গোলাম মর্তুজা |
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের মেঝেতে শুয়ে আছেন মোফাজ্জল হোসেন। মুখে, হাতে ব্যান্ডেজ। গত শনিবার রাতে ট্যাক্সিক্যাবে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুন নেভাতে গিয়ে শরীরের ১০ শতাংশ পুড়েছে তাঁর। পুড়েছে উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন হলুদ ট্যাক্সিক্যাবটিরও কিছু অংশ।
কিন্তু ফরিদউদ্দিন আহমেদ তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে কেনা বাসটি রক্ষা করতে পারেননি। গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে মিরপুরে পার্ক করা বাসটিতে কে বা কারা আগুন লাগিয়ে দেয়।
হরতালের আগে শনিবার দুপুর থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত রাজধানীতে যে ১১টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে মোফাজ্জলের ট্যাক্সিক্যাব ও ফরিদের বাসও রয়েছে।
গতকাল বিকেলে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের পঞ্চম তলায় চিকিৎসাধীন মোফাজ্জলের (৪৫) সঙ্গে কথা হয়। পাশে উদ্বিগ্ন মুখে বসা স্ত্রী ও ছেলে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানালেন, আগুনে মোফাজ্জলের শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
যন্ত্রণাকাতর কণ্ঠে মোফাজ্জল বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে পুরোনো হলুদ ট্যাক্সিক্যাবটি (ঢাকা মেট্রো প ১১-৫৩৪৯) কিনে নিজেই চালাচ্ছেন। এর আয় দিয়েই চলে পরিবারের ভরণপোষণ, তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। নষ্ট গাড়িটি মেরামত করতে শনিবার সারা দিন লেগেছে। ঘরে বাজারের টাকা নেই। তাই গাড়ি ঠিক হতেই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাস্তায় নামেন তিনি। একটি ভাড়া মেরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফার্মগেটে বাবুল টাওয়ারের সামনে গাড়ি থামান। তখন চার যুবক এসে জানান, মিরপুর যাবেন। দর কষাকষি করার সময় হঠাৎ তাঁদের একজন পেছনের দরজা খুলে মুখখোলা একটি বোতল ছুড়ে মারেন পেছনের আসনের ওপর। এরপর দেশলাইয়ের জ্বলন্ত কাঠি সেখানে ফেলতেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন।
মোফাজ্জল বলেন, ‘আগুন দেইখে আমি পাগলের মতো প্রথমে পাশের দোকান থেকে এক মগ পানি নিয়া সিটে ঢালি। আগুন নেভে নাই। এরপর এক লিচুওয়ালার ঝাঁকা থিকা লিচুর পাতা নিয়া আগুনে ঠাইসা ধরি। আগুন নেভার পর বুঝতে পারি আমিও পুইড়া গেছি। গাড়ি গেলে সংসার ভাইস্যা যাইব। সেই জন্যে তখন কিছু মনেই হয় নাই।’ তিনি জানান, গাড়ির পেছনের আসনসহ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। পরে পুলিশ গাড়িটি তেজগাঁও থানায় নিয়ে যায়। এখনো সেখানেই আছে। মোফাজ্জলের বাসা মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ে।
পুড়েছে ফরিদের সব সঞ্চয়ের বাস: ভোরে মিরপুর ১৩ নম্বরে পার্ক করা যে দুটি বাস পোড়ানো হয়েছে তার একটি ফরিদউদ্দিনের। জীবনের সব সঞ্চয় ১৮ লাখ টাকা দিয়ে গত এপ্রিল মাসে বাসটি (ঢাকা মেট্রো ব ১১-২৮২৫) তিনি কেনেন। বেলা ১১টার দিকে তাঁকে দেখা গেল একমনে পুড়ে যাওয়া বাসের ভেতর থেকে ব্যবহারযোগ্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করছেন। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন স্বজনও। সবার মুখেই কষ্টের ছাপ।
বাসের সব আসন পুড়ে লোহার কাঠামো বেরিয়ে রয়েছে। স্টিয়ারিং হুইল গলে দড়ির মতো বেঁকে গেছে, গলে গেছে মেঝে, সব কাচ। ছাদও প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।
ফরিদ বলেন, রাতে ১৩ নম্বরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কমিউনিটি সেন্টারের কাছে বাস পার্ক করে তাতে ঘুমিয়ে ছিল চালকের সহকারী সুমন। বোনের অসুস্থতার খবর পেয়ে শেষ রাতে সুমন বাসায় চলে যায়। ভোর পাঁচটা থেকে সোয়া পাঁচটার মধ্যে দুর্বৃত্তরা বাসে আগুন লাগিয়েছে। আগুনে বাসের ভেতর ও ইঞ্জিন—সবই পুড়ে গেছে। তাঁর বাসটি মাইলাইন পরিবহনে চলাচল করত। তিনি জানান, ১০ বছর বাহরাইনে পোশাক কারখানায় কাজ করে গত বছরের নভেম্বরে দেশে ফেরেন তিনি। তিলে তিলে জমানো টাকা দিয়েই বাসটি কিনে মাইলাইন কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হয়েছিলেন।
ফরিদ বলেন, বাসটি মেরামত করতে কয়েক লাখ টাকা লাগবে। এই টাকার সংস্থান কীভাবে হবে, তাই এখন তাঁর একমাত্র চিন্তা। আর বাসের চাকা না ঘুরলে তাঁর সংসারের চাকাও ঘুরবে না।
Source: Prothom Alo
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
-
Common Errors in English Usage by Paul Brians paulbrians@gmail.com http://www.wsu.edu/~brians/errors/ (Brownie points to anyone who...
-
SOME IMPORTANT NOTES ABOUT SUBJECTS AND VERBS: 1. The subject of a sentence is either a NOUN or a PRONOUN. It is helpful to think of a PRON...
-
নতুন রুট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না পেলে এগোবে না জাইকা পথহারা মেট্রোরেল এ কে এম জাকারিয়া ও আনোয়ার হোসেন ...
No comments:
Post a Comment