমতার মান বলে একটি বিষয় রয়েছে, যাকে বলা হয় পিসিএন (পেভমেন্ট ক্লাসিফিকেশন নম্বর)। তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ের কোনো নির্দিষ্ট পিসিএন এখন নেই। কোন ধরনের ক্রাফট নামতে পারবে তা নির্ভর করে পিসিএনের ওপর। এখানে নেই কোনো আইএলএস (ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম)। শাহজালাল বিমানবন্দরের কোনো উড়োজাহাজ বিশেষ প্রয়োজনে এখানে নামবে সে সুযোগ নেই। আর একমাত্র হেলিকপ্টার ছাড়া এখান থেকে ভিআইপি বা ভিভিআইপি চলাচল করানোও সম্ভব নয়।
একজন বেসামরিক বৈমানিক নাম প্রকাশ করতে চান না জানিয়ে বলেন, ‘বিমানবাহিনীর যে ধরনের বিমান বর্তমানে এখানে ওঠানামা করে বলে জানি, তাতে মেট্রোরেলের এই উচ্চতা নিয়ে সমস্যা হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
বিকল্প প্রস্তাবে আপত্তি: বিমানবাহিনীর আপত্তি ও বিকল্প রুট প্রস্তাব করার পর প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সে রুটটি নিয়েই এগোনোর পথ ধরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বিজয় সরণি বাদ দিয়ে সংসদ ভবনের পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে নতুন এ পথটির বিরোধিতা করছেন দেশের নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদেরা। সংসদ ভবনের মতো একটি স্থাপনা ও এর পারিপার্শ্বিক স্থাপত্য নষ্ট করে এ পথে মেট্রোরেল করার বিরুদ্ধে তাঁরা। স্থপতি ও পরিবেশবাদী সংগঠনের অনেকে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ণ ও সুশাসন কমিটির সদস্য সচিব স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করলেন এভাবে, ‘এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা যখন নেওয়া হয়, তখন অনেক দিক বিবেচনা করে তা নেওয়া হয়, মেট্রোরেলের রুটটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তা করা হয়েছে। এখন একসময় পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষিত বিমানবন্দরের ঝুঁকির প্রশ্ন তুলে আপত্তি আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা পরিবর্তনের বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। পরিবহন বিশেষজ্ঞ, নগর পরিকল্পনাবিদ—এঁদের কারও মতামত না নিয়ে শুধু বিমানবাহিনীর আপত্তির কারণে এত সমীক্ষা করে করা একটি রুট পাল্টে যাবে তা কী করে হয়!’
একাধিক স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ সংসদ ভবনের জায়গা দিয়ে এ ধরনের একটি স্থাপনা যাওয়ার বিরোধিতা করে বলেছেন, সংসদ ভবন একদিকে যেমন জনগণের শক্তির প্রতীক, তেমনি এটি একটি অনন্য স্থাপত্য। এই স্থাপনার জায়গা দিয়ে মেট্রোরেল যাওয়ার অর্থই হচ্ছে এর বিকৃতি, যা কোনোভাবেই তাঁরা মেনে নিতে পারেন না।
যে বিমানবন্দরের কারণে মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে, সেই বিমানবন্দর ঘনবসতিপূর্ণ এই ঢাকা শহরে থাকাটাকে বিপজ্জনক মনে করছেন অনেক নগর পরিকল্পনাবিদ। স্থপতি ইকবাল হাবিব বললেন, ‘বলা হচ্ছে কৌশলগত কারণে, মানে সামরিক দিক দিয়ে এর গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু সে ধরনের পরিস্থিতিতে জনবহুল এই শহরের মাঝখানে এ ধরনের বিমানবন্দর সামরিক কাজে ব্যবহারের ঝুঁকি নেওয়ার অর্থ হচ্ছে ঢাকাবাসীকে অনেকটা মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করা।’
পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা: জাইকার আর্থিক বছর শুরু হয় এপ্রিল মাসে। জাইকার একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা চেয়েছিল সরকার মেট্রোরেলের পথ ঠিক করে দিলে চলতি অর্থবছরেই ঋণ চুক্তি চূড়ান্ত করে প্রাথমিক কাজ এগিয়ে রাখতে। নতুবা আগামী বছর এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পরবর্তী অর্থবছরে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করতে হলে প্রক্রিয়াটি প্রায় এক বছর পিছিয়ে যাবে।
যোগাযোগ-সচিব মোজাম্মেল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের যতটুকু করণীয় করেছি। বাকিটা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ঠিক করবে। আমরা চিঠি দেওয়ার পর জাইকা কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। তার জবাব শিগগিরই দেওয়া হবে।’
এ ধরনের প্রকল্প পিছিয়ে যাওয়ার বিপদের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন মেট্রোরেল বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির এক সদস্য। বলেন, ‘এখন মেট্রোরেল তৈরির যে উদ্যোগ চলছে, তা যদি কোনো কারণে পিছিয়ে যায়, তবে সামনে কাজটি আরও কঠিন হয়ে যেতে পারে। দেখা যাবে তখন আরও নতুন নতুন বাধা এসে হাজির হবে। আরও নতুন নতুন আপস করতে হতে পারে, মেট্রোরেলের আদর্শ মান ধরে রাখা সে ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়বে। মেট্রোরেলের নির্মাণকাজটি তাই দ্রুত শুরু করা জরুরি।’
জরুরি মেট্রোরেল: সাধারণভাবে বলা হয়, একটি শহরের আয়তনের ২৫ শতাংশ সড়ক থাকা উচিত। কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা করার আগে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকায় সড়ক আছে মাত্র সাত থেকে আট শতাংশ। এই সড়কগুলোর বিন্যাসও এমন যে সব রাস্তায় বাস চলাচল সম্ভব নয়। সমীক্ষা অনুযায়ী বাস চলাচল উপযোগী রাস্তা হচ্ছে মোট রাস্তার ৩০ শতাংশেরও কম। ফলে দেশে একটি সুষ্ঠু গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারেনি। নগরের যানবাহনব্যবস্থা হয়ে পড়েছে ব্যক্তিগত গাড়িনির্ভর।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বাসের সঙ্গে মেট্রোরেল-ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে অধিকাংশ জনবহুল শহরে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭২টি শহরে মেট্রোরেল সার্ভিস রয়েছে, আরও ৩৪টি শহরে এ ব্যবস্থা সংযোজিত হতে যাচ্ছে। ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে একসঙ্গে সবচেয়ে কম সময়ে বেশি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম মেট্রোরেল সার্ভিসকে তাই একটি জরুরি প্রয়োজন বলে মনে করেন দেশের নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও ইউএনএসকাপের (ট্রান্সপোর্ট ডিভিশন) সাবেক পরিচালক ড. রহমতউল্লাহর বক্তব্য হচ্ছে, যে শহরে জনসংখ্যা বেশি এবং ঘনত্বও বেশি, সেখানে মেট্রোরেল সবচেয়ে কার্যকর ও জরুরি একটি বিষয়। অন্য যেকোনো গণপরিবহনের চেয়ে এর কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। ঢাকা একটি মেগা সিটি, শুধু বাস দিয়ে এই শহরের গণপরিবহন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ হাজার লোক এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে পারে, তা ছাড়া এই যাতায়াত বাধাহীন। বাসের মাধ্যমে যা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ঢাকার জন্য তাই মেট্রোরেলের কোনো বিকল্প নেই।
______________________________________________________________


