17 February 2012

জসীমউদদীন কথা

জসীমউদদীন কথা
আহমদ ছফা


উনিশশো পঁয়ষট্টি সালের কথা। আমি একটা কাগজে চাকরি পেয়েছিলাম। এটা ছিল যুদ্ধকালীন চাকরি। ভারতবর্ষকে খুব কড়া কড়া ভাষায় গাল দিয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম। সম্পাদক সাহেব লেখাটি পড়ে ভীষণ খুশি। আমাকে বললেন, আপনি এ ধরনের লেখা লিখতে থাকেন এবং তাঁর সহকারীদের ডেকে বললেন, এই তরুণের লেখা দেখে দেয়ার প্রয়োজন নেই। সরাসরি প্রেসে দিলেই চলবে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রথমদিকে একটা প্রবল জোশ অনুভব করছিলাম; কিন্তু কিছু দিন না যেতেই যুদ্ধের মজা টের পেয়ে গেলাম। রাস্তার যত পাগল আছে সব ভারতের গুপ্তচর মনে করে গ্রেফতার হলো। এক ভদ্রমহিলা টর্চ জ্বালিয়ে বাড়ির ছাদে তাঁর ছেলের খোঁজ করছিলেন, গোটা পরিবারসুদ্ধ তাকে ধরে নিয়ে গেল। বলা হলো, তিনি ভারতীয় বিমানকে টর্চ জ্বালিয়ে দিয়ে আক্রমণ করার সঙ্কেত দিচ্ছিলেন।
পত্র-পত্রিকায় রামায়ণ-মহাভারত থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সবাইকে ধোলাই করা চলছিল। প্রগতিশীল বলে কথিত আমাদের একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক টেলিভিশন ও রেডিওতে এই একতরফা নির্জলা নিন্দা পাঠ করে শোনাতেন।
আমি যুদ্ধের মজা টের পেয়ে গেলাম। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ালো শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। আমি একটা অপকর্ম করে বসলাম। একটা রচনায় লিখে বসলাম, ‘শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করা ভালো; কিন্তু তাঁর উজ্জ্বল সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে ক্রমাগত নিন্দা প্রচার এগুলো খারাপ কাজ।’ আমার লেখা কেউ পড়ে দেখত না, তাই লেখাটি যথারীতি ছাপানো হয়ে গিয়েছিল। পত্রিকাটি সরকারি। চিন্তা করে দেখুন আমার অবস্থা! আমার থাকার কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। তাই আমাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। দুপুরবেলা যখন অফিসে এলাম, দেখি এক গুরুতর কাণ্ড। বুড়ো সম্পাদকের চাকরি যায় যায় অবস্থা। কম্পোজিটররা থর থর করে কাঁপছে। কথা বাড়াব না। আমি প্রাণে বেঁচে যেতে পেরেছিলাম।
এই রকম অসহায়, বন্ধুহীন আমার কখনও মনে হয়নি। সারাদিন ঢাকা শহরে হেঁটেও একজন লোকের সাক্ষাত্ পাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি, যার কাছে মনের বেদনা প্রকাশ করতে পারি।
সেই সময়ে একজন আশ্চর্য প্রবীণ ভদ্রলোকের সঙ্গে সাক্ষাত্ ঘটেছিল। তিনি হলেন কবি মহিউদ্দীন সাহেব। মহিউদ্দীন সাহেব ফাউস্ট এবং নীটশের Thus Spoke Zorathusthra বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। এই ভদ্রলোক যুদ্ধের বিরুদ্ধে একখানি পুস্তিকা ইংরেজিতে লিখে ছেপে সবার কাছে বিলি করেছিলেন। তাঁর সাহস এবং মানবিকতা দেখে আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।
আমার কোনো থাকার জায়গা ছিল না। আর আমার উল্টোপাল্টা কাজ করার জন্য এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। বন্ধু-বান্ধবেরাও আমাকে আশ্রয় দিতে রাজি ছিলেন না। উপায়ান্তর না দেখে আমি নারিন্দার গৌড়ীয় মঠের বিপরীত দিকে ৪৯ নম্বর বাড়িতে আমার বন্ধু রফিক সন্যামতের শরণাপন্ন হলাম। এখন অবশ্য তিনি সন্যামত লেখেন না। তার বদলে সেরনিয়াবাত শব্দটি নামের শেষে লিখে থাকেন। তিনি শেখ সাহেবের ভগ্নিপতি মরহুম আবদুর রব সেরনিয়াবাতের চাচাতো ভাই। রফিকদের বাড়ির চিলেকোঠাটি ছিল তখন লেখক, কবি, গায়ক এবং রাজনৈতিক কর্মীদের স্থায়ী আড্ডাস্থল। যখন কারও কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকত না, এসে নারিন্দার ৪৯ নম্বর বাড়ির চিলেকোঠায় আশ্রয় নিত।
এই বাড়িতে কবি জসীমউদ্দীন সাহেব আসা-যাওয়া করতেন, সে কথা আমি শুনেছি। কবি সাহেবের কবিতা পড়েছি বটে; তাকে কোনো দিন চোখে দেখিনি। নারিন্দা এলাকার ছেলেদের নিয়ে কবি সাহেব একটি সাহিত্যের আসর বসাতেন। রফিকের বোন এবং বোনাই দু’জনই কবি সাহেবের ভীষণ গুণমুগ্ধ।
চিলেকোঠায় বসে বসে দিন কাটছিল না। আর পথে বের হওয়ারও সাহস পাচ্ছিলাম না। মনের মধ্যে একটা প্রচণ্ড অস্থিরতা। মনে হতো আমি কুয়োর মধ্যে ডুবে গেছি, অথবা শূন্য থেকে ঝুলছি। দাঁড়ানোর মতো মাটি পাচ্ছি না। বার্ট্রান্ড রাসেলের Sceptical Essays বইটা আমার সঙ্গে ছিল। আগে একটা-দুটা রচনার অনুবাদ করেছিলাম। এই চিলেকোঠায় থাকা অবস্থায় সময় কাটানোর জন্য আমি অন্য প্রবন্ধগুলো অনুবাদে হাত দিই। তখনকার সময়ে আমার যে বিদ্যা-বুদ্ধি, তা দিয়ে এরকম একটা অনুবাদ কাজ করা খুব সহজ ছিল না। প্রতি পঙিক্ত অনুবাদ করতে গিয়ে বার বার করে অভিধান খুলতে হতো। অনুবাদের কর্মটি যথেষ্ট কঠিন এবং শ্রমসাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। একদিন দুপুরবেলা আমি নিবিষ্ট মনে অনুবাদ করছি। এ সময়ে ভরাট গলায় বেশ কর্কশ স্বরে ‘ও রফিক, ও রফিক’ ডাকতে ডাকতে এক ভদ্রলোক চিলেকোঠায় উঠে এলেন। তাঁর পরনে আধ-ময়লা গেরুয়া খদ্দরের পাঞ্জাবি এবং ততোধিক ময়লা একটি পায়জামা, পায়ে সেন্ডেল। তখন শীতকাল। গায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি ভদ্রলোকের নৌকোর মতো বিরাট পা। শীতের প্রকোপে এখানে-সেখানে ফেটে গেছে। বেশ মোটাসোটা স্বাস্থ্যবান চেহারা। আমি বললাম, ‘এখানে রফিক নেই।’ ভদ্রলোক বললেন, ‘তুমি কে?’ তখন চ্যাংড়া বয়স, টনটনে আত্মসম্মান জ্ঞান। খেতে না পাই ক্ষতি নেই, মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, তাতে কি এসে যায়? হঠাত্ করে একজন বাইরের লোক এসে ‘তুমি’ সম্বোধন করবে, এটা কি বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়ার বিষয়? আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, ‘আপনি কে?’ ভদ্রলোক একটুখানি চুপ করে থেমে থেমে কাটা কাটা স্বরে জবাব দিয়েছিলেন, ‘আমি হলাম কবি জসীম উদ্দীন।’ অনুবাদকর্মটি রেখে ভদ্রলোকের চেহারাটি জরিপ করে দেখলাম। সেই মুহূর্তে যা অনুভূতি হয়েছিল, পারলে আমি ডুকরে কেঁদে উঠতাম। পল্লী কবি জসীম উদ্দীন, যার কত কবিতা আমি ছোটবেলা থেকে আবেগ-অনুরাগ দিয়ে মুখস্থ করেছি, তাঁর এমন চোয়াড়ের মতো চেহারা! এটা কেমন করে হয়! আমি কল্পনা করেছিলাম কত সুন্দর কমনীয় চেহারার অধিকারী হবেন কবি জসীম উদ্দীন। তাঁর চেহারায় থাকবে সুন্দর আভা, চোখে থাকবে দীপ্তি। অথচ এ কাঠখোট্টা ভদ্রলোক দাবি করছেন তিনি স্বয়ং কবি জসীম উদ্দীন। আমি প্রচণ্ড খেপে গিয়েছিলাম। এই রাগ-উত্তেজনা দমন করার জন্য কিছু একটা করা প্রয়োজন। ভাবলাম, কালির বোতলটা ভদ্রলোকের গায়ের ওপর ঢেলে দেব, সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ এত মোটাতাজা মানুষ, চড় দিয়ে বসলে আমার সারা শরীরে হজম করার শক্তিতে কুলাবে না। আমার রাগ এবং ক্ষোভ সপ্রমাণ করার জন্য বোতলের সব কালি নিচে ঢেলে দিয়েছিলাম। এভাবে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। কবির মুখোমুখি এভাবে ফুঁসে ওঠার ক্ষমতা আছে এটা দেখে নারিন্দাপাড়ার অনেক ছেলে আমার ভক্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি খুব গম্ভীর স্বরে উচ্চারণ করেছিলেন, এখনও আমার মনে আছে, 'Beware of his angry eyes, he will burn not only himself, but many people also'.
