26 September 2011

BCS News

পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ ই ম নেছার উদ্দিন রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিশেষ এই বিসিএস-এর মাধ্যমে শুধু কারিগরি ক্যাডারে এক হাজার চারশ' লোক নিয়োগ দেওয়া হবে।

এর আগে ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২৩তম বিশেষ বিসিএস অনুষ্ঠিত হয়।

দীর্ঘ দিন থেকেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা তাদের জন্য বিশেষ বিসিএসের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংসদে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও উপজাতিদের [আদিবাসী] জন্য সরকারের বিশেষ বিসিএসের পরিকল্পনা রয়েছে।

নেছার উদ্দিন জানান, পিএসসি ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮ ও ২৯তম বিসিএসের যেসব কারিগরি পদ খালি রয়েছে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে সেসব সংরক্ষিত পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

মুক্তিযোদ্ধা, নারী, উপজাতি কোটা এবং পেশাগত ক্যাডারে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮তম বিসিএসে ৮১০টি এবং ২৯তম বিসিএসের ৭৯২টি পদ খালি রয়েছে।

"মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতেই কারিগরি ক্যাডারে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষি, মৎস্য ও শিক্ষা ক্যাডারে এক হাজার চারশ' লোক নিয়োগ দেওয়া হবে", যোগ করেন পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

তিনি বলেন, ৩২তম বিসিএস পরীক্ষার ফরম ছাপানোর জন্য ইতোমধ্যে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। ফরম ছাপানো শেষে অক্টোবর মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। পরীক্ষা অনুষ্ঠানে একটি রূপরেখাও চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বিশেষ বিসিএস-এ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা সব ক্যাডারে ৩২ বছর এবং উপজাতি প্রার্থীরা শুধু শিক্ষা ক্যাডারে ৩২ বছরে আবেদন করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

নেছার উদ্দিন বলেন, বিশেষ এই বিসিএসের সিলেবাস, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্রে সাধারণ বিসিএসের সঙ্গে কিছুটা ভিন্নতা থাকবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে।

৩২তম বিসিএসের পর ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৩তম সাধারণ বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

25 September 2011

Corruption


 Corruption
Everything is perfect coming from the hands of the Creator; everything degenerates in the hands of man. 
– Jean Jacques Rousseau.
 _____________________________________________________________________________________


Corruption is a term widely used in the globe as well as in Bangladesh. It is the most talked factor that impedes our over-all development. It is a complex matter. It is an incurable social malady which hampers our national progress. It is increasingly becoming an enduring pattern of our daily life. Actually it is posing a threat to smooth democratic process.

Corruption is a widespread issue and overused word in Bangladesh. The word ‘corruption’ means performing any work by adopting illegal means. By doing illegitimate act a man breaks laws, destroys morality and possesses a lot of black money. Such a moneyed man is a national enemy in the guise of a good citizen. Corruption normally originates from unsettled problems, incomplete work, weak administration, vicious politics, illegal spying, poverty and above all from many other relevant issues. A corrupt person usually neglects his specified duty to have an undue advantage. Bribery, misuse of power, nepotism, and greed for wealth are the most common forms of corruption.

Corruption influences the lot of a nation. A corrupt man can easily go against the interest of the common mass and country, and blindly runs after making money. He is a traitor as he is busy with personal attainment. A traitor never thinks of betterment of the country and people. He is devoid of conscience. This type of evil man does not hesitate to commit assassination and crimes on a large scale and destroys the future of the country.

The causes of corruption are not far to seek. Temptation for wealth, poverty, limitless demand, political instability, avarice for more power, ambiguity of laws, lack of patriotism, and unemployment are the root cause of corruption. Political instability and poverty compel a man to adopt corruption. Employees in lower positions become corrupt to satisfy their superiors in commanding position, and often they are encouraged and supported by the high officials. Again, some become the victims of circumstances and evidently discover themselves involved in corruption. Honest men derail and deviate themselves from the right path when they are threatened and guided by the corrupt one.

At present corruption is rampant in every sphere of our society especially in basic services like education, public health, and in judiciary, police, taxation, administration and power. Government, semi-government, and non-government office, education sector, law-enforcing agencies and political parties are tremendously involved in corruption. A great amount of money for development work is misappropriated. It affects each and every issue directly and indirectly of the country. Every sphere of development is getting corrupt day by day. It affects business world, political system and finance sectors. It obstructs the normal course of our life. Sustainable development activities lose smoothness.