ওয়েবসাইটে হঠাৎ তথ্য বদল

বিমানবন্দর নয়, স্টলপোর্ট

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (ক্যাব) ওয়েবসাইটে তেজগাঁও কোনো পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর নয়, সীমিত বিমান চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট করা একটি স্টলপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এ বিষয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে মন্তব্য চাওয়ার পর ১৫ অক্টোবর আকস্মিকভাবে এর স্টলপোর্ট পরিচয় মুছে ফেলা হয়। হয়ে যায় ‘অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর’।
স্টল (এসটিওএল) মানে শর্ট টেকঅফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং। বিমানবন্দরের সঙ্গে স্টলপোর্টের পার্থক্য হলো, এর জন্য নামমাত্র রানওয়ে হলেই চলে।
২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টে এই স্টলপোর্টের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হলফনামা দিয়ে ক্যাবের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া স্টলপোর্ট-সংক্রান্ত কপি পেশ করেন। প্রায় চার বছর স্টলপোর্ট পরিচয় টিকে থাকে। এমনকি এ মাসের ১১ তারিখে হালনাগাদ করা ওয়েবসাইটেও স্টলপোর্ট পরিচয় ছিল।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, তেজগাঁও এলাকায় যাতে উঁচু স্থাপনা নির্মাণে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য ১৯৮৮ সালের আগস্টে এইচ এম এরশাদ তেজগাঁও বিমানবন্দরটি পরিত্যক্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত দেন। তা ছাড়া, বিগত আওয়ামী লীগের আমলে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনমতে, ওই এলাকায় যেকোনো ধরনের বিমানবন্দর রাখা অবৈধ।
এরপর আর কখনো পরিত্যক্ত ঘোষণার সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়েছিল বলে নগর পরিকল্পনাবিদদের জানা নেই। বিমানবাহিনী সদর দপ্তর এখন দাবি করছে, এটি পরিত্যক্ত নয়।
বাংলাদেশ স্থপতি পরিষদের একজন মুখপাত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৮৮ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিলের কোনো দলিল আমরা শত অনুসন্ধান করেও খুঁজে পাইনি।’
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এর আগে সুপ্রিম কোর্টে স্বীকার করে যে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তেজগাঁও বিমানবন্দর ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিল।
বিমানবাহিনী পুরাতন বিমানবন্দরকে শাহজালালের সঙ্গে তুলনা করে ‘পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর’ ধরে নিয়েই মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তন করিয়েছে। কোনো স্টলপোর্ট দিয়ে সাধারণত রোটেটিং হেলিকপ্টার ওঠানামা করে। তার জন্য বড় রানওয়ের দরকার পড়ে না।
৬ অক্টোবর আন্তবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিমানবাহিনী পুরাতন বিমানবন্দরে জঙ্গিবিমান ব্যবহারের দাবি করেছে। কিন্তু প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এর সত্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কারণ, গুগল আর্থের মাধ্যমে ২০০১ থেকে ২০১০ সালের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ ও ওয়াকিবহাল সূত্রের মতে, তেজগাঁও থেকে জঙ্গিবিমান ওড়ানো হয় না। ২০০১ সালেও এর রানওয়ে ভাঙাচোরা দেখা যায়।
এয়ারপোর্ট বনাম স্টল: ক্যাব ওয়েবসাইটে পুরাতন বিমানবন্দরকে দেশের সাতটি অচল স্টলপোর্টের অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল। ১১ অক্টোবর পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ছিল পাঁচটি। এখন এর সঙ্গে তেজগাঁও ছাড়াও প্রায় ১০ বছর ধরে অচল থাকা ঈশ্বরদীও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের নতুন খেতাব পেয়েছে। আর অচল স্টলপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে শমশেরনগর ও কুমিল্লা।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ১১ অক্টোবর প্রথম আলোকে জানায়, ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য হালনাগাদ করা নেই। যদিও ক্যাবের আবুল হাসনাত সর্বশেষ ১১ অক্টোবর ওয়েবসাইটটি হালনাগাদ করেছেন বলে উল্লেখ ছিল।
এদিকে শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়ে সাড়ে ১০ হাজার ফুট। দাবি করা হচ্ছে, তেজগাঁওয়েরটি ৯,৮০০ ফুট। অথচ স্টল সার্ভিস চালু রাখতে এর অর্ধেক দৈর্ঘ্যের রানওয়ে দরকার হয় না। এমনকি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরও তিন-চার হাজার ফুটেরও হতে পারে।
বিমানবাহিনীর দাবি, তেজগাঁও বিমানবন্দর একটি সম্পূর্ণভাবে সচল বিমানঘাঁটি, যেখান থেকে বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে সব ধরনের হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, জেটবিমান এবং বৃহদাকার পরিবহন বিমান (চার ইঞ্জিনবিশিষ্ট সি-১৩০) পরিচালনা করে থাকে।
সূত্রমতে, ঢাকায় বিমানবাহিনীর দুটি বিমানঘাঁটি। তেজগাঁও ছাড়া অন্যটির নাম বাশার ঘাঁটি। শাহজালাল বিমানবন্দরের যে অংশে মিগ-২৯ ও এফ-৭ রাখা আছে, সেটি বাশার ঘাঁটির অংশ হিসেবে গণ্য হয়। বিমানবাহিনী শাহজালালের শুধু রানওয়ে ব্যবহার করে। ১৯৮১ সালে কুর্মিটোলা (‘জিয়া’ নামকরণ হয়েছিল ১৯৮৩ সালে) বিমানবন্দর চালুর আগে যৌথভাবেই তেজগাঁও ব্যবহূত হতো। বিমানবাহিনীর চট্টগ্রাম বিমানঘাঁটির জন্যও কোনো রানওয়ে নেই। শাহ আমানতের রানওয়ে দিয়েই যথারীতি চলছে।
অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর ইশফাক এলাহি চৌধুরী অবশ্য মনে করেন, টাঙ্গাইল অঞ্চলের দিকে বিমানবাহিনীর জন্য একটি নিজস্ব এয়ারপোর্ট করে দেওয়া যেতে পারে।
তেজগাঁও আসলে কী: একটি বিমানবন্দরের রানওয়ে কত বড় থাকবে, তা নির্ভর করে কী ধরনের বিমান ওঠানামা করবে। আর এর ওপরই আশপাশের উচ্চতাজনিত বাধার বিষয়টি নির্ভর করে। উচ্চতাজনিত আপসের সুযোগ আছে। ক্যাব ম্যানুয়াল অব অ্যারোড্রাম স্ট্যান্ডার্ড বলছে, ক্যাবের চেয়ারম্যানই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। ২০০৭ সালের আগস্টে র‌্যাংগস ভবন ভাঙার রায় ঘোষণার পর গণপূর্ত ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিবদ্বয়ের যৌথ সভাপতিত্বে এক সভা হয়। এর কার্যবিবরণীতে বেসরকারি ভবনের মালিকপক্ষের বরাতে বলা আছে, ক্যাবের ওয়েবসাইটে তেজগাঁও বিমানবন্দরের উপস্থিতি/অবস্থানের উল্লেখ নেই। এটি পরিত্যক্ত। তাই উচ্চতাসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা এখানে খাটে না।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আদালতে উল্লেখ করেছিল, ‘যদিও একে পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর বলা যায় না। কিন্তু এখানে সব সুযোগ-সুবিধা আছে। আইনে বিমানবন্দর ও বিমানঘাঁটির মধ্যে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়নি।’ ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আদালতে এ যুক্তি খণ্ডন করেন। তিনি বলেছিলেন, ১৯৬০ সালের সিভিল অ্যাভিয়েশন অধ্যাদেশের আওতায় ১৯৮৪ সালের সিভিল অ্যাভিয়েশন বিধি প্রণীত হলেও পুরাতন বিমানবন্দরকে একটি ‘অপারেটিং এয়ারপোর্ট’ হিসেবে কোনো জনবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তা ছাড়া মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নাধীন রেখে তেজগাঁও বিমানবন্দর ধরার কোনো আইনি পথ খোলা নেই। (৫২ ডিএলআর ২০০০, পৃ. ৪৬৫)
রাজউকের মাস্টারপ্ল্যানের প্রথম ভলিউমের (যার বৈধতা ২০১৫ পর্যন্ত বহাল থাকবে) ৮৪ পৃষ্ঠায় পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় স্টলপোর্ট বা কোনো ধরনের রানওয়ে বজায় না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিভিল এভিয়েশনের এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে স্টল সার্ভিস চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু উচ্চতাসংক্রান্ত বিষয়ে এতে ঢালাও তথ্য দেওয়া হয় যে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য যে ধরনের, তেমনি তেজগাঁও, লালমনিরহাট ও শমসেরনগরের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য।’ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দরের জন্য যত বড় রানওয়ে এবং সেই অনুপাতে উচ্চভবনজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়, সেটা স্টলের ক্ষেত্রে ঘটে না। একটি স্টল চলাচলের জন্য ছোট রানওয়ে দরকার পড়ে।
জাতীয় প্যারেড স্কোয়ার: এইচ এম এরশাদ সাবেক তেজগাঁও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে জাতীয় প্যারেড স্কোয়ার ঘোষণা করেছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পদস্থ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বিমানবাহিনী তখনো জায়গাটি ছাড়তে চায়নি। কিন্তু এরশাদের কঠোর মনোভাবের কারণে অনেকটা নাটকীয়ভাবে বিমানবাহিনী তাদের বিমানগুলো কুর্মিটোলায় সরিয়ে নেয়।
রাজউকের নথি: ১৯৮৮ সালের ৯ আগস্ট রাজউকের চেয়ারম্যান পুরাতন বিমানবন্দরের এয়ারফানেলের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে একটি নোট লেখেন। এতে দেখা যায়, বিমান সদর ৩.৭.৮৮-তে একটি নকশা এঁকে সেই এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণে সীমাবদ্ধতা জারি করে। এর ১১ দিন পর ক্যাব এয়ারফানেলের ১৫ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণে শর্তারোপ করে। এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এড়াতে রাজউক পূর্তমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চায়। তখন তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম লেখেন, ‘এ বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির (এরশাদ) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং তিনি পুরাতন বিমানবন্দরকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং এ সিদ্ধান্ত বিমান সদর ও ক্যাবকে জানানো যায়।’ ১০ আগস্ট ১৯৮৮ তা যথারীতি জানিয়ে দেওয়া হয়।
___________________________________________________________


বিমান সদরের বক্তব্য

তেজগাঁও বিমানবন্দর পরিত্যক্ত নয়

বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলে মেট্রোরেল বাস্তবায়নে বিমানবাহিনীর মতামত-সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ পায়। এ বিষয়ে বিমানবাহিনী তার অবস্থান তুলে ধরেছে।
৬ অক্টোবর দেওয়া বিমানবাহিনীর বক্তব্যে বলা হয়, তেজগাঁও বিমানবন্দরটি অব্যবহূত বা পরিত্যক্ত নয়। এটি সম্পূর্ণভাবে সচল বিমানঘাঁটি। যেখান থেকে বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে সব ধরনের হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান, জেট বিমান ও বৃহদাকার পরিবহন বিমান (৪ ইঞ্জিনবিশিষ্ট সি-১৩০) পরিচালনা করে থাকে। এই বিমানবন্দর থেকে প্রতিবছর শুধু বিমানবাহিনীই ১০ হাজার ঘণ্টা উড্ডয়ন সম্পন্ন করে থাকে। এ ছাড়া এখান থেকে নিয়মিত ভিভিআইপি ও ভিআইপি ফ্লাইটসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রী বহনের জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়ে থাকে।
যেকোনো বিমানবন্দরের চারপাশে স্থাপনা তৈরির ক্ষেত্রে স্থাপনার উচ্চতা সিভিল অ্যাভিয়েশন বিধি (সিএআর-৮৪) এবং বাংলাদেশ গেজেট ৮৪ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী রানওয়ের অ্যাপ্রোচ ফানেলের নিকটবর্তী স্থানের স্থাপনার সর্বোচ্চ উচ্চতা রানওয়ে থেকে দূরত্বের সঙ্গে ১ ঃ ৫০ আনুপাতিক হিসাব অনুযায়ী নির্মাণ করা যেতে পারে। বিজয় সরণি দিয়ে পরিকল্পিত মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬ রানওয়ে থেকে ৭০১ ফুট দূরে অবস্থিত। সেই অবস্থানে ১৪ ফুটের বেশি উচ্চতায় কোনো স্থাপনা তৈরি বিমান উড্ডয়ন নিরাপত্তার পরিপন্থী। কিন্তু বিজয় সরণির এমআরটি লাইন-৬-এর উচ্চতা ৬২ ফুট হওয়ায় বিমান অবতরণকালে ল্যান্ডিং অ্যাপ্রোচের উচ্চতা বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিমানকে রানওয়ের প্রথম ভাগের একটি বড় অংশ বাদ দিয়ে অবতরণ করতে হবে। এতে ব্যবহার্য রানওয়ের দৈর্ঘ্য আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাবে, যা বিমানবন্দরটিকে জঙ্গি বিমান ও পরিবহন বিমানের অবতরণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।
বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের সর্বোচ্চ অংশ রানওয়ে অ্যাপ্রোচ লাইনের কিছুটা পূর্বে অবস্থিত। নভোথিয়েটারটির দুই পাশে আর কোনো উঁচু স্থাপনা নেই। ফলে অ্যাপ্রোচ এবং অবতরণের ক্ষেত্রে সামান্য Lateral Maneuver-এর মাধ্যমে বিমানের উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এমআরটি লাইন-৬-এর পূর্বে প্রস্তাবিত বিজয় সরণির অংশটুকু বিমান Approach Path-এ আড়াআড়িভাবে একটি ‘Wall Obstruction’ হওয়ায় Approach Path-এ এটি স্থাপন করলে কোনো Maneuver-এর জায়গা থাকে না। ফলে রানওয়ের প্রাথমিক অংশে অবতরণ করতে হলে Approach Angle (সাধারণত ২.৫ থেকে ৩ ডিগ্রি হয়ে থাকে) ৮ ডিগ্রির বেশি হবে, যা উড়োজাহাজের অবতরণের সময়ে যাবতীয় ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি করবে। তাই বিজয় সরণি দিয়ে এমআরটি লাইন-৬ নির্মিত হলে তেজগাঁও বিমানবন্দরের ফ্লাইট অপারেশন ও উড্ডয়ন নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
বিমানবন্দরের আশপাশে অবস্থিত উঁচু ভবন যেমন: ফ্যালকন টাওয়ার, নবনির্মিত ট্রাস্ট ব্যাংক ও আইডিবি ভবনসমূহ তেজগাঁও বিমানবন্দরের উড্ডয়ন ও অবতরণের অ্যাপ্রোচ ফানেলের মধ্যে অবস্থিত নয় বিধায় বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করে না।
বিমানবাহিনীর বিভিন্ন জঙ্গি বিমান এবং বেসামরিক বিমানের উড্ডয়নের সময় তেজগাঁও বিমানবন্দরটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিকল্প রানওয়ে হিসেবে জরুরি অবতরণের জন্য ব্যবহারোপযোগী। এ ছাড়া তেজগাঁও বিমানবন্দর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সহযোগী হিসেবে দেশি-বিদেশি বিমানের পরিচালন সুবিধা দিয়ে থাকে।
প্রতিরক্ষাবিষয়ক Air Strategic দৃষ্টিকোণ থেকে তেজগাঁও বিমানবন্দর আদর্শ অবস্থানে আছে। এই বিমানবন্দরের Strategic Depth সর্বাপেক্ষা অধিক, যা যুদ্ধকালীন সমরশক্তির Survivability এবং দেশের মধ্যাঞ্চলের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। তেজগাঁও বিমানবন্দরকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হিসেবেই সচল রাখতে হবে। অন্যথায় বিমানবাহিনী তার ওপর অর্পিত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের কার্যকর প্রতিরক্ষা প্রদানের সামর্থ্য অনেকাংশেই হারাবে।
___________________________________________________________________


