27 October 2011

Steve Jobs about Bill Gates

বিল গেটসকে ‘আইডিয়া চোর’ বলতেন স্টিভ জবস

মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে ‘আইডিয়া চোর’ বলেই জানতেন অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠা স্টিভ জবস। এ ছাড়া তিনি গুগল উদ্ভাবিত অ্যান্ড্রয়েডের ওপর যারপরনাই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি মনে করতেন, প্রযুক্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ এই অ্যান্ড্রয়েড। এটাই ছিল তাঁর ক্ষোভের মূল কারণ। আমৃত্যু তিনি বিশ্বাস করতেন, নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম নকল করে। অ্যান্ড্রয়েডের ব্যাপারে তাঁর এই মনোভাব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বহাল ছিল। তিনি চেয়েছিলেন যেকোনো মূল্যে অ্যান্ড্রয়েডকে ধ্বংস করে দিতে।
২৪ অক্টোবর স্টিভ জবসের বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশিত হবে। সেই গ্রন্থের কিছু চুম্বক অংশ হাতে এসেছে বার্তা সংস্থা এপি ও হাফিংটন পোস্ট নামের একটি পত্রিকার মাধ্যমে। সেই চুম্বক অংশগুলো শুক্রবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ও বার্তা সংস্থার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে কিছু বিষয়ে বিশেষত মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্পর্কে স্টিভ জবসের চিন্তাভাবনা ও মনোভাব ফুটে উঠেছে।
অ্যান্ড্রয়েড একটি ‘চুরির পণ্য’
স্টিভ জবস মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করতেন অ্যান্ড্রয়েড একটি ‘চুরির পণ্য’। গুগল এই চুরিটা করেছে আইফোন অপারেটিং সিস্টেম (আইওএস) থেকে। তিনি অ্যান্ড্রয়েডকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দরকার হলে আমি অ্যান্ড্রয়েডকে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে অ্যাপলের রিজার্ভ ৪০০ কোটি ডলারের পুরোটাই খরচ করব।’
সম্প্রতি অ্যাপলের সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে বিভিন্ন মোবাইল-প্রযুক্তি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যেমন স্যামসাং, মটোরোলা, এইচটিসির বিভিন্ন দেশে আইনি লড়াই চলছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, অ্যাপল এখনো অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে গুগলের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্টিভ জবস তাঁর আত্মজীবনী লেখক ওয়াল্টার ইসাকসনকে বলেছিলেন, তিনি যেকোনো মূল্যে অ্যান্ড্রয়েডের কবল থেকে রেহাই চান। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অ্যান্ড্রয়েডকে ধ্বংস করে ছাড়ব। কারণ এটি একটি চুরির পণ্য। এর বিরুদ্ধে ‘থার্মোনিউক্লিয়ার’ যুদ্ধেও আপত্তি নেই আমার।’ জবস ইসাকসনকে বলেন, ‘গুগল অ্যাপলের আইডিয়া মেরে এই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে। এখন কেউ যদি এর বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করার জন্য আমাকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারও ঘুষ প্রস্তাব দেয়, তা-ও আমি প্রত্যাখ্যান করব। আমি শুধু অ্যান্ড্রয়েড নামের এই প্রতারণার শেষ দেখতে চাই।’ তবে অ্যান্ড্রয়েডের বিরুদ্ধে এই মনোভাব পরিবর্তনের জন্য কেউ তাঁকে ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিল কি না, ইসাকসনের কাছে জবস তা পরিষ্কার করেননি।
বিল গেটস সম্পর্কে স্টিভ জবস
বিল গেটসকে একেবারেই পছন্দ করতেন না স্টিভ জবস। তিনি মনে করতেন গেটস যা কিছু করেছেন, সবই অন্যের আইডিয়া চুরি করে। বিল গেটস সম্পর্কে জবসের ধারণা ছিল, ‘এই লোকটি আসলে একজন অচিন্তাশীল ব্যক্তি।’ তিনি বলতেন, ‘তাঁর কাজই হচ্ছে, নির্লজ্জের মতো অন্যের আইডিয়া মেরে দেওয়া।’
বার্তা সংস্থা এপির বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বিল গেটসকে অপছন্দ করতেন বলেই তাঁর আমন্ত্রণে কোনো প্রকার দাতব্য কার্যক্রমে অংশ নেননি জবস। তিনি বলেছিলেন, বিল গেটস খুব ভালো করেই জানেন, তিনি অন্যের আইডিয়া মেরে দিয়েছেন। তাই তাঁর মধ্যে সব সময় একটা খচখচানি কাজ করে। আর সে কারণেই দানে তাঁর এত আগ্রহ।
অন্যদিকে বিল গেটস কিন্তু জবসকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান সব সময় দিয়ে এসেছেন। ২০০৭ সালে একটি অনুষ্ঠানে বিল গেটস স্টিভ জবসকে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের উদ্ভাবনকারী হিসেবেই অভিহিত করেছিলেন। জবস কিন্তু সেই প্রতিদান দেননি কখনোই।
বারাক ওবামা সম্পর্কে জবস
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামার নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব নিতে চেয়েছিলেন স্টিভ জবস । তিনি ওবামাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন অ্যাপলের কমিউনিকেশন উইং ওবামার নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব পেতে আগ্রহী। ওবামার তত্কালীন প্রধান কৌশল প্রণয়নকারী ডেভিড অ্যাক্সেলরডের কারণেই সেই দায়িত্ব পাননি জবস। তবে মৃত্যুর আগেও তাঁর ইচ্ছা ছিল ওবামার ২০১২ সালের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বটি তিনিই পাবেন।
২০১০ সালে বারাক ওবামার সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল জবসের। সেখানে ওবামার মুখের ওপরই একটি অপ্রিয় কথা বলে ফেলেছিলেন জবস। তিনি ওবামাকে বলেছিলেন, ‘আমি আপনার দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি না।’
অন্যান্য বিষয়ে জবস
বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের মতো করেই ভাবতেন স্টিভ জবস। ২০০৪ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মৃত্যু তাঁর চিন্তাভাবনার অনেকটাই আচ্ছন্ন করেছিল। জীবন সম্পর্কে তিনি ইসাকসনকে বলেছিলেন, ‘প্রতিটি মানুষই খুব অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে আসে। কেউ জানে না কত দিনের জন্য আসলে আমরা পৃথিবীতে থাকার অধিকার পেয়েছি। তবে এই সময়ের মধ্যে অনেকেই ভালো কিছু কাজ করে।’ নিজের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, তরুণ বয়সেই কিছু ভালো কাজ করার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম।’
জবস চেয়েছিলেন, তাঁর সন্তানেরা তাঁকে ভালোভাবে জানুক। স্বভাবে নিভৃতচারী জবস সে কারণেই আত্মজীবনীর ব্যাপারে উত্সাহী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চাই আমার সন্তানেরা ভালো করে জানুক, আমি পুরো জীবনে কী করেছি। কীভাবে এই জায়গায় এসেছি।’

Source: প্রথম আলো

No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...