Corruption begets corruption and smashes the backbone of national economy. It has received our increasing attention in last few decades. Normal governance fails to work smoothly. It can be found in the ancient ages. It is as old as human civilization. It flows through the veins of every immoral people of the world and poisons the entire society. Now it is endemic in almost every country of the world. It is injurious and destructive to public interest. It has broken out in an epidemic form in Bangladesh. Its presence can be felt every nook and corner. It seems that gradually it is becoming impossible for us to distinguish between the fair one and the unfair. Its effect is devastating and negatively far reaching that frustrates our development activities. Bangladesh has been rated the most corrupt country of the globe by the Transparency International. Other surveys including World Bank and ADB also found Bangladesh sinking into acute corruption. Consequently, our country is lagging behind, and countrymen are losing hope.

As a diligent citizen, it is shameful and embarrassing to find one into never-ending corruption. When the political leaders and high officials engage in corruption, they are accountable to an impartial judiciary called Anti-corruption Commission.

Bangladesh government formulated independent Anti-corruption Commission in November 2004. The commission has already started functioning effectively. This has enkindled the light hope for the nation to see the country corruption- free soon. Untidy politicization is also weakening and influencing the commission and, therefore, it is becoming non-functional. Government must be sincere to clarify the filthy elements of corruption from the country. Reformation of Anti-corruption Commission is an important necessity now. However, it is mammoth task for the government to stop corruption alone. So raising awareness and active participation of each and every conscientious citizen from the grass-root level is a must. All should come forward keeping hand in hand in this respect with a view to alleviation corruption.

Alleviation of corruption can show the nation a new dawn of hope. Prosperity will anchor in the shore of the national economy if the country does not inundate with corruption. An all out effort should be made to stop this social malpractice. It is high time every citizen raised voice against corruption and put sincere effort. If it is possible, golden days are not far away, of course.

Julian Assange


সত্যিকারের সবজান্তা

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

মা-বাবা চালাতেন ভ্রাম্যমাণ থিয়েটার। আর তাঁদের যাযাবর জীবনের কারণে ছেলেবেলায় ৩৭টি স্কুলের গণ্ডিতে পা দিতে হয়েছিল জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে।

 উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা নয়, প্রধান সম্পাদক হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন অ্যাসাঞ্জ।
 ১৬ বছর বয়স থেকেই হ্যাকিং বিদ্যায় পারঙ্গম হয়ে ওঠেন তিনি।
 ১৯৯১ সালে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ হ্যাকিংয়ের অপরাধে তল্লাশি চালায় তাঁর বাসগৃহে।
 হ্যাকার অ্যাসাঞ্জের নাম ছিল মেনড্যাক্স।
 অ্যাসাঞ্জের দাবি, এ পর্যন্ত ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন তিনি।
 ২০০৮ সালে ইকোনমিস্ট ইনডেক্স অন সেন্সরশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৯ সালে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পান অ্যাসাঞ্জ।
 অস্ট্রেলিয়ান দৈনিক দ্য এজ অ্যাসাঞ্জকে বিশেষায়িত করেছে ইন্টারনেট মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।
 ব্রিটিশ ম্যাগাজিন নিউ স্টেটসম্যান ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০ ব্যক্তির মধ্যে অ্যাসাঞ্জকেও রেখেছিল। আর একই বছরে পাঠকদের রায়ে অ্যাসাঞ্জ হয়েছিলেন ‘টাইমস পারসন অব দ্য ইয়ার’।
 উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ল্যারি স্যাঙ্গারের মতে, মার্কিনদের শত্রু অ্যাসাঞ্জ।

উইকিলিকসের হাঁড়ির খবর

মশিউল আলম


কেউ বলছে, তিনি চরম নৈরাজ্যবাদী; আবার কেউ বলে, ইন্টারনেট-যুগের বিশ্ববিদ্রোহী। অ্যাসাঞ্জ নিজে বলেন, তিনি চান পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা। তিনি বিশ্বাস করেন, গোপনীয়তাই সব অন্যায়-অবিচার-শোষণ-ধোঁকাবাজির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। গোপনীয়তার সব অর্গল ভেঙে দিয়ে স্বচ্ছ একটা পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। কিন্তু কে এই জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ? আর উইকিলিকসই বা আসলে কী? এবারের মূল রচনায় মিলবে উত্তর।