কবির সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয়ের কথা তো বললাম। এরপর কিছু ঘটনার কথা বলি। সে সময়ে আমরা তরুণ লেখকেরা সবাই মিলে বাংলাবাজারে ভিড় করতাম। কবি সাহেবও একদিন অন্তর বাংলাবাজার যেতেন। দোকানদারদের বই সরবরাহ করতেন এবং আগের চালানের বইয়ের দাম বুঝে নিতেন। একটি মুটে কবি সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে থাকত। তার মাথায় বইভর্তি ঝাঁকা। কবি সাহেব খুব কৃপণ ছিলেন, হাতের ফাঁক দিয়ে পানি গলত না। অনেক সময় নবাবপুর থেকে বাংলাবাজার সবটা পথ পায়ে হেঁটে যেতেন।
একদিন রথখোলার মোড়ে কবির সঙ্গে আমার দেখা। তিনি লম্বা লম্বা কদমে হেঁটে যাচ্ছেন। আমি সালাম দিলে তিনি থামলেন। হাতে একটি ভাপা পিঠে, মাঝে মাঝে কামড় বসাচ্ছেন। আমাকে বললেন, ‘তুমি কি বাংলাবাজার যাচ্ছো?’ আমি বললাম, ‘জ্বি’। তিনি দীর্ঘ গাছের কাণ্ডের মতো মোটা পা বাড়িয়ে কদম দিচ্ছিলেন এবং মাঝে মাঝে হাতের পিঠাতে কামড় বসাচ্ছিলেন। কোনো ভাবান্তর নেই। ধীরে ধীরে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছেন। আমি দৌড়ে কূল পাচ্ছি না। তাঁর পেছনে পেছনে বাহাদুর শাহ পার্ক অবধি আসতে আমি ঘেমে ভিজে গেলাম। কবির একটি নতুন পরিচয় পেলাম, এই হলেন কবি জসীম উদ্দীন, আমি নতুনভাবে তাঁকে দেখতে আরম্ভ করলাম।
আরেকটি ঘটনার কথা বলি। কবির সঙ্গে এক ভদ্রলোকের বাড়িতে গিয়েছি বাড্ডার দিকে। ভদ্রলোক বলা ঠিক হবে কিনা ধান্ধায় পড়েছি। যার বাড়িতে গিয়েছি তিনি বয়াতি ধরনের লোক, মাথায় বাবরি। কবিকে পা ধরে সালাম করলেন এবং বিরাট একটা মগে করে জ্বাল দেয়া খেজুরের রস এনে দিলেন। কবি মুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে প্রায় এক কেজি খেজুরের রস নির্বিবাদে উদরে চালান করে দিলেন। কবি সাহেব বললেন, ‘তুমিও খাও।’ আমি অনেক চেষ্টা করেও দুই আউন্সের বেশি ওই বস্তু গলা দিয়ে নামাতে পারিনি। তাঁর সম্পর্কে আরও একটা নতুন ধারণা জন্মালো। ইনি হচ্ছেন কবি জসীম উদ্দীন, যাকে নিয়ে আমরা হাসিঠাট্টা করে থাকি অথবা তিনি হাঁটলে আমরা দৌড়ে কূল পাইনে। তাঁর খাওয়ার পরিমাণও তেমনি আমার বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
তারপরের ব্যাপারটিতে আসি। এক সময় আইয়ুব খান সাহেবের তথ্য এবং বেতার মন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন রেডিও-টিভিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। প্রতিবাদস্বরূপ বাংলাদেশের নামকরা লেখকদের রচনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি বড় বই বের করবো স্থির করেছিলাম। আমাদের শিক্ষক প্রফেসর ডক্টর আনিসুজ্জামান বইটি সম্পাদনা করবেন স্থির হয়েছিল এবং নামকরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্ট ওয়েজের বইটি ছাপার কথা। আনিস স্যার আমাকে বললেন, ‘তুমি কমলাপুর গিয়ে কবি জসীম উদ্দীন সাহেবের কাছ থেকে একটি লেখা নিয়ে এস।’ সে সময়ে আমরা ভালো কাজে কষ্ট করতে ভয় পেতাম না। সে সময়টি অন্যরকম ছিল। আমরা খদ্দেরের পায়জামা, পাঞ্জাবি, চাদর পরতে পেলে গর্ববোধ করতাম। অধিকাংশ সময় স্পঞ্জের চপ্পল পরে ঘুরে বেড়াতাম। নীলক্ষেত থেকে দু’আনা-তিনআনা খরচ করলে বাসে চড়ে কমলাপুর পর্যন্ত যাওয়া যেত। কিন্তু সে তিনআনা পয়সা আমাদের জুটতো না। তাই সবটা পথ হেঁটে কমলাপুরে কবি সাহেবের বাসায় হাজির হয়েছিলাম। কবি সাহেবের বাড়িটার নাম পলাশবাড়ি। লোকে রসিকতা করে বলত, কবি সাহেব নিজে নিজের বাড়ির রাস্তাটির নাম কবি জসীম উদ্দীন রোড রেখেছিলেন। সারা রাস্তায় একটা সেলুন ছাড়া কোনো দোকানপাট ছিল না। সেলুনটির নাম ভুলে গেছি। সাইনবোর্ডের নিচের দিকে লেখা ছিল কবি জসীমউদ্দীন রোড।
আমি যখন কবির বাড়িতে হাজির হলাম, তখন দুপুরবেলা। আকাশে প্রচণ্ড রোদ। কবি সাহেব তাঁর এক নাতিকে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার দুটো পা ধুলোতে ভরে গেছে। কবি সাহেব আ-হা-হা করে উঠলেন, ‘তুমি অনেক কষ্ট করে এসেছো, একটু জলপান খাও।’ আমার ক্ষুধা ছিল, তৃষ্ণাও ছিল। জলপান খাওয়ার কথায় দুটোই জেগে উঠলো। কবি সাহেব নিজে বাড়ির ভেতর গিয়ে মাত্র দুটো নাইস বিস্কুট এবং এক গ্লাস পানি দিয়ে বললেন, ‘খেয়ে একটু ঠাণ্ডা হও।’ ঠাণ্ডা হব কি? আমার মাথায় রক্ত বয়ে গেল। আমার ধারণা ছিল, কবি সাহেব চিঁড়া দেবেন, দই দেবেন, তাতে নারিকেল থাকবে এবং অন্তত দুটো পাকা কলা নির্ঘাত পাওয়া যাবে। জলপানের আকার-প্রকার দেখে আমার ইচ্ছা হলো গ্লাসটা ছুঁড়ে ফেলে দিই। কিন্তু পারলাম না। যে ফুটফুটে বাচ্চাটি বিস্কুট দুটো ছোট হাত দিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরেছে তাকে কষ্ট দিতে পারলাম না। সুতরাং কবির আনা জলপান ভক্ষণ করলাম। শরীরের রাগটি তখনও নামেনি। কিছু একটা করা প্রয়োজন। কবি সাহেবকে তো আর তাঁর বাড়িতে গিয়ে গালমন্দ করা যায় না? আমি তাঁর দিকে না তাকিয়ে বাগানে ঢুকে বললাম, ‘কবি সাহেব, জলপান তো করলাম এখন আপনার বাগান থেকে কিছু ফুল নেই?’ তিনি ফুল নেয়ার কথা শুনে আমার দিকে বড় বড় চোখ পাকিয়ে বললেন, ‘আমরা ফুলকে পূজা করি ছিঁড়িনে।’ আমি বললাম, ‘কবি সাহেব, ফুলের ব্যাপারে আমার একটা আলাদা থিওরি আছে। আমরা গাছ লাগাই, জল দেই, সার দেই, ফুলের বাবার সাধ্য নেই যে না ফুটে।’ এ কথা বলে আমি একটা করে বাগানের সব কটা ফুল ছিঁড়ে চাদরে ভরে নিয়েছিলাম। কবি সাহেব অবাক-বিহ্বল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কোনো কথা বললেন না। আমি যখন ফুল নিয়ে চলে আসছি, তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখি সারা চোখ পানিতে ভরে গেছে। আরও একটা নতুন পরিচয় পেলাম। ইনি হলেন কবি জসীম উদ্দীন। ফুলের শোকে যিনি শিশুর মতো কাঁদতে পারেন। তাঁর কাব্য লোকে ভালোবাসবে না কেন?

No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...