22 August 2012

৭১ এ এই দিনেঃ অপারেশন জ্যাকপট

৭১ এ এই দিনেঃ অপারেশন জ্যাকপট

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার বেশ আগে থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত ভাবে মুক্তিকামী বাঙালিদের দমনের জন্য জাহাজ পথে পাকিস্তান থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্যদ্রব্য আনতে শুরু করে। তাই যুদ্ধ চলাকালে নৌ-প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা সামনে চলে আসে। কিন্তু নৌবাহিনীর লোক না থাকায় তা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। এই অভাবটি পুরন করতে এগিয়ে আসেন আট বাঙালি সাবমেরিনার বা ফ্রগম্যান। তারা হলেনঃ মোঃ রহমতউল্লাহ, মোঃ সৈয়দ মোশাররফ হোসেন, মোঃ শেখ আমানউল্লাহ, মোঃ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, মোঃ আহসানউল্লাহ, মোঃ আবদুর রকিব মিয়া, মো আবদুর রহমান আবেদ ও মোঃ বদিউল আলম। শুরু হয় দেশের সর্ব প্রথম ও সর্ব বৃহৎ নৌ-অপারেশনের পরিকল্পনা যা ইতিহাসে অপারেশন জ্যাকপট নামে স্থান করে নিয়েছে।

দেশমাতৃকার স্বাধীনতার টানে ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ অদম্য সাহসী এই আটজন পাকিস্তান নৌবাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মার্চের শুরুর দিকে পাকিস্তানি সাবমেরিন পি এন এস ম্যাংরো ফ্রান্সের তুলন সাবমেরিন ডকইয়ার্ডে যায় পাকিস্তানি সাবমেরিনারদের প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য। সেই ৪১ জন সাবমেরিনারদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন বাঙালি অফিসার। তারা আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে ২৫ মার্চের গণহত্যার কথা শুনে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে এই ৮ জন সাহসী সৈনিক স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। পাকিস্তানী কূটনীতিকরা তাদের ফিরানোর অনেক অপচেষ্টা করে কিন্তু এই সাহসী সৈনিকরা সব বাধা উপেক্ষা করে ভারতে চলে আসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে।

নৌ কমান্ডোদের সকল প্রশিক্ষন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভাগীরথী নদী ও এর ঐতিহাসিক তীর পলাশীর প্রান্তরে নৌকমান্ডো ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য সেক্টরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এই ট্রেনিং সরাসরি জেনারেল এম এ জি ওসমানীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হত। ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডো ট্রেনাররা এখানে ট্রেনিং দিতেন। পাশাপাশি ভারতীয় হাইকমিশনে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া সাবমেরিনাররা নয়াদিল্লী হতে ট্রেনিং নিয়ে তারাও ট্রেনার হিসাবে যোগ দেন। এই ট্রেনিং ক্যাম্পের সাংকেতিক নাম দেয়া হয় সি-২ পি (C-2 P)।এখানে ট্রেনিং দেয়ার উদ্দেশ্যে অন্যান্য সেক্টরসমূহের বিভিন্ন শিবির থেকে মে মাসের শুরুর দিকে প্রায় ৩০০ জন বাছাইকৃত যোদ্ধা সংগ্রহ করা হয়। ট্রেনিং ক্যাম্পে এদের কি ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে সে বিষয়টি এতই গোপনীয় ছিল যে, সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যেও শুধুমাত্র যার এলাকায় অপারেশন চালানো হবে তিনি ব্যাতিত আর কেউ এই সম্পর্কে জানতেন না।

যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের শেষদিকে এসে আক্রমণের পরিকল্পনা সাজানো হতে থাকে। একই সাথে একই সময়ে দুই সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম ও মংলা এবং দুই নদী বন্দর নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরে আক্রমণ চালানোর জন্য চার সেক্টরের পরিকল্পনার সমন্বয় ঘটানো হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রথম ব্যাচকে চার স্থানে আক্রমণের উদ্দেশ্যে মোট চারটি দলে ভাগ করা হয়েছিল। ৬০ জনের ২টি দল এবং ২০ জনের আরো ২টি দল। চারটি দলের চারজন লিডার ঠিক করে দেয়া হয়েছিল। টিম লিডারদের অপারেশন পরিচালনার জন্য শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল বিশেষ গোপনীয় পদ্ধতি যা টিমের অন্যান্য সদস্যদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। টিম কমান্ডারদের বলা হয়েছিল যে, দুটি বাংলা গানকে সতর্ক সঙ্কেত হিসেবে ব্যবহার করা হবে। গান দুটি প্রচার করা হবে কলকাতা আকাশবানীর পক্ষ থেকে পূর্বাঞ্চলীয় শ্রোতাদের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানে সকাল ৬টা থেকে ৬:৩০ মিনিট অথবা রাত ১০:৩০ মিনিট থেকে রাত ১১টায়। এই ফ্রিকোয়েন্সির নাম ও গান দুটি শুধু টিমের কমান্ডারই জানতো। গান দুটি অথবা তাদের সঙ্কেত হলোঃ- ১ আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শশুর বাড়ি, আল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া শিশু সংগীত। এটি হবে প্রথম সঙ্কেত, এর অর্থ হবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২য় গান প্রচার হবে। এর মধ্যে আক্রমণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। ২ আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান, বদলে চাইনি প্রতিদান পংকজ মল্লিকের গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত। এটি ২য় এবং চূড়ান্ত সঙ্কেত, অর্থাৎ সুস্পষ্ট নির্দেশ, ঐ রাতে যে ভাবেই হোক আক্রমণ করতে হবে।

কমান্ডোরা তিন মাস ধরে জলে স্থলে বিরামহীন কঠোর পরিশ্রম করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ছিলেন। তিন মাস ব্যাপি কঠোর শ্বাসরুদ্ধকর প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করে বহু প্রতীক্ষিত চূড়ান্ত অপারেশনের প্রস্তুতি নেন কমান্ডোরা। সারা দেশ ব্যাপি বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধ চলছিল তাই তারা সবাই অপারেশনের জন্য উদগ্রীব হয়েছিলেন। অবশেষে ১০ই আগস্ট, ১৯৭১ এ গোধূলি লগ্নের ঠিক পরপরই কমান্ডো গ্রুপগুলি নগ্নপদে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরেঃ




চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল কারন এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর। সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বন্দরে আসেন ৬০জন নৌ কমান্ডো। তার অধীনে ২০জন করে তিনটি গ্রুপ তৈরি করে ৩জন গ্রুপ লিডার নিযুক্ত করা হয়। গ্রুপ লিডাররা ছিলেন ডাঃ মোহাম্মদ শাহ আলম, মোহাম্মদ মজাহার উল্লাহ ও আব্দুর রশিদ।

১ ও ২ নং দল তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট বেইজ ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং ১৪ আগস্ট তারা প্রথম গানের সংকেত পায়। এই সংকেত পাবার পর তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কর্ণফুলী নদীর পূর্বতীরে চরলক্ষ্যায় তাদের বেইজ ক্যাম্পে পৌছায়। ৩য় দলটির তখনো কোন খবর পাওয়া যায় নি। এরপর ১৫ আগস্ট তারা ট্রানজিস্টারে চূড়ান্ত সংকেত পায় এবং অপারেশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। এ অপারেশনে ৩১ জন কমান্ডো যোদ্ধা অংশ নেয়।

১৫ আগস্ট মধ্যরাতে অর্থাৎ ১৬ আগস্ট প্রথম প্রহরে কর্ণফুলীর ওপারে অপারেশনের ঠিক এক ঘণ্টা আগে কমান্ডোরা চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ি প্রতিটি টার্গেট করা জাহাজে তিনটি করে মাইন লাগানোর জন্য তিন জনের ছোট ছোট কমান্ডো দলে বিভক্ত হয়। বুকের উপর গামছা দিয়ে পাঁচ কেজি ওজনের লিম্পেত মাইন বেধে দ্রুত সাতার কাটার জন্য পায়ে ফিন্স লাগিয়ে হাতে একটি কমান্ডো ছুরি নিয়ে নিঃশব্দে কর্ণফুলী ডুব দেয় টার্গেট করা প্রতিটি জাহাজ লক্ষ্য করে। তিন জনই হাত ধরাধরি করে কখনও ডুব দিয়ে কখনও নাক ও চোখ ক্ষণিকের জন্য পানির উপর তুলে পাকিস্তানি হানাদার সেনাদের কড়া পাহারা ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যায় টার্গেট করা প্রতিটি জাহাজ লক্ষ্য করে।

ঐ দিন তিনটি বড় অস্ত্রবাহী জাহাজ বন্দরে ছিলঃ

এম ভি হরমুজ। এটি ১৪ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ৯৯১০ টন অস্ত্রসম্ভারবাহী এই জাহাজটি ১৩ নং জেটিতে নোঙর করা ছিল।

