18 October 2011

Hopeless: National University

জামিলা শফী সিদ্দীকি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : নতুন সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরনে উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে আশংকা


আজ অনার্স ১ম পরীক্ষা হয়ে গেল বিভিন্ন বিষয়ে। পরীক্ষার হলে ইনভিজিলেটরের দায়িত্ব পালনকালে মনের অজান্তেই প্রশ্নপত্রটা হাতে নিয়ে একটু চোখ বুলাচ্ছিলাম। দেখে হাতশ না হয়ে পারলাম না। সিলেবাস সম্পর্কে আগে থেকেই ধারনা ছিল। কিন্তু ব্যাপারটা যে এতোটাই খারাপ হতে পারে ভাবতেই পারিনি।
২০০৯-১০ সেশন থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ধরন বদলে গেছে। কি সায়েন্স কি আর্টস বা কমার্স- সকল বিষয়ের সকল কোর্সের প্রশ্নে ’ক’ , ’খ’ এবং ’গ’ তিনটি বিভাগ থাকবে। ক-বিভাগে ২৪টি প্রশ্ন থাকবে। ২০টির সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে হবে। প্রতি প্রশ্নের মান ১। ২০টির প্রশ্নের মোট নম্বর ২০।
প্রশ্নের মান ১ হিসেবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর হবে সংক্ষিপ্ত। খুব সম্ভবত ছোট ছোট কিছু বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের জাস্ট ধারনা আছে কিনা তা বিচার করার জন্যই প্রতিটি কোর্সে এ ধরনের ২০টি প্রশ্নের বিধান রাখা হয়েছে নতুন সিলেবাসে। ধারনাটি খারাপ কিছু নয় আমার মতে। কিন্তু বিপত্তি ঘটিয়েছে প্রশ্ন কর্তাগণ।
উদাহরণ হিসেবে একটি বিষয়ের একটি কোর্সের ক-বিভাগের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করছি-যা আজ ১৭ অক্টোবর পরীক্ষা হয়ে গেল। বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান। কোর্সের শিরোনাম-”রাজনৈতিক তত্ত্ব পরিচিতি”। নমুনা হিসেবে গুটি কয়েক প্রশ্ন উল্লেখ করছি। প্রশ্ন নং ১। (গ)ঃ রাষ্ট্রের উপাদান কি কি ? প্রশ্ন নং ১। (ঠ) রাষ্ট্রের মূল উপাদান কয়টি। আবার প্রশ্ন নং ১। (ট) কোন উপাদানটি ছাড়া রাষ্ট্র হয় না ?
[ ১। (গ) নং প্রশ্নের উত্তর ঃ রাষ্ট্রের উপাদানগুলো হলো- ১. জনগণ ২. ভূমি ৩. সরকার এবং ৪. সার্বভৌমত্ব]। এই উত্তরটি লেখার পর একজন পরীক্ষার্থীকে কি আবারো প্রশ্ন করার দরকার আছে যে, রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ? এই দুটো প্রশ্ন মূলতঃ একই। আবার ১। (ট) নং প্রশ্নটিও একই টপিক থেকে করা হয়েছে। প্রশ্নকর্তার যদি ন্যূনতম বিচারশক্তি থাকত তবে একই টপিক থেকে এ ধরনের প্রশ্ন করতেন না। আর আরো আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না যে, মডারেশন বোর্ড কী করলেন !
একই প্রশ্নপত্রে ১।(প) নং প্রশ্ন করা হয়েছে- বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের নাম লিখ। এ ধরনের প্রশ্নের ব্যাপারে বলার তেন কিছু নেই তবে এটুকুই বলতে পারি যে, অনার্স লেভেলে এ প্রশ্নটি হাস্যকর বটে। বাংলাদেশে অনার্স কলেজগুলোতে রাজনীতির চাষ হয়। এ প্রশ্নটি কেজি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মগজের উপযোগী হতেও পারে।
শুধু এই একটা বা দুটো প্রশ্নই যথেষ্ট নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্নকর্তারা সকল বিষয়ের সকল কোর্সের এই একই মানের প্রশ্ন করছেন। ব্যতিক্রম দু’একটি হয় থেকে থাকতে পারে।