সাক্ষাৎকার : মো. শামসুল হক

বিজয় সরণি দিয়েই মেট্রোরেল করা যৌক্তিক

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া

প্রথম আলো  ঢাকার মতো একটি শহরে মেট্রোরেলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মো. শামসুল হক: যত ধরনের গণপরিবহন রয়েছে, তার মধ্যে মেট্রোরেল হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর একটি ব্যবস্থা। কারণ, এর ধারণক্ষমতা সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি যাত্রী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করতে পারে। ঢাকার বিষয়টি যদি আমরা বিবেচনায় নিই, তবে দেখব যে বাস বা এ ধরনের গণপরিবহন চলতে পারে—এমন পর্যাপ্ত সড়ক শহরটিতে নেই। একদিকে শহরটি জনবহুল, রাস্তার সংখ্যা কম ও অন্যদিকে সব রাস্তা বাস চলাচলের উপযোগী নয়। বিশ্বের সব আধুনিক শহরে বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন-ব্যবস্থা থাকে। এর চূড়ান্ত ধাপটি হচ্ছে মেট্রোরেল। ঢাকার মতো জনবহুল একটি শহরে, যেখানে বাস চলাচলের উপযোগী প্রয়োজনীয় রাস্তা নেই, সেখানে মেট্রোরেল একটি জরুরি বিষয় ও বহু আগেই এই মেট্রোরেল চালু হওয়া উচিত ছিল।
 বর্তমানে যে রুট প্রস্তাব করা হয়েছে, তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কী কী বিবেচনা কাজ করেছে?
শামসুল হক: ঢাকার জন্য ২০ বছরমেয়াদি যে কৌশলপত্র করা হয়েছিল, সেখানে তিনটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি ও তিনটি মেট্রো র‌্যাপিড ট্রানজিট বা এমআরটি রয়েছে। এটি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা। একে বাস্তবায়ন করা গেলে একটি সমন্বিত ও বহুমাত্রিক গণপরিবহন-ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। জাপানি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকা এই তিন এমআরটি লাইনের প্রাক-সমীক্ষা করে দেখেছে যে এমআরটি-৬-এ সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে। ফলে, এই রুটে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে। এরপর চূড়ান্ত সমীক্ষা করে তারা অ্যালাইনমেন্টসহ রুট, ডিপো, স্টেশন, টার্নিং—সবকিছুই চূড়ান্ত করা হয়। সব ধরনের বিকল্প বিবেচনায় নিয়েই তারা এই রুট চূড়ান্ত করেছে।
 আপনি কি মনে করেন, যে রুটটি প্রস্তাব করা হয়েছে সেটিই সবচেয়ে কার্যকর রুট?
শামসুল হক: মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এর গতির বিষয়টি। বাঁক বেশি থাকা মানে গতি কমে যাওয়া, আর মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য ঝুঁকিও বেড়ে যাওয়া। ফলে যত কম ও সহনীয় বাঁক রাখা যায়, সেটাই বড় বিবেচনা হিসেবে কাজ করেছে। এসব বিবেচনা থেকেই বিজয় সরণি দিয়ে মেট্রোরেলের রুটের বিষয়টি ঠিক করা হয়েছে। এখন এই অংশ পরিবর্তন করার অর্থই হচ্ছে এই মেট্রো রুটের সক্ষমতার ক্ষেত্রে আপস করা, মানের ক্ষেত্রে আপস করা।
 বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে বিজয় সরণি অংশের ব্যাপারে যে আপত্তি তোলা হয়েছে, তা কতটুকু যৌক্তিক?
শামসুল হক: তেজগাঁও বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামার ঝুঁকির প্রসঙ্গ তুলে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে মেট্রোরেল রুটের এই অংশের ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়েছে। তারা বলছে যে ১৯ মিটার উচ্চতার এই মেট্রোরেলের স্থাপনার ফলে দক্ষিণ দিক থেকে বিমান ওঠানামা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। জাইকার সমীক্ষা ও আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, তেজগাঁও বিমানবন্দরের এয়ার ফানেল বরাবর ইতিমধ্যেই যেসব স্থাপনা রয়েছে, এই গণপরিবহন-ব্যবস্থা তৈরি হলে অতিরিক্ত কোনো ঝুঁকির সৃষ্টি হবে না। নভোথিয়েটারসহ এই অঞ্চলের ২৬১টি ভবন বিমান চলাচলের জন্য উচ্চতার সীমা লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও বিমানবন্দরটি সচল রয়েছে। এই স্থাপনা যদি বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি করত, তবে আপত্তিকে যৌক্তিক বলা যেত। বর্তমান স্থাপনাগুলো যদি কোনো সমস্যা না করে থাকে, তবে গণমুখী এই স্থাপনার বিরোধিতা করার কোনো কারণ দেখি না।
 এই স্থাপনা যে বাড়তি ঝুঁকির সৃষ্টি করছে না, সেটার স্বপক্ষে আপনার সুনির্দিষ্ট যুক্তিটি কি ব্যাখ্যা করবেন?
শামসুল হক: দক্ষিণ দিকের যে এয়ার ফানেলের প্রসঙ্গ তুলে মেট্রোরেলের বিরোধিতা করা হচ্ছে, সেখানে ২২ মিটার বা ৭৭ ফুট উচ্চতার নভোথিয়েটার রয়েছে। এর আড়াই শ ফুট দূরে ৬৬ ফুট উচ্চতার প্রস্তাবিত মেট্রোলাইনটি কোনোভাবেই বাড়তি ঝুঁকি বাড়াবে না। এটা নভোথিয়েটারের একটি ছায়া স্থাপনা হিসেবেই গড়ে উঠতে পারে। শুধু তা-ই নয়, নভোথিয়েটার-লাগোয়া মণিপুরীপাড়ায় রানওয়ে ফানেল বরাবর চার-পাঁচতলার এমন আরও অনেক ভবন রয়েছে, যেগুলোর উচ্চতা কোনোভাবেই দোতলার বেশি হওয়া উচিত নয়। এগুলোর কিছু মানা হচ্ছে না। আমি যা বলার চেষ্টা করছি তা হচ্ছে, বিজয় সরণি দিয়ে মেট্রোরেলের লাইনটি যেহেতু বর্তমান ঝুঁকির বাইরে বাড়তি কোনো ঝুঁকির সৃষ্টি করবে না, তাই এর বিরোধিতা করার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। ত্রাণ বা এ ধরনের কাজে ব্যবহারের উপযোগী বিমানবাহিনীর সবচেয়ে বড় বিমানটি হচ্ছে সি ১৩০। এই আকাশযানের নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিনের হিসাব অনুযায়ী, এর টেকঅফ ও ল্যান্ডিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ প্রয়োজন হচ্ছে চার হাজার ৭০০ ফুট, সেখানে তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে আছে নয় হাজার ৮০০ ফুট। ফলে, কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। একটি বার্তা সংস্থার ওয়েবসাইটে বিমানবাহিনীর ব্যাখ্যা দেখেছি। সেখানে নভোথিয়েটারকে ‘পয়েন্ট অবস্ট্রাকশন’ আর মেট্রোলাইনকে ‘ওয়াল অবস্ট্রাকশন’ হিসেবে উল্লেখ করে আলাদা করার চেষ্টা করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা আইকাও এর নিয়ম অনুযায়ী রানওয়ের অ্যাপ্রোচ ফানেলের কোনো বাধাকে এ ধরনের ‘পয়েন্ট’ বাধা ও ‘ওয়াল’ বাধা হিসেবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। এখানে যেকোনো ধরনের বাধাই বাধা হিসেবে বিবেচিত। আর নভোথিয়েটারের বাধাকে ‘ম্যানুভার’ করে উড়োজাহাজ ওঠানামার যে কথা বলা হয়েছে, এর সঙ্গে বাস্তব জ্ঞানের কোনো সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।
 আন্তর্জাতিক আইন মেনে তেজগাঁও বিমানবন্দর চালাতে হলে তবে তো অনেক ভবন ভেঙে ফেলতে হবে।
শামসুল হক: বলা হচ্ছে, মেট্রোরেলের লাইনটি রানওয়ের অ্যাপ্রোচ ফানেলের মধ্যে পড়বে। আগেই বলেছি, এটাকে বাধা মানলে অ্যাপ্রোচ ফানেলের মধ্যে থাকা নভোথিয়েটারসহ অনেক ভবন ইতিমধ্যেই বাধা হিসেবে কার্যকর রয়েছে। আর একটি বিমানবন্দরের ক্ষেত্রে শুধু বিমান ওঠানামার জন্য অ্যাপ্রোচ ফানেলই নয়, ইনার হরিজেন্টাল সারফেস বলেও একটি সীমা আন্তর্জাতিকভাবে মেনে চলতে হয়। আইকার আইন অনুযায়ী, বিমানবন্দরের চারদিকে বৃত্তাকারে চার কিলোমিটারের মধ্যে ৪৫ মিটারের বেশি কোনো স্থাপনা থাকার কথা নয়। অ্যাপ্রোচ ফানেলে মধ্যে না থাকা সত্ত্বেও এই কারণ দেখিয়ে র‌্যাংগস ভবন ভাঙা হয়েছে। বিমানবাহিনীর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের আশপাশে ফ্যালকন টাওয়ার, নতুন তৈরি হওয়া ট্রাস্ট ব্যাংক ভবন বা আইডিবি ভবন অ্যাপ্রোচ ফানেলের মধ্যে না পড়ায় বিমান ওঠানামায় কোনো সমস্যা হবে না। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, অ্যাপ্রোচ ফানেলের মধ্যে না পড়লেও এই ভবনগুলো ইনার হরিজেন্টাল সারফেসের মধ্যে পড়েছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মানলে এই ভবনগুলোও থাকার কথা নয়। আমার কথা হচ্ছে, এই ভবনগুলো থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে তেজগাঁও বিমানবন্দর চলছে। সুতরাং মেট্রোরেলের লাইনটি যেহেতু বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি করছে না, তাই এর বিরোধিতা করার সুযোগ নেই।
 আন্তর্জাতিক আইন যেহেতু মানা যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে ঢাকার মতো জনবহুল একটি শহরে এ ধরনের একটি বিমানবন্দরের যৌক্তিকতা কতটুকু?
শামসুল হক: তেজগাঁও বিমানবন্দরের অবস্থানগত দিক দেখলে আমরা দেখব, এই বিমানবন্দর, সেনানিবাস ও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর—সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই তিন স্থাপনা পুরো শহরটিকে দ্বিখণ্ডিত করে রেখেছে। শহরটির সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য এটা এক বড় বাধা। ফলে পূর্ব-পশ্চিমের সংযোগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলা যাচ্ছে না। ঢাকার মতো জনবহুল শহরে, শহরের কেন্দ্রে এ ধরনের একটি বিমানবন্দর ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। পাশাপাশি বেসামরিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হলে এই শহরের ওপর এর প্রভাব পড়বে। বুড়িগঙ্গা নদী থেকে প্রগতি সরণি, আর পল্লবী ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১২-১৩ তলার ওপরে কোনো ভবন করা যাবে না। একটি মেগা সিটির ধারণার সঙ্গে বিষয়টি সংগতিপূর্ণ হতে পারে না।
 শাহজালাল বিমানবন্দরের জরুরি বিকল্প হিসেবে তেজগাঁও বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হচ্ছে।
শামসুল হক: দেখুন, তেজগাঁও বিমানবন্দর কখনো শাহজালাল বিমানবন্দরের বিকল্প বা জরুরি অবতরণ ক্ষেত্র হতে পারে না। রানওয়ে সক্ষমতার বিষয়টি এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত ৩০ বছরে শাহজালাল বিমানবন্দরের কোনো উড়োজাহাজ জরুরি প্রয়োজনে তেজগাঁওয়ে অবতরণ করেনি। শাহজালাল বিমানবন্দরের উড়োজাহাজগুলো এখন জরুরি প্রয়োজনে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বা সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর ব্যবহার করে।
 সামরিক কৌশলগত যে দিকের কথা বলা হচ্ছে—
শামসুল হক: ঢাকার মতো জনবহুল একটি শহরের মাঝখানে এ ধরনের বিমানবন্দর সামরিক ও অন্য কোনো কৌশলগত কারণের ব্যবহারের বিষয়টি কৌশলগত কারণেই অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সামরিক কারণে শহরের মাঝখানে অবস্থিত বিমানবন্দর ব্যবহার করতে গেলে ঝুঁকি আরও বাড়ে। কৌশলগত দিক বিবেচনায় নিলে শহর থেকে দূরে ও যেখানে লোকালয় কম, সেখানেই এ ধরনের বিমানবন্দর থাকা উচিত।
 সংসদ ভবন একদিকে যেমন জাতীয়ভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, তেমনি স্থাপত্যের বিচারে অনন্য। এমন একটি স্থাপত্যের পাশ দিয়ে এটি নিয়ে যাওয়া কতটা যৌক্তিক?
শামসুল হক: এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আমি যে কথাটি বলতে চাই তা হচ্ছে, মেট্রোরেল বাস্তবায়নের বিষয়টি খুবই জরুরি। কোনোভাবে তা বিলম্বিত হোক, তা প্রত্যাশিত নয়। আমি আশা করব, যৌক্তিক বিবেচনায় সরকার বিজয় সরণি দিয়েই মেট্রোরেল বাস্তবায়নের দিকে এগোবে। সেটা না হলে বিকল্প যদি সংসদ ভবনের সামনে দিয়েই হয়, তবে আমি বলব যে সৌন্দর্য কিছুটা নষ্ট হলেও মেট্রোরেল করার কোনো বিকল্প নেই। শহরের মানুষ ও গণপরিবহনের কথা চিন্তা করলে এটা করতেই হবে।

