8 October 2011

Micro-credit

শুভাশীষ দাশ

ক্ষুদ্রঋণের নিওলিবারেল এজেন্ডা


subashish-front-11প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পর পরই জার্মান অর্থনীতিবিদদের একটা ক্ষুদ্র গোষ্ঠী নিওলিবারেলিজম ধারণা প্রথম চালু করেন। এরা ‘ফয়েরবাগ স্কুল’-এর সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রাচীন লিবারেলিজম তত্ত্বকে কিছুটা ঢেলে সাজিয়ে নতুন একটা চেহারা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। রিকার্ডোর মুক্ত বাজার অর্থনীতি তাঁর সময়ে ভালো প্রচারণা না পেলেও সত্তরের দশকে এই তত্ত্বই বিশ্বায়ন তত্ত্বকে বাজারে চালু করে। ১৯৭০ সালের আগে পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেইনেসিয়ান (Keynesian) অর্থনীতি চালু ছিল। এই তত্ত্বমতে, একটা ‘বৃহৎ সরকার’ (Big Government) তৈরি করার মাধ্যমে সরকারি খাত জনতার প্রয়োজন মেটাতে কাজ করবে। বেসরকারি খাত থাকবে, তবে তাদের চেয়ে সরকারি খাত অনেক বেশি জনসম্পৃক্ত কাজ করবে। আমেরিকায় ১৯৪৫ সালের গ্রেট ডিপ্রেশানের পরেই এই মতবাদ পুরোদমে চালু হয়। বেসরকারি বড়ো ব্যবসায়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চহারে কর আদায় করে সরকারের উন্নয়ন কাজে লাগানো হতো। এই কেইনেসিয়ান তত্ত্বের কারণে সেই সময় বিশ্ব অর্থনীতি একটা স্বর্ণালী ‘নিয়ন্ত্রণাধীন পুঁজিবাদ’ (Controlled Capitalism) এর চেহারা দেখে। (রেইখ ২০০৮: ৭) সত্তরের দশক পর্যন্ত তা বহাল থাকে। পরে অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রীডম্যান, রবার্ট লুকাস অর্থনৈতিক মন্দার দোহাই দিয়ে এর বিরোধিতা করেন, সাথে নিওলিবারেল তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেন। পৃথিবী প্রবেশ করে মুক্তবাজার অর্থনীতির জগতে। ২০০৭-০৮ সালের বিশ্বমন্দাতে কেইনেসিয়ান তত্ত্ব আবার পুনর্জীবন লাভ করে।
নিওলিবারেলিজমের আছে ডিএলপি (D-L-P) ফর্মূলা।
১) ডিরেগুলেশান অফ ইকোনমি (অনিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি)
২) লিবারাইজেশন অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ব্যবসা ও শিল্পের মুক্তায়ন বা বিশ্বায়ন)
৩) প্রাইভেটাইজেশন অব স্টেট ওনড্‌ এন্টারপ্রাইজ (সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেসরকারীকরণ)

এই তত্ত্বকে বাজারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সেই সময় বেশ কয়েকটি নিওলিবারেল থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তৈরি করা হয়। ১৯৮০ সালের দিকেই গঠিত হয় ওয়াশিংটন কনসেন্সাস্‌ বা ওয়াশিংটন ঐক্যজোট। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক সহ বেশ কয়েকটা বড়ো বড়ো অর্থনৈতিক সংগঠন (আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, ক্যাটো ইন্সটিটিউট, হেরিটেজ্‌ ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিস, অ্যাডাম স্মিথ ইন্সটিটিউট) পুরো বিশ্বে নিওলিবারেল বটিকা সেবনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়। সেই সময়ের চার ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান আমেরিকার রিগ্যান, ইংলন্ডের থ্যাচার, কানাডার মুলরোনে, অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেজার সহ অজস্র কর্পোরেট লবিইস্ট, প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক, প্রধান নির্বাহী, মিডিয়া তারকা, কূটনৈতিকসহ অনেকেই এই তত্বের বাজারজাতকরণে নেমে পড়েন।