যাঁরা প্রশ্নগুলো সেট করেছেন এবং যাঁরা মডারেশনের ছিলেন তাঁদের কারণে উচ্চ শিক্ষার মান নিয়ে ইতোমধ্যেই মারাতœক আশংকার সৃষ্টি হয়েছে। এবং অনেক সহকর্মী শিক্ষকগণের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করে দেখেছি। তাঁরাও আশঙ্কিত। প্রত্যেকের মুখে একই প্রশ্ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কি চায়, শিক্ষিত জাতি- নাকি সার্টিফিকেট সর্বস্ব জনজঞ্জাল ?
আর সিলেবাস সম্পর্কে বলব- ৪ঘন্টার পরীক্ষায় মাত্র ১টি শব্দ লিখে উত্তর দেয়া যায় এ ধরনের ২০টি প্রশ্ন করা উচিত নয়। কেননা- পরীক্ষার্থীরা দীর্ঘ ৪ ঘন্টার মধ্যে অবশ্যই কোন না কোন সময় কারো না কারো কাছ থেকে এক শব্দের ওই উত্তরটি জেনে নিতে সক্ষম হবে। ইনভিজিলেটরের দায়িত্বে যাঁরা থাকেন তাঁরা তো পরীক্ষার্থীদের চোখ-মুখের সাথে ৪ঘন্টা ব্যাপী চোখ লাগিয়ে থাকতে পারবেন না। ৪ঘন্টা পরীক্ষার হলে ইনভিজিলেটরের দায়িত্ব পালন করা খুব একটা দূরহ কাজ। বিশেষ করে যে সকল শিক্ষক বয়স্ক ও বেশ সিনিয়ন তাঁদের পক্ষে অত দীর্ঘকাল দাঁড়িয়ে থাকা বা পাইচারি করা মোটেও সম্ভব নয়। আর পরীক্ষার্থীরাও এ রকম এক শব্দের উত্তর পাশের বন্ধুর কাছ থেকে জেনে নেয়ার জন্য ওঁত পেতে থাকে। কখন ইনভিজিলেটর একটু অন্য দিকে তাকাবেন সেই মুহূর্তেই সে শুনে নেবে। মাত্র ১ সেকেন্ডের ব্যাপার ১ নম্বর পেয়ে গেলো। খুব আস্তে শব্দ করে এভাবে কোন প্রশ্নে উত্তর জেনে লিখলে কী করবেন ? এভাবে দীর্ঘ চার ঘন্টায় কোন না কোন সুযোগ আসবে জেনে নেয়ার। এবং একজন পরীক্ষার্থী এ ধরনের আনকমন ২০টি প্রশ্নে পুরো ২০ নম্বরই উঠিয়ে নিতে পারে অন্যায় ভাবে।
পরীক্ষা সমাপ্ত হওয়ার সংকেত দিয়ে যখন উত্তরপত্র নিচ্ছিলাম তখন লক্ষ্য করলাম অনেক পরীক্ষার্থীই ওই প্রশ্নগুলোর নম্বর খাতায় উঠিয়ে এমনভাবে রেখেছিল যে, যেই সুযোগ পাবে সেইমাত্র সেটা লিখবে। কিন্তু আমার কক্ষে অন্ততঃ আজ আর সেই সুযোগ পায় নাই। তবে দীর্ঘ ৪ঘন্টা এভাবে সতর্ক থাকা সম্ভব নয়। আর একজন পরীক্ষার্থীর পক্ষেও একটু না একটু কথা না বলে থাকা খুবই কষ্টকর বটে। মনটা ফ্রেস থাকার জন্য হলেও ওদের একটু আধটু কথা বলার সুযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করি। কেননা পরীক্ষার জন্য ওদের মনে এমনিতেই প্রচন্ড চাপ থাকে। মানসিকভাবে চাপমুক্ত রাখতে পারে দু’একটি কথা বলে। সেজন্য প্রশ্নটা এমনভাবে সেট করা উচিত যেখানে ওরা দু’একটি কথা বললেও কোন প্রশ্নের উত্তর লিখতে সে যেন বিশেষ লাভবান না হয়। তবে হ্যাঁ এ ধরনের ছোট ছোট নৈব্যক্তিক ধরনের উত্তরের ক্ষেত্রে ২০টি প্রশ্নে ৪০মিনিট সময় দিয়ে আলাদা উত্তরপত্রে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। তাতে এই সময়টুকু ইনভিজিলেটর সতর্ক থাকলে ওরা পরস্পর কথা বলার সুযোগ পাবে না এবং ৪০ মিনিট পর রচনামূলক প্রশ্নগুলোর উত্তর আরাম আয়েশে লিখতে পারবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশনের সাথে জড়িত কোন পাঠকের নজরে আমার লেখাটি আসলে সার্থক হতো আমার শ্রম।

Source:

http://www.somewhereinblog.net/blog/siqbogra/29468155

No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...