Source: প্রথম আলো, ২২ অক্টোবর ২০১১

Steve Jobs about Bill Gates

বিল গেটসকে ‘আইডিয়া চোর’ বলতেন স্টিভ জবস

মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে ‘আইডিয়া চোর’ বলেই জানতেন অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠা স্টিভ জবস। এ ছাড়া তিনি গুগল উদ্ভাবিত অ্যান্ড্রয়েডের ওপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি মনে করতেন, প্রযুক্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ এই অ্যান্ড্রয়েড। এটাই ছিল তাঁর ক্ষোভের মূল কারণ। আমৃত্যু তিনি বিশ্বাস করতেন, নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম নকল করে। অ্যান্ড্রয়েডের ব্যাপারে তাঁর এই মনোভাব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বহাল ছিল। তিনি চেয়েছিলেন যেকোনো মূল্যে অ্যান্ড্রয়েডকে ধ্বংস করে দিতে।
২৪ অক্টোবর স্টিভ জবসের বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশিত হবে। সেই গ্রন্থের কিছু চুম্বক অংশ হাতে এসেছে বার্তা সংস্থা এপি ও হাফিংটন পোস্ট নামের একটি পত্রিকার মাধ্যমে। সেই চুম্বক অংশগুলো শুক্রবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ও বার্তা সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয়ে বিশেষত মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্পর্কে স্টিভ জবসের চিন্তাভাবনা ও মনোভাব ফুটে উঠেছে।
অ্যান্ড্রয়েড একটি ‘চুরির পণ্য’
স্টিভ জবস মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করতেন অ্যান্ড্রয়েড একটি ‘চুরির পণ্য’। গুগল এই চুরিটা করেছে আইফোন অপারেটিং সিস্টেম (আইওএস) থেকে। তিনি অ্যান্ড্রয়েডকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দরকার হলে আমি অ্যান্ড্রয়েডকে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে অ্যাপলের রিজার্ভ ৪০০ কোটি ডলারের পুরোটাই খরচ করব।’
সম্প্রতি অ্যাপলের সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে বিভিন্ন মোবাইল-প্রযুক্তি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যেমন স্যামসাং, মটোরোলা, এইচটিসির বিভিন্ন দেশে আইনি লড়াই চলছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যাপল এখনো অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে গুগলের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্টিভ জবস তাঁর আত্মজীবনী লেখক ওয়াল্টার ইসাকসনকে বলেছিলেন, তিনি যেকোনো মূল্যে অ্যান্ড্রয়েডের কবল থেকে রেহাই চান। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অ্যান্ড্রয়েডকে ধ্বংস করে ছাড়ব। কারণ এটি একটি চুরির পণ্য। এর বিরুদ্ধে ‘থার্মোনিউক্লিয়ার’ যুদ্ধেও আপত্তি নেই আমার।’ জবস ইসাকসনকে বলেন, ‘গুগল অ্যাপলের আইডিয়া মেরে এই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে। এখন কেউ যদি এর বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করার জন্য আমাকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারও ঘুষ প্রস্তাব দেয়, তা-ও আমি প্রত্যাখ্যান করব। আমি শুধু অ্যান্ড্রয়েড নামের এই প্রতারণার শেষ দেখতে চাই।’ তবে অ্যান্ড্রয়েডের বিরুদ্ধে এই মনোভাব পরিবর্তনের জন্য কেউ তাঁকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিল কি না, ইসাকসনের কাছে জবস তা পরিষ্কার করেননি।
বিল গেটস সম্পর্কে স্টিভ জবস
বিল গেটসকে একেবারেই পছন্দ করতেন না স্টিভ জবস। তিনি মনে করতেন গেটস যা কিছু করেছেন, সবই অন্যের আইডিয়া চুরি করে। বিল গেটস সম্পর্কে জবসের ধারণা ছিল, ‘এই লোকটি আসলে একজন অচিন্তাশীল ব্যক্তি।’ তিনি বলতেন, ‘তাঁর কাজই হচ্ছে, নির্লজ্জের মতো অন্যের আইডিয়া মেরে দেওয়া।’
বার্তা সংস্থা এপির বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বিল গেটসকে অপছন্দ করতেন বলেই তাঁর আমন্ত্রণে কোনো প্রকার দাতব্য কার্যক্রমে অংশ নেননি জবস। তিনি বলেছিলেন, বিল গেটস খুব ভালো করেই জানেন, তিনি অন্যের আইডিয়া মেরে দিয়েছেন। তাই তাঁর মধ্যে সব সময় একটা খচখচানি কাজ করে। আর সে কারণেই দানে তাঁর এত আগ্রহ।
অন্যদিকে বিল গেটস কিন্তু জবসকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান সব সময় দিয়ে এসেছেন। ২০০৭ সালে একটি অনুষ্ঠানে বিল গেটস স্টিভ জবসকে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের উদ্ভাবনকারী হিসেবেই অভিহিত করেছিলেন। জবস কিন্তু সেই প্রতিদান দেননি কখনোই।
বারাক ওবামা সম্পর্কে জবস
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন স্টিভ জবস । তিনি ওবামাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন অ্যাপলের কমিউনিকেশন উইং ওবামার নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী। ওবামার তত্কালীন প্রধান কৌশল প্রণয়নকারী ডেভিড অ্যাক্সেলরডের কারণেই সেই দায়িত্ব পাননি জবস। তবে মৃত্যুর আগেও তাঁর ইচ্ছা ছিল ওবামার ২০১২ সালের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বটি তিনিই পাবেন।
২০১০ সালে বারাক ওবামার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল জবসের। সেখানে ওবামার মুখের ওপরই একটি অপ্রিয় কথা বলে ফেলেছিলেন জবস। তিনি ওবামাকে বলেছিলেন, ‘আমি আপনার দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না।’
অন্যান্য বিষয়ে জবস
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের মতো করেই ভাবতেন স্টিভ জবস। ২০০৪ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মৃত্যু তাঁর চিন্তাভাবনার অনেকটাই আচ্ছন্ন করেছিল। জীবন সম্পর্কে তিনি ইসাকসনকে বলেছিলেন, ‘প্রতিটি মানুষই খুব অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে আসে। কেউ জানে না কত দিনের জন্য আসলে আমরা পৃথিবীতে থাকার অধিকার পেয়েছি। তবে এই সময়ের মধ্যে অনেকেই ভালো কিছু কাজ করে।’ নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তরুণ বয়সেই কিছু ভালো কাজ করার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম।’
জবস চেয়েছিলেন, তাঁর সন্তানেরা তাঁকে ভালোভাবে জানুক। স্বভাবে নিভৃতচারী জবস সে কারণেই আত্মজীবনীর ব্যাপারে উত্সাহী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চাই আমার সন্তানেরা ভালো করে জানুক, আমি পুরো জীবনে কী করেছি। কীভাবে এই জায়গায় এসেছি।’