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেশি থাকলে কর্পোরেটগুলোর অসুবিধা। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি করা চাই। ধনী দেশগুলোর শীর্ষধনীদের প্রাচুর্যের লেখচিত্র দেখলে এর উদ্দেশ্য কিছুটা বোঝা যায় । নিওলবারেল অর্থনীতির কারণে ধনী-গরীব ব্যবধান আরো বাড়ে। এর মাধ্যমে বড় ব্যবসায়ী বা ধনীদের কর মওকুফ, আমজনতার সামাজিক সুযোগ-সুবিধা কমানো, সরকারের আকার ছোটো করা, বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কর সুবিধা দিয়ে বাণিজ্যে আগ্রহী করানো, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য এইসব মৌলিক চাহিদাকে উচ্চমূল্যের পণ্যে পরিণত করা, শ্রমিকদের মধ্যে ইউনিয়ন গড়ে তোলা বন্ধ করা, নিওলিবারেল সমর্থনকারী নানা ধরনের নতুন রাজনৈতিক সংগঠন, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা ঘটে। (স্টেগার ২০১০: ১৪)
মিল্টন ফ্রীডম্যান ছিলেন ‘শিকাগো স্কুল অব ইকোনমিকসের’ হর্তাকর্তা। তিনি ‘বৃহৎ সরকার’ গঠনের বিরোধিতা করে সরকারের হাত সীমিত করে মুক্ত অর্থনীতির বহুল প্রচারের মিশনে নামেন। তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য হয় লাতিন আমেরিকা। ‘চিলি প্রজেক্ট’ নামের একটা মিশন চালু হয়। এতে চিলির প্রায় শ’খানেক ছাত্রকে নিওলিবারেল অর্থনীতির পাঠ দেয়া হয়। এরা পরিচিত ছিলেন ‘শিকাগো বয়েস’ নামে। ১৯৭৩ সালের এগারোই সেপ্টেম্বর আগুস্ত পিনোচেট সিআইএ-এর সমর্থন নিয়ে একটা ক্যু জারি করে ক্ষমতা দখল করে বসেন। শিকাগো বয়েস-রা পিনোচেটের ক্ষমতা দখলের পরে সেখানকার অর্থ মন্ত্রণালয়ে হোমরা-চোমরা হিসেবে প্রবেশ করেন। তারা তাদের শিখে আসা মুক্ত অর্থনীতির ব্যবহারিক ক্ষেত্র পেয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেসরকারীকরণের ধুম তোলেন। স্বৈরশাসক পিনোচেটের যাবতীয় নির্যাতন-নিপীড়ন, গণহত্যার মাধ্যমে এক নতুন নিওলিবারেল চিলি বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। মার্ক্সবাদীদের হাত থেকে চিলিকে বাঁচানোর কথা বলে পিনোচেট প্রায় তিন হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করে গুম করেন। জেলে ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হয় ত্রিশ হাজারের বেশি লোককে। এইসব জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের সময়ে বিশ্বব্যাঙ্ক টু শব্দ করেনি। পিনোচেটের এই নির্যাতনের সময়কালেই বিশ্বব্যাঙ্ক উন্নয়ন কাজের জন্য চিলিকে সাতটা বড়ো আকারের অর্থসাহায্য দেয়।(টেইলর ২০০৬: ৩২) পিনোচেটের সময়ে দেশের মাত্র ১০% ধনী লোক এই অর্থনীতির সুফলটা ভোগ করেন। আর্জেন্টিনাতে একই ঘটনা ঘটে ১৯৭৬ সালে। মেক্সিকো নিওলিবারেলিজমে দীক্ষিত হয় ১৯৮০ সালে। ব্রাজিলে ফার্নেন্দো দি মেলো মারফত এই নীতি প্রবেশ ঘটে ১৯৮৯ সালে। (বার্ডিক ২০০৯: ১০৩) দেখা যাচ্ছে, সামরিক সরকারগুলোকে এই টোটকা সহজে হজম করানো যায়। এর মূল কারণ- সামরিক বাহিনীর মধ্যে ঢুকে থাকা অসম্ভব লোভ ও ক্ষমতার প্রতি মোহ। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্ক আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে সেখানে নিওলিবারেল অর্থনীতি চালু করে ১৯৮০ সালে। (রায় ২০০৭: ৩১৩) শুরুর দিকে এশিয়াতে ধাক্কা না লাগলেও নব্বইয়ের দশকে ‘এশিয়ান ডেভলেপমেন্ট মডেল’ হিসেবে এশিয়ায় এর জোর প্রবেশ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন নিওলিবারেল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা মানেই একটা চকচকে বিমানবন্দর, নতুন একটা ম্যাকডোনাল্ডস্‌, ২/৩টা বিলাসবহুল হোটেল, হাজার তিনেক এনজিও, আর একটা মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। (জনস্টন ২০০৫: ২)
রিগানোমিকস্‌ (Reaganomics) আর থ্যাচারিজম (Thatcherism) নিওলিবারেল প্রচারণার প্রথম ঢেউ। এর পরে আসে এর দ্বিতীয় পর্যায় যার হাল ধরেন ক্লিনটন আর টনি ব্লেয়ার। ক্লিনটনের মার্কেট গ্লোবালিজম আর ব্লেয়ারের থার্ড ওয়ে নাম দিয়ে এই তত্ত্ব দ্বিতীয় পর্যায় পার করে। এই অর্থনীতির মূল আগ্রহ মুনাফায়। ১৯৮৭ সালের ‘ওয়ালস্ট্রিট’ সিনেমায় গর্ডন গেক্কোর মুখ থেকে বেরোয়, ‘গ্রীড ইজ গুড’। এই একটা বাক্যেই নিওলিবারেল তত্ত্বের যাবতীয় বিভ্রান্তি চোখের সামনে চলে আসে। নিওলবারেলিজম চায় বাজারকে অনিয়ন্ত্রিত চেহারায় দেখতে (যেখানে স্বয়ংক্রিয় ভুলশুদ্ধি হবে বলে তাদের ধারণা), সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারীকরণ করতে আর মুক্তবাজার অর্থনীতির নাম করে ধনী ও সক্ষমদের আধিপত্য আরো বাড়িয়ে তুলতে। সরকারি ব্যাঙ্ক বেসরকারি হওয়ার ফলে তাদের প্রধান নির্বাহীর বেতন, সুযোগ-সুবিধা দেখলেই বোঝা যায়- কেন এই নিওলিবারেল তত্ত্বের এতো রমরমা অবস্থা। সরকারের ক্ষমতা সীমিত করে ব্যবসায়ীদের কাছে মানুষকে জিম্মি করে রাখাই এর মূল উদ্দেশ্য। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণ কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না কিন্তু ভোট দিয়ে নির্বাচিত সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ গোষ্ঠীবদ্ধ প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারে। জনগণের সেইটুকু সুযোগও রহিত করার যাবতীয় চেষ্টা করা হয় নিওলিবারেল রাজনীতির মাধ্যমে। আর মানুষের মৌলিক চাহিদা রাষ্ট্র পূরণ না করে বেসরকারি মুনাফালোভী প্রতিষ্ঠান পূরণ করবে- এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর। সরকারের গোষ্ঠীবদ্ধতাকে কাটিয়ে মানুষ একাকি সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারে- এইরকম কথাও প্রচার করা হয়। ক্ষুদ্রঋণও ঠিক একইভাবে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথা বলে।
ক্ষুদ্রঋণ শুরু থেকেই নিওলিবারেল এজেন্ডাকে বাস্তবায়িত করছে। বিশ্বায়নের বুলি মুখে নিয়ে নিওলিবারেল অর্থনীতি সত্তরের দশক থেকেই সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রচলিত। রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তিকে বেসরকারীকরণের মাধ্যমে বেগবান ও অর্থনৈতিকভাবে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্য নিয়েই প্রথমদিকে এর প্রবেশ। নিওলিবারেল বুলি আমাদের শেখাচ্ছে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথা। তাদের ভাষ্যমতে, অর্থনৈতিক বিকাশ নির্ভর করবে ব্যক্তিমানুষের দক্ষতা ও পরিশ্রমের ওপর। ঠিক একইভাবে ব্যক্তিমানুষের পরিশ্রমের ওপর জোর দেয় ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলি। মাইক্রোক্রেডিট এক ধরনের অধিকার বলে প্রচার করে ইউনূসোমিকসের লোকজন। এরা আরো প্রচার করে- প্রতিটা মানুষ একজন এন্ট্রারপ্রিউনার বা উদ্যোক্তা। এইসব কথা মানুষের মনে ইচ্ছাশক্তির কাল্পনিক বিকাশ ঘটিয়ে দিলেও এর পেছনের সত্যটুকু কারো চোখে পড়ে না। দরিদ্র বা হতদরিদ্ররা এক ধরণের এন্ট্রারপ্রিউনার বা উদ্যোক্তাই। কারণ তিনি যে কাজ করেন তার পেছনে শ্রম চিন্তাশক্তি কোনোটারই কমতি নেই। এটা কোনো নতুন কথা নয়। কিন্তু উদ্যোক্তা হলেই যে সাফল্য ধরা দিবে তা নয়। দরিদ্র মানুষের গরীবি অবস্থার কারণ অনেকগুলো। নগদ অর্থের অভাব এদের মধ্যে একটি। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা, শিক্ষা, জনসংযোগ ইত্যাদির অভাবে তার উদ্যোগ সফল হয় না। ক্ষুদ্রঋণ গোষ্ঠীবদ্ধ উদ্যোগকে দূরে ঠেলে ব্যক্তিমানুষের উদ্যোগে মুরগীর বাচ্চা, ছাগল, গরু পালনকে সফল উদ্যোগ হিসেবে দেখিয়ে নিওলিবারেল প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেয়।
অন্যান্য দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচী ভালো কাজ করতে পারছিল না দেখে উচ্চ সুদের হার থাকা সত্ত্বেও ক্ষুদ্র ঋণ জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। বলা হতে থাকে ঋণ মানুষের অধিকার। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো মূল জিনিসে আগ্রহ না দেখিয়ে কেবল ঋণগ্রহণে বাধ্য করা কীভাবে অধিকারের মধ্যে ঢোকে সেটা বোঝা কষ্টকর। আরো বলা হয়, দারিদ্র্য মানুষ দূর করতে পারে ব্যক্তিগত দক্ষতায়। দারিদ্র্যের মূল কারণগুলোকে চিহ্নিত না করে তার মধ্যে আশার আলো জ্বালিয়ে খুব একটা লাভ হয় না। ফলাফল দাঁড়ায়, ঋণ নিয়ে একটা দুষ্টচক্রের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে অশিক্ষিত, স্বাস্থ্যহীন, গরীব জনগণ।
ক্ষুদ্রঋণ একটা দ্রুত অর্থ-উৎপাদনকারী শিল্প। যার উর্দি মানবতা। ঠিক যেমন নিওলিবারেল উন্নত দেশগুলো নব্বইয়ের পরবর্তী সময়ে মানবতার উর্দি পরে বোমা মারে, দেশ দখল করে, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চালায়। এরপর একমাত্র বিকল্প হিসেবে নিওলিবারেলিজমে দীক্ষিত করে ব্যাপক বেসরকারীকরণের আমেজ ছড়িয়ে সরকারকে অক্ষম ও পঙ্গু করার সাথে সাথে গণতান্ত্রিক ভোটের ক্ষমতাকে সীমিত করে তোলে। ক্ষুদ্রঋণ প্রায়শ বলে নারীর ক্ষমতায়নের কথা। গ্রামীণের শুরুর দিকে পুরুষদেরকে ঋণ দেয়া হলেও পরবর্তীতে সেটা কমিয়ে মেয়েদের ঋণ দেয়াতে বেশি জোর দেয়া হয়। ইউএস কনগ্রেশনাল ফোরামে প্রফেসর ইউনূস বলেছেন- মেয়েরা সংসার, সন্তান, খাদ্য, বাসস্থান এসবের প্রতি অনেক বেশি যত্নশীল। ছেলেরা ঋণের টাকা পেলে সেটা খেয়ে দেয়ে ফুর্তি করে উড়িয়ে দেয়। (রিচে ৪৬)এই বক্তব্যের পেছনের কারণটা বের করেছেন আমিনুর রহমান, লামিয়া করিম। তাঁরা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, গরীব মহিলাদের পছন্দ করার কারণ হলো তাদের দুর্বলতা। ঋণ নিয়ে সেটা আদায় করতে তাদের ওপর জোর খাটানো যায়। যেটা পুরুষের ওপর করা যায় না। ১৯৮৪ সালে গ্রহীতাদের মধ্যে পুরুষ নারী সমান সমান ছিল। ১৯৮৩ সালে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৫৫%, সেটা ১৯৯৪ সালে কমে এসেছে ৬%; এই একই সময়ে নারী ঋণগ্রহীতা বেড়েছে ৭০০ গুণ। ১৯৯৭ সালের মেয়েদের সংখ্যা ৯৫%।