এম ভি আল-আব্বাস। এটি ১০৪১৮ টন সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ৯ আগস্ট ১২ নং জেটিতে অবস্থান নেয়।

ওরিয়েন্ট বার্জ নং ৬ । এটি ৬২৭৬ টন অস্ত্র,গোলাবারুদ নিয়ে ফিস হারবার জেটির সামনে অবস্থান করছিল।

আর কয়েকটি জাহাজ ও বারজ ছিল বন্দরে। নেভাল জেটিতে ছিল দুটি গান বোট ও একটি বার্জ। সন্ধ্যার পর পরই গান বোট দুটি অজ্ঞাত স্থানে রওনা হয়। ফলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কমান্ডো হামলা থেকে গান বোট দুটি বেঁচে যায়।

টার্গেট করা প্রতিটি জাহাজ লক্ষ্য করে পৌছা মাত্রই সবাই কাজে লেগে পরে। জাহাজের গায়ের শক্ত ময়লার আবরণ ছুরি দিয়ে পরিষ্কার করে লিমপেট মাইনগুলো লাগিয়ে দিয়েই তারা নিঃশব্দে নদীর তীরের দিকে ভেসে যায়। আর দক্ষিনে সরে গিয়ে তারা পূর্ব তীরে উঠে পড়ে। রাত পোহাতে তখনও অনেক বাকি। নিরাপদে সরে যাবার পর্যাপ্ত সময় তাদের ছিল।

রাত ১টা ৪০ মিনিট। হঠাৎ কান ফাটানো আওয়াজে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম কেঁপে উঠে। রাত ১টা ৪৫ মিনিট। আরেকটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। তারপর তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম। একটির পর একটি বিস্ফোরণে চট্টগ্রাম নগরী কাঁপছে। হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে পাগলের মত গুলি ছুড়তে শুরু করল।৬ নং ওরিয়েন্ট বার্জ দেখতে দেখতে তলিয়ে গেল। আব্বাস ও হরমুজও দ্রুত ডুবতে থাকে। আশেপাশের জাহাজ ও বার্জগুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

মংলা বন্দরেঃ



আমিনুর রহমান,খসরুর নেতৃত্বে ভারতের পোরট কানিং মাতলার থেকে মংলা অপারেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সুন্দর বনের গভীর জংগল পাড়ি দিয়ে কমান্ডো দলটি ১৩ ই আগস্ট ১৯৭১ সনে সন্ধ্যা ৬ টায় মংলা বন্দর এ পৌঁছায়। ২৬০ জনের কমান্ডো দলটি মংলা বন্দর ও ডাংমারি বিলের পিছনে, পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িতে অবস্তান নেয়। সেখান থেকে মংলার দুরত্ব ডাংমারি বিলের মাঝ দিয়ে ৬ মাইল,নৌকায় পৌঁছোতে সময় লাগে ১ঘণ্টা। ১৫ই আগস্ট,৭১ এ রেডিও মারফত একশন গান শোনার পর কমান্ডোরা গায়বি জানাজায় অংশ নেয় এবং গায়বি জানাজা শেষে পরম করুনাময় আল্লাহ`র কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদের ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল অপারেশন সাফল্যের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। ঠিক রাত ১২টায় কমান্ডোরা ১৫টি নৌকায় মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। মংলায় পৌঁছোনোর শেষ সময় নির্ধারিত ছিল রাত ২ টা কিন্তু পথ পরিদর্শক ভুল পরিচালনায় কম্যান্ডো নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে মংলা বন্দরে পৌঁছায়। ইতিমধ্যে অপারেশনের নকশা মাফিক বাংলাদেশের সব নদী ও সমুদ্র বন্দর এ অপারেশন শেষ। এ অপারেশন শুধু মাত্র জীবনের ঝুকিই নয় বরং মংলার ১৬ আগসট,৭১ ভোরের এ অপারেশন ছিল সরাসরি একটি সুইসাইড একশান। সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ভোর ৪.৩০ মিনিটে মংলা অপারেশন শুরু হয়,অপারেশন চলা কালে ২০০ জন সি এন্ড সি বিশেষ কমান্ডো দল ,হেভি মেশিন গান,মেশিন গান,এনরগা সহকারে ৩ জনের ছোট ছোট দল করে, ৬৬টি উপদলে বিভক্ত হয়ে , নৌ- কমান্ডোদের ছাওনি দিতে ( কভারিং দিতে) মংলা বাঁধের পিছনে অবস্তান নেন। অপারেশন চলা কালে, সি এন্ড সি কমান্ডো দলের উপ -কমান্ডার জনাব রাজা ও জনাব খিজির জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌ- কমান্ডোদের সহোযোগিতায় মেশিন গান নিয়ে পশুর নদীর হাটু পানিতে নেমে আসেন। সময় এর অভাবে শুধুমাত্র ২৪ জন নৌ- কমান্ডো এ অভিযানে অংশ নিতে পেরেছিলেন। ৬টি উপদলে বিভক্ত হয়ে ২৪জন নৌ-কমান্ডো ৬ টি বিদেশী জাহাজে মাইন লাগন,ভোর ৬-৩০ মিনিট থেকে নৌ- কমান্ডোদের লাগানো মাইন বিকট শব্দ করে ফাটতে শুরু করে। ৩০ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনির ৪টি বিমান মংলা বন্দরের উপরে ঘুরতে দেখা যায়। আক্রান্ত জাহজ গুলির মধ্যে একটি সোমালিয়ান,একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের,২টি চায়নিজ,১টি জাপানি ও ১টি পাকিস্তানি জাহাজ। এ অপারেশনে আক্রান্ত মোট ৬টি বিদেশী জাহাজ ই ধ্বংস হয় এবং ৩০,০০০ টন গোলা-বারুদ ও যুদ্ধের সরঞ্জাম সহকারে ধীরে ধীরে পশুর নদীতে নিমজ্জিত হয়। মংলা অপারেশন কমান্ডার আমিনুর রহমান,খসরু ও আরও ২ জন নৌ- কমান্ডো এ অপারেশনে মংলা বন্দর এর অতিরিক্ত বাধা পার হয়ে অসীম সাহসিকতার সাথে সোমালিয়ান ৭,০০০ টনের অস্ত্রসম্ভারবাহী জাহাজ এস,এস,লাইটং এ মাইন লাগানো এবং এস,এস,লাইটং কে ধ্বংস করেন ।

নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর বন্দরেঃ



চাঁদপুর অপারেশনে ১৮জন নৌ-কমান্ডো অংশ নেন সাবমেরিনার বদিউল আলমের নেতৃত্বে। এ গ্রুপের ১৮ জনকে তিনজন করে মোট ৬টি ছোট দলে ভাগ করা হয়। এই অভিযানে মাইন বিস্ফোরণে ২টি স্টিমার, গমবাহী একটি জাহাজ সহ ছোট বড় আরো অনেকগুলো নৌযান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

নারায়ণগঞ্জ অপারেশনে মোট ৪টি জাহাজ ও বেশ কয়েকটি নৌযান নৌ কমান্ডো ধ্বংস করেন। শহরের মাঝে এ অপারেশনে কমান্ডো বিশেষ সাহসিকতার পরিচয় দান করেন। এ অপারেশনে মোট ২০জন কমান্ডো অংশ নেন সাবমেরিনার আবদুর রহমানের নেতৃত্বে।

বাংলাদেশের সশস্ত্র যুদ্ধের ইতিহাস ফ্রগম্যান পরিচালিত অপারেশন জ্যাকপট একটি উজ্জ্বলতম অধ্যায় রচনা করেছিল। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে কমান্ডো হামলায় এদেশে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর ভিত নরে গিয়েছিল। সেই নড়বড়ে ভিতকে সমূলে উৎপাটন করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের বিজয়কে তরান্বিত করেছে।বাংলাদেশে নৌ-কমান্ডো অপারেশন সারা বিশ্বে তাক লাগিয়ে দেয়। বিশ্ব সংবাদ, পত্রিকা, সাময়িকীতে শিরোনামে প্রচারিত হয় এই সংবাদ। বিশ্বের অনেক দেশ নিরাপত্তার কারনে বাংলাদেশে জাহাজ পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে কমান্ডো হামলার পর পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ থেকে নৌপথে পাকিস্তান বাহিনীর রসদ সরবরাহে দারুন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, হানাদার সেনারা সংকটে পড়ে এবং মনোবল হারিয়ে ফেলে। অপর দিকে দুঃসাহসিকতাপূর্ণ গৌরবময় অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে দ্বিগুণ উৎসাহের সৃষ্টি করে ও বাঙালিদের বিজয় তরান্বিত হয়।


সুত্রঃ

১। মুক্তিযুদ্ধে নৌ-কমান্ডো
২। উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট
৩। ছবিঃ ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত।

________________________________________________________
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা:

নীরব দর্শক




No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...