Source: প্রথম আলো

18 October 2011

Shukanta Bhattacharya

হে মহাজীবন

সুকান্ত ভট্টাচার্য



হে মহামানব, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো।
প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা-
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়:
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।

Safety Regulations

Safety Regulators Don’t Add Costs.
They Decide Who Pays Them.

THERE’S a lot of talk in Washington these days about the importance of cost-benefit analysis.
The House of Representatives recently approved a bill to create an independent committee to conduct cost-benefit analyses of some highly controversial regulations proposed by the Environmental Protection Agency, ignoring the fact that the agency already does its own analyses. So, for that matter, do all executive agencies, under a directive issued by President Obama last January reaffirming the administration’s commitment to that approach.
I support the president’s initiative, but not all voices raised on this issue have been as thoughtful as his. To the contrary, we at the Consumer Product Safety Commission and our sister health and safety agencies have faced a barrage of calls from some politicians and business interests to cut back “oppressive” and “job killing” regulations in order to “jump-start” the nation’s stalled economy. And the way to do this, we are told, is to subject everything we do to elaborate cost-benefit analysis.
What many of our critics really want to do is to stop government from regulating, period. They are invoking cost-benefit analysis as their weapon of choice — and to impose “paralysis by analysis.”
Unfortunately, they ignore a vital point: health and safety agencies rarely impose new costs on society when we issue safety regulations. We simply re-allocate who pays the costs.
Think about it: when we write a safety rule, we do so to eliminate or reduce deaths and injuries that consumers suffer daily in product-related accidents. The commission estimates that roughly 31,000 people die and 34 million people suffer product-related injuries every year. These deaths and injuries impose significant costs on consumers — roughly $200 billion annually. They do so first as household tragedies and then as higher premiums for health insurance (or higher taxes to pay for the uninsured). Moreover, product-related tragedies almost always result in lost economic productivity.
Anyone who insists that regulations necessarily impose new costs on society shouldn’t be taken seriously. The costs are already there, in the form of deaths and injuries — and are often as much of a drag on our economy as any safety rule. So the real issue is who should bear the costs.
For example, we recently required manufacturers to make sturdier cribs to eliminate the predictable deaths from suffocation caused when infants slip between flimsy slats and crib mattresses. In doing so, we may well have increased the costs of making cribs for companies that had not previously taken adequate safety measures. And, yes, our safety rule might increase the price of some cribs to consumers. But these are not new societal costs; they are simply costs that those manufacturers had previously offloaded on innocent, vulnerable children. Our rule makes manufacturers price their products in a fairer, more accurate way.
More than 40 years ago, Guido Calabresi, a giant in the field of law and economics, argued that a truly rational approach to injury reduction would move selected accident costs into manufacturers’ production budgets rather than impose them on the public at large. This makes particular sense where even careful consumers cannot easily avoid the accidents. One of his suggested solutions was to use the tort system to impose those costs, but regulation certainly is another method.
I don’t claim that Judge Calabresi, a former dean of Yale Law School who is now a senior judge on the United States Court of Appeals for the Second Circuit, would endorse every safety rule that we have written, or believe that making manufacturers internalize every accident cost that they impose on society always optimizes injury reduction. But his advice is as wise today as it was decades ago. And applying his wisdom, one sees pure fantasy in the idea that eliminating vital safety regulations would miraculously eradicate societal costs.
Not all regulation is bad, nor is it always more costly. And one of the ways to ensure that our safety rules are cost-effective is to use thoughtful cost-benefit analysis. So, I don’t quarrel with the president’s cost-benefit executive order, especially because it explicitly permits agencies to consider values that are difficult or impossible to quantify, including “equity, human dignity, fairness, and distributive impacts” in their cost-benefit calculations.
My objection is that many of those who insist on cost-benefit analysis have no interest whatsoever in making regulation more focused and rational. In their world, costs to business are the only measure; benefits to consumers somehow never make it to the table. Unfortunately, that’s misleading and unfair. Someone always pays.
Robert S. Adler is a lawyer and a commissioner of the Consumer Product Safety Commission.

Source: The New York Times



Hopeless: National University

জামিলা শফী সিদ্দীকি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : নতুন সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরনে উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে আশংকা


আজ অনার্স ১ম পরীক্ষা হয়ে গেল বিভিন্ন বিষয়ে। পরীক্ষার হলে ইনভিজিলেটরের দায়িত্ব পালনকালে মনের অজান্তেই প্রশ্নপত্রটা হাতে নিয়ে একটু চোখ বুলাচ্ছিলাম। দেখে হাতশ না হয়ে পারলাম না। সিলেবাস সম্পর্কে আগে থেকেই ধারনা ছিল। কিন্তু ব্যাপারটা যে এতোটাই খারাপ হতে পারে ভাবতেই পারিনি।
২০০৯-১০ সেশন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ধরন বদলে গেছে। কি সায়েন্স কি আর্টস বা কমার্স- সকল বিষয়ের সকল কোর্সের প্রশ্নে ’ক’ , ’খ’ এবং ’গ’ তিনটি বিভাগ থাকবে। ক-বিভাগে ২৪টি প্রশ্ন থাকবে। ২০টির সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে হবে। প্রতি প্রশ্নের মান ১। ২০টির প্রশ্নের মোট নম্বর ২০।
প্রশ্নের মান ১ হিসেবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর হবে সংক্ষিপ্ত। খুব সম্ভবত ছোট ছোট কিছু বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জাস্ট ধারনা আছে কিনা তা বিচার করার জন্যই প্রতিটি কোর্সে এ ধরনের ২০টি প্রশ্নের বিধান রাখা হয়েছে নতুন সিলেবাসে। ধারনাটি খারাপ কিছু নয় আমার মতে। কিন্তু বিপত্তি ঘটিয়েছে প্রশ্ন কর্তাগণ।
উদাহরণ হিসেবে একটি বিষয়ের একটি কোর্সের ক-বিভাগের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছি-যা আজ ১৭ অক্টোবর পরীক্ষা হয়ে গেল। বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। কোর্সের শিরোনাম-”রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি”। নমুনা হিসেবে গুটি কয়েক প্রশ্ন উল্লেখ করছি। প্রশ্ন নং ১। (গ)ঃ রাষ্ট্রের উপাদান কি কি ? প্রশ্ন নং ১। (ঠ) রাষ্ট্রের মূল উপাদান কয়টি। আবার প্রশ্ন নং ১। (ট) কোন উপাদানটি ছাড়া রাষ্ট্র হয় না ?
[ ১। (গ) নং প্রশ্নের উত্তর ঃ রাষ্ট্রের উপাদানগুলো হলো- ১. জনগণ ২. ভূমি ৩. সরকার এবং ৪. সার্বভৌমত্ব]। এই উত্তরটি লেখার পর একজন পরীক্ষার্থীকে কি আবারো প্রশ্ন করার দরকার আছে যে, রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ? এই দুটো প্রশ্ন মূলতঃ একই। আবার ১। (ট) নং প্রশ্নটিও একই টপিক থেকে করা হয়েছে। প্রশ্নকর্তার যদি ন্যূনতম বিচারশক্তি থাকত তবে একই টপিক থেকে এ ধরনের প্রশ্ন করতেন না। আর আরো আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না যে, মডারেশন বোর্ড কী করলেন !
একই প্রশ্নপত্রে ১।(প) নং প্রশ্ন করা হয়েছে- বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের নাম লিখ। এ ধরনের প্রশ্নের ব্যাপারে বলার তেন কিছু নেই তবে এটুকুই বলতে পারি যে, অনার্স লেভেলে এ প্রশ্নটি হাস্যকর বটে। বাংলাদেশে অনার্স কলেজগুলোতে রাজনীতির চাষ হয়। এ প্রশ্নটি কেজি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মগজের উপযোগী হতেও পারে।
শুধু এই একটা বা দুটো প্রশ্নই যথেষ্ট নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্নকর্তারা সকল বিষয়ের সকল কোর্সের এই একই মানের প্রশ্ন করছেন। ব্যতিক্রম দু’একটি হয় থেকে থাকতে পারে।
যাঁরা প্রশ্নগুলো সেট করেছেন এবং যাঁরা মডারেশনের ছিলেন তাঁদের কারণে উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে ইতোমধ্যেই মারাতœক আশংকার সৃষ্টি হয়েছে। এবং অনেক সহকর্মী শিক্ষকগণের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে দেখেছি। তাঁরাও আশঙ্কিত। প্রত্যেকের মুখে একই প্রশ্ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কি চায়, শিক্ষিত জাতি- নাকি সার্টিফিকেট সর্বস্ব জনজঞ্জাল ?
আর সিলেবাস সম্পর্কে বলব- ৪ঘন্টার পরীক্ষায় মাত্র ১টি শব্দ লিখে উত্তর দেয়া যায় এ ধরনের ২০টি প্রশ্ন করা উচিত নয়। কেননা- পরীক্ষার্থীরা দীর্ঘ ৪ ঘন্টার মধ্যে অবশ্যই কোন না কোন সময় কারো না কারো কাছ থেকে এক শব্দের ওই উত্তরটি জেনে নিতে সক্ষম হবে। ইনভিজিলেটরের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন তাঁরা তো পরীক্ষার্থীদের চোখ-মুখের সাথে ৪ঘন্টা ব্যাপী চোখ লাগিয়ে থাকতে পারবেন না। ৪ঘন্টা পরীক্ষার হলে ইনভিজিলেটরের দায়িত্ব পালন করা খুব একটা দূরহ কাজ। বিশেষ করে যে সকল শিক্ষক বয়স্ক ও বেশ সিনিয়ন তাঁদের পক্ষে অত দীর্ঘকাল দাঁড়িয়ে থাকা বা পাইচারি করা মোটেও সম্ভব নয়। আর পরীক্ষার্থীরাও এ রকম এক শব্দের উত্তর পাশের বন্ধুর কাছ থেকে জেনে নেয়ার জন্য ওঁত পেতে থাকে। কখন ইনভিজিলেটর একটু অন্য দিকে তাকাবেন সেই মুহূর্তেই সে শুনে নেবে। মাত্র ১ সেকেন্ডের ব্যাপার ১ নম্বর পেয়ে গেলো। খুব আস্তে শব্দ করে এভাবে কোন প্রশ্নে উত্তর জেনে লিখলে কী করবেন ? এভাবে দীর্ঘ চার ঘন্টায় কোন না কোন সুযোগ আসবে জেনে নেয়ার। এবং একজন পরীক্ষার্থী এ ধরনের আনকমন ২০টি প্রশ্নে পুরো ২০ নম্বরই উঠিয়ে নিতে পারে অন্যায় ভাবে।
পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার সংকেত দিয়ে যখন উত্তরপত্র নিচ্ছিলাম তখন লক্ষ্য করলাম অনেক পরীক্ষার্থীই ওই প্রশ্নগুলোর নম্বর খাতায় উঠিয়ে এমনভাবে রেখেছিল যে, যেই সুযোগ পাবে সেইমাত্র সেটা লিখবে। কিন্তু আমার কক্ষে অন্ততঃ আজ আর সেই সুযোগ পায় নাই। তবে দীর্ঘ ৪ঘন্টা এভাবে সতর্ক থাকা সম্ভব নয়। আর একজন পরীক্ষার্থীর পক্ষেও একটু না একটু কথা না বলে থাকা খুবই কষ্টকর বটে। মনটা ফ্রেস থাকার জন্য হলেও ওদের একটু আধটু কথা বলার সুযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করি। কেননা পরীক্ষার জন্য ওদের মনে এমনিতেই প্রচন্ড চাপ থাকে। মানসিকভাবে চাপমুক্ত রাখতে পারে দু’একটি কথা বলে। সেজন্য প্রশ্নটা এমনভাবে সেট করা উচিত যেখানে ওরা দু’একটি কথা বললেও কোন প্রশ্নের উত্তর লিখতে সে যেন বিশেষ লাভবান না হয়। তবে হ্যাঁ এ ধরনের ছোট ছোট নৈব্যক্তিক ধরনের উত্তরের ক্ষেত্রে ২০টি প্রশ্নে ৪০মিনিট সময় দিয়ে আলাদা উত্তরপত্রে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। তাতে এই সময়টুকু ইনভিজিলেটর সতর্ক থাকলে ওরা পরস্পর কথা বলার সুযোগ পাবে না এবং ৪০ মিনিট পর রচনামূলক প্রশ্নগুলোর উত্তর আরাম আয়েশে লিখতে পারবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশনের সাথে জড়িত কোন পাঠকের নজরে আমার লেখাটি আসলে সার্থক হতো আমার শ্রম।

Source:

http://www.somewhereinblog.net/blog/siqbogra/29468155

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...