(রহমান ১৯৯৯:৯৪) আর সমাজের একটা বড়ো অংশ (পুরুষেরা) ‘ঋণের টাকা খেয়ে দেয়ে ফুর্তি করে উড়িয়ে দেয়’- এই বক্তব্য অতি-সরলীকরণ। নারীদেরকে শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ কিছুই না দিয়ে খালি ঋণের টাকা দিয়ে আর সেটা হাঁস মুরগী পালন করে কিস্তি শোধ করলেই নারীর ক্ষমতায়ন হয়ে যায় না। আর যে পুরুষ ‘ফুর্তি করে টাকা ওড়ায়’ তারা ঋণ গ্রহীতা নারীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নন। ফলে ঋণের টাকা যখন ঘরে আসবে সেটা জোর করে ছিনিয়ে ফুর্তি করতে তারা চলে যেতে পারেন। তাই এদেরকে এই মানসিকতা পরিবর্তনের ব্যাপারে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার ভূমিকা কি? শুধুমাত্র ঋণ দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবসা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আকাশে তোলা ছাড়া গরীব মানুষের উন্নয়নে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখে কিনা সন্দেহ। (লিসা ২০০৩: ৪২-৪৫)
ব্যক্তি মানুষের ওপর তার ভাগ্যকে ছেড়ে দেয়ার পদ্ধতি চালু করেছে ক্ষুদ্রঋণ। বলা হচ্ছে- দারিদ্র্য দূর হবে যদি সবাই হয় পরিশ্রমী আর উদ্যোগী। এটা অনেকটা বুটস্ট্র্যাপ (Bootstrap) থিয়োরির পলিসি ভার্সান। এই মতানুসারে, মার্কেটপ্লেসে যে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে কঠোর পরিশ্রম করবে সে সাফল্য পাবে। কঠোর পরিশ্রম সাফল্য লাভের একটা দিক, একমাত্র দিক নয়।
ক্ষুদ্রঋণ দাতাদের আগ্রহী করে তুলতে গরীবকে ‘ঋণ পাওয়ার যোগ্য’ করে দেখায়। কিস্তি কীভাবে বা কতো হারে শোধ হয়, সেটা তাদের পোর্টফোলিওতে বড়ো আকারে থাকে। কিন্তু দরিদ্ররা আদৌ দারিদ্র্য থেকে রক্ষা পেয়েছেন কিনা সেটা নিয়ে কোনোপ্রকার ডাটা বা বক্তব্য নেই। এর মূল কারণ, ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায়ীদের দারিদ্র্যমোচন নিয়ে মাথাব্যথা নাই। তাদের যাবতীয় আগ্রহ মুনাফা। যেটা নিওলিবারেল তত্ত্বের মূল আগ্রহ। ক্ষুদ্রঋণ ঋণগ্রহীতাকে বলে তার ‘খরিদ্দার’, ঠিক একইভাবে নিওলিবারেল রাজনীতিতে জনতা মানেই তার ‘মক্কেল’।
ক্ষুদ্রঋণ গুরু প্রফেসর ইউনূস মিল্টন ফ্রীডম্যানের তত্ত্বের সাথে অপরিচিত ছিলেন না। ক্যারোলিন থমাসের বইতে আছে-
যদিও ইউনূস মিল্টন ফ্রীডম্যানের তত্ত্ব আমেরিকাতে পড়তে এসে জানতে পেরেছেন, কিন্তু তিনি চাইছিলেন নিজের মতো করে একটা বাস্তবমুখী দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প। (থমাস ২০০৯: ১৭৮)
ফলে ফ্রীডম্যানের তত্ত্বের মূল জায়গাটা ব্যবহার করে তিনি সেটাকে জড়িয়ে নিয়েছেন ধনতন্ত্রের অব্যাহত অর্থ সরবরাহের সাথে। বড় বড় কর্পোরেট নিজেদের সম্পদশালী করে দরিদ্রদের দরিদ্রতর করছে। কিন্তু সরাসরি এইসব গরীবদের কাছ থেকে অর্থ যোগানের একটা কোনো বাস্তবমুখী প্রকল্প প্রফেসর ইউনূসের আগে কেউ হাতে কলমে করে দেখাতে পারে নি। তিনি দেখালেন, হতদরিদ্র মানুষ ও ব্যাঙ্কেবল (bankable); তাদেরকে ঋণ দেয়া হলে উচ্চহারে সুদ (কার্যকরী রেট ন্যূনতম ২০% থেকে ৬০% বা তার চেয়ে বেশি) আদায়সহ দ্রুতগতিতে মূল টাকা ফিরে আসে। প্রফেসর ইউনূসের ঋণ আদায়ের পোর্টফোলিও দেখে বিশ্বের তাবৎ বড়ো বড়ো থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইউনূসের এই প্রকল্পের পেছনে এসে দাঁড়ালো। তাঁকে হাজির করা হলো দারিদ্র্য দূরীকরণের অবতার হিসেবে। সম্মাননা আর পুরস্কারের ভারে তাঁকে ক্লান্ত করে ফেলা হলো। এই দারিদ্র্য দূরীকরণ প্রকল্পের সামনে এসে জড়ো হলো মানবতার ঢাল। গরীবরা ঋণ নিয়ে বিশ্বের যেকারো সমকক্ষ হয়ে পড়বেন বলে ঘোষণা করা হল। কিন্তু একজন গরীব, অশিক্ষিত, স্বাস্থ্যহীন, রিসোর্সবিহীন লোক প্রথম বিশ্বের কর্পোরেটদের পাশে কিভাবে সমতুল্য হবেন সেই ব্যাখ্যা কেউ দাবী করে না। আর বলা হয়, এইসব সংস্থার মালিক গরীব ঋণগ্রহীতারাই। যদি কোনো ঋণগ্রহীতা এইসব সংস্থার শেয়ার কিনে এর মালিকানার ক্ষুদ্রতম অংশও হন, সেটা ঐসব সংস্থার নীতিমালা, সিদ্ধান্ত, সুদের হার কমানোতে কোনো ভূমিকাই রাখবে না। কারণ সেই মালিকানা একটা মাল্টি-বিলিয়ন খাতের তথাকথিত অক্ষমতর আণুবীক্ষণিক মালিকানা। এদিকে বিশ্বের তাবৎ গরীব লোককে ‘একমাত্র বিকল্প’ হিসেবে ক্ষুদ্রঋণের আওতায় আনার একটা মহাপ্রকল্প শুরু হয়ে বেশ আগেই। তাদের লক্ষ্য ২০১৫ সালের মধ্যে ১৭৫ মিলিয়ন দরিদ্র ও হতদরিদ্রকে ক্ষুদ্রঋণের সীমানায় আনা। (করিম ২০১১: xiv) অনেকটা প্রথম পর্যায়ের নিওলিবারেল শাসক থ্যাচারের থ্যাচারিজমের মতো। থ্যাচার নিওলিবারেল অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রায় একনায়কের মতোই চালু করেছিলেন। থ্যাচারিজম বিশ্বে চালু করেছিলেন টিনা (TINA= There Is No Alternative) মতবাদ। ক্ষুদ্রঋণ টিনা মতবাদকেই বেছে নেয় টাটা (TATA= There Are Thousands of Alternatives) মতবাদকে দূরে সরিয়ে। (ইভানস্‌ ২০০৪: ৪৬)
ডেভিড হার্ভে ২০০৬ সালে প্রকাশিত “আ ব্রিফ হিস্টরি অব নিওলিবারেলিজম” বইয়ের(হার্ভে ২০০৫) সারসংক্ষেপ করেছেন এভাবে- আমেরিকা আর ইংল্যান্ডে এই নিওলিবারেল নীতিমালা প্রবর্তনের পেছনের কারণ- শ্রম বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা। আত্মকর্মসংস্থানের কথা বহুল প্রচার করা হলে শ্রমিকেরা বড় শিল্পে শ্রম দিতে কম আগ্রহী হবে। (বেটম্যান ২০১০: ৩৩) গরীব মানুষ নানা জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলে শ্রমিকদের ইউনিয়ন বলে তখন কিছু থাকবে না। শ্রমিকেরা সংগঠিত হতে পারবেন না। এতে বড় শিল্পে যারা থাকবেন তাদের ওপর শ্রম-ঘন্টা বাড়িয়ে দিয়ে শোষণ করা যাবে। আর বাকি যারা আত্মকর্মসংস্থানের চিন্তা করবেন তাদের প্রয়োজন হবে নগদ অর্থ। যেটা তাদের কাছে থাকবে না বলে তারা ঋণ নিয়ে ঋণচক্রে ঢুকে পরবেন। সেখানেও কর্পোরেটদের টাকা ব্যবহৃত হবে, সুদে-মূলে সেটা ফিরেও আসবে অতি দ্রুত। এভাবেই একটা চমৎকার নিওলিবারেল ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠে।
নাইজেরিয়া একটা উদাহরণ হিসেবে এখানে আসতে পারে। আশির দশকে নাইজেরিয়াতে তেলের বিশাল প্রাপ্তি ঘটে। কিন্তু সেখানে কোনোরকম তেলভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠতে পারেনি নিওলিবারেল রাজনীতির কারণে। সেখানে বরং তেল ছাড়া বিকল্প শিল্পের দিকে মানুষকে আকর্ষিত করা হয়। নাইজেরিয়ার নিওলিবারেল পলিসি যেসব শিল্প তাড়াতাড়ি মূলধন সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিতে পারে তাদেরকে অর্থনৈতিক সাহায্য দেয়ার জন্য হাত বাড়ায়। সাথে সাথে সেখানে গিয়ে হাজির হয় ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো। অল্প দিনেই দুই হাজারের মতো এনজিও গড়ে ওঠে। এতো তেল থাকা সত্ত্বেও নাইজেরিয়া অর্থনৈতিকভাবে সফল হতে পারেনি নিওলিবারেল শোষণে। একইভাবে ঘানায় সোনার খনি থাকা সত্ত্বেও ধনী হতে পারেনি সেই দেশের জনগণ। যার ফলে ২০১০ সালে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে নাইজেরিয়ার অবস্থান ১৪৫ (১৭৭ টি দেশের মধ্যে)। ক্ষুদ্রঋণের স্বর্গ বাংলাদেশের অবস্থান একটু উঁচুতে। বাংলাদেশের অবস্থান ১৩২; ঘানার অবস্থান ১৩৩;
নিওলিবারেল বিশ্বায়নের সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হচ্ছে- বিশ্বায়নের নাম করে মাঝারি আকারের আঞ্চলিক ক্ষুদ্রশিল্পগুলোকে একেবারে ধ্বংস করে দেয়া। এসব শিল্পের লোক কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে বড় প্রতিষ্ঠানে ঢুকতেও ব্যর্থ হয়। তখন তাদের সামনে খোলা থাকে একমাত্র পথ- আর সেটা হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান। আর সেখানে তখন উপস্থিত ক্ষুদ্রঋণের ফ্ল্যাট রেট। ১০% ফ্ল্যাটরেটের কথা বলা থাকলেও কার্যকরী রেট কমপক্ষে ২০% থেকে শুরু করে ৬০% পর্যন্ত।(দাশ ২০১১) কারণ অন্যান্য ঋণের মতো ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো বছর শেষে একেবারে সুদ আদায় করে না। তারা আদায় করে কিস্তি আকারে। এক বছরে পঞ্চাশটা কিস্তি। ফলে ঋণ নিয়ে বাড়িতে তুলে বিনিয়োগ করার আগেই তাকে কিস্তি শোধের জন্য টাকা তুলে রাখতে হয়। গ্রামের মানুষের ওপর ঋণশোধের চাপ একসাথে পড়বে না বলে এই কিস্তির ব্যবস্থা- এই কথা সম্পূর্ণ ভুল। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋণ দিয়ে কতোটা সীমিত সময়ের মধ্যে সেটা নিজেদের কাছে ফিরিয়ে আনা যায় সেই ব্যবস্থা তৈরি করা। টাকা ফিরে আসলে সেটা আবার আরেকজনের ওপর খাটানো যাবে। আর সেটাও ফিরে আসবে কিস্তি হিসেবে। ফলে মাল্টি বিলিয়ন ডলারের ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো ক্ষুদ্রঋণ সংস্থায় বিনিয়োগ করতে এতো আগ্রহী।
সামাজিক ব্যবসার নামে প্রফেসর ইউনূস যে সব মাইক্রো-এন্ট্রারপ্রিউনার বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বিবরণ দিচ্ছেন সেগুলোর সাথে সাথে বিশ্বায়নের লক্ষ্যও মিলে। যূথবদ্ধ কোনো শিল্পে উদ্যোগী না হয়ে একাকি উদ্যোক্তা হিসেবে থাকলে যেকোনো সামাজিক আন্দোলন, জমায়েত, ট্রেড ইউনিয়নে যোগদানের সুযোগ ঘটবে না। ফলে শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে যেকোনো কর্পোরেট রক্ষা পাবে।
ক্ষুদ্রঋণকে ইদানীং বলা হচ্ছে আঞ্চলিক নিওলিবারেল সংগঠন। (বেটম্যান ২০১০: ১৬০) অন্য যেকোনো ধরনের শিল্প উদ্যোগকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য আঞ্চলিক পর্যায়ে এই সংস্থাগুলো তৎপর। দারিদ্র্য দূর করার বদলে দারিদ্র্যকে কিছুটা প্রশমিত করে তুললে এই সংস্থাগুলোর দীর্ঘমেয়াদে লাভ। ধনতন্ত্রের কিছু মোঘল সৃষ্টি করার পেছনেই নিওলিবারেলদের যাবতীয় প্রচেষ্টা।
সম্প্রতি প্রকাশিত লামিয়া করিমের ‘মাইক্রোফাইন্যান্স অ্যান্ড ইটস্‌ ডিস্‌কন্টেন্টস্‌: উইম্যান ইন ডেট ইন বাংলাদেশ’ বইতে (করিম ২০১১) মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো আদতে দারিদ্র্য কমাতে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখে না বলে উল্লেখ করেন। ১৯৯৯ সালে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে একই সিদ্ধান্তে এসেছেন আমিনুর রহমান (রহমান ১৯৯৯)। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলে প্রকৃতপক্ষে নারীর ওপর সহিংসতা ও সামাজিকভাবে হেয় করা নিয়ে অজস্র লেখালেখি ও মাঠ পর্যায়ের গবেষণা শুরু হয়েছে। মিশেল ফুকোর মতে, আধুনিক সরকারের লক্ষ্য কীভাবে অল্প পরিশ্রমে তার জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ক্ষুদ্রঋণ এক্ষেত্রে একটা মডেল। ঋণ দিয়ে কিছু নিয়ম, কৌশল শিখিয়ে গ্রামের মহিলাদের নিয়ন্ত্রণ করে অর্থ আদায় করার একটা পদ্ধতি তারা হাতে কলমে করে দেখিয়েছেন। ক্ষুদ্রঋণ বহুল প্রচারে এটুকু মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে- একমাত্র এই পদ্ধতিতেই দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। এটুকু ধারণা মানুষের মধ্যে গেড়ে দিতে নিওলিবারেল থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলোর যাবতীয় সংযোগ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো।
তাহলে সমাধান কী? ২০০৭-০৮ সালে বৈশ্বিক মন্দাতে এটা বোঝা গেছে, সীমাহীন লোভের কারণে এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়। পুরানো কেইনিসিয়ান পথে ফিরে আসার চেষ্টাও করা হচ্ছে। নিওলিবারেল আর কেইনেসিয়ান তত্ত্বের একটা ভারসাম্য তৈরি করে একটা কোনো সমাধানে হয়তো আসা সম্ভব। ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো লাভ যা করার করে ফেলেছে। তাদের মাল্টি বিলিয়ন ডলার শিল্পের এখন উচিত লোভ কমানো কিংবা লোভকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। অর্থ সংকুলানের অভাব যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণে গরীবদের জন্য অন্তরায়। তবে এটা প্রধানতম বা একমাত্র নয়। ঋণ গ্রহণ করলে কিভাবে সেটা সঠিক পথে ব্যবহার করা যায় সেই ব্যাপারে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন আছে। হতদরিদ্রদের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এবং সেটা বিনামূল্যে। ঋণ গ্রহণ করে দারিদ্র্যের দীর্ঘমেয়াদী চক্রে যেন তারা আটকে না পড়েন সেই ব্যাপারে নির্দেশনা দরকার। মাঝারি ও আঞ্চলিক শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত। ক্ষুদ্রঋণ যেহেতু এইসব শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য প্রধান একটি অনুঘটক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে, দায়টা তারা মাথায় নিতে পারে। সবার এটা বোঝা প্রয়োজন- দারিদ্র্য দূরীকরণে ক্ষুদ্রঋণ কোনো একটা পথমাত্র, একমাত্র কখনোই নয়। বিশ্বের দরিদ্ররা বড় হাঁফিয়ে গেছে, তাদেরকে অনুগ্রহ করে সুন্দরমতো বাঁচতে দিন।
শুভাশীষ দাশ: গবেষক ও প্রাবন্ধিক।

No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...