: হ্যালো!
: বিল কেলার বলছি।
: বিল, এটা অ্যালান। অ্যালান রাসব্রিজার, লন্ডন থেকে।
: কেমন আছ, অ্যালান?
: ভালো, ধন্যবাদ। শোনো, কীভাবে একটু নিরাপদে কথা বলা যায়? খুব গোপনীয় বিষয়।
: কিন্তু আমাদের তো কোনো এনক্রিপটেড ফোনলাইন নেই। বিষয়টা কী?
: কেউ আড়ি পেতে নেই তো?
: থাকলে আর কী করা যাবে? বলে ফেলো।
: আচ্ছা, বলেই ফেলি। খুবই অন্য রকমের একটা প্রস্তাব। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ...
: সেই অস্ট্রেলীয় খামখেয়ালি হ্যাকার?
: হ্যাকার সে ছিল একসময়। কিন্তু এখন আর হ্যাকিং করে না। জানো তো, হুইসব্লোয়ারদের উ ৎসাহিত করছে। উইকিলিকসকে সে বলছে ‘অ্যান্টিসিক্রেসি ওয়েবসাইট’। উইকিলিকসের হোমপেজে গেলে দেখবে মাস্টহেডের নিচে লেখা আছে: ‘হেল্প আজ কিপ গভর্নমেন্টস ওপেন’।
: দেখেছি। ওদের হাতে বেশ কিছু ক্লাসিফাইড ডকুমেন্ট আছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গোপন সব নথিপত্রের সফট কপি।
: যুক্তরাষ্ট্র সরকারের?
: হ্যাঁ। ইরাক আর আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাঠানো নথিপত্র, মোট প্রায় পাঁচ লাখ। এ ছাড়া নাকি আছে মার্কিন কূটনীতিকদের পাঠানো তারবার্তা। পৃথিবীজুড়ে তোমাদের যত দূতাবাস, কনস্যুলেট, কূটনৈতিক মিশন আছে, সব কটি মিশন থেকে পাঠানো গোপনীয় তারবার্তা। আড়াই লাখের বেশি।
: তাই নাকি! অ্যাসাঞ্জ এগুলো পেল কী করে?
: হ্যাকিং করে যে নয়, সেটা নিশ্চিত। জানো তো, মার্কিন সামরিক বাহিনীর পিএফসি ব্র্যাডলি ম্যানিংকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অ্যাসাঞ্জকে নথিগুলো খুব সম্ভব সে-ই দিয়েছে।
: আচ্ছা, এবার তুমি তোমার প্রস্তাবটা বলো দেখি।
: ওরা নথিগুলো আমাদের দিতে চায়; আমাদের সঙ্গে নিয়ে এক ধরনের যৌথ ত ৎপরতায় নামতে চায়। ওরা প্রথমে আমাদের দেবে আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাঠানো নথিগুলো। আমি ভাবছিলাম, কাজটা যদি করিই, এমনভাবে করতে হবে যেন সর্বোচ্চ অভিঘাত সৃষ্টি হয়। আমরা একা করলে ততটা হবে না, তোমরাও যদি যোগ দাও ভালো হয়। তা ছাড়া, এত বিপুল পরিমাণ নথি আমাদের একার পক্ষে যাচাই-বাছাই করাও ভীষণ কঠিন হয়ে যাবে।
: কিন্তু নথিগুলো নকল নয় তো?
: সেটা আমরা একসঙ্গে খতিয়ে দেখব। তুমি আগ্রহী?
: আমি আগ্রহী।
লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে টেলিফোন করেছিলেন দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক অ্যালান রাসব্রিজার। ফোনের অন্য প্রান্তে ছিলেন নিউইয়র্ক টাইমস-এর নির্বাহী সম্পাদক বিল কেলার। গত বছরের জুন মাসের কথা। সে সময় খুব কম লোকই জানত উইকিলিকস কী, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ কে। গার্ডিয়ান-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক দলের নেতা ডেভিড লেইসহ কয়েকজন প্রতিবেদকের সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের যোগাযোগ অবশ্য তার আগে থেকেই। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস-এর কারোর সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের কোনো যোগাযোগ তখনো পর্যন্ত ঘটেনি। অবশ্য তাঁরাও উইকিলিকসের নাম শুনেছিলেন, কারণ ওই বছরের এপ্রিলে ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছিল একটি ভিডিওচিত্র (কোলাটারাল মার্ডার), যেখানে দেখা যায় বাগদাদে মার্কিন সেনাদের একটি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে রয়টারের দুজন সাংবাদিকসহ ১৮ জন নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার বিভীষিকাময় দৃশ্য। তারও আগে, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে উইকিলিকস প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের নেত্রী সারা পেলিনের ইয়াহু অ্যাকাউন্টের সব বার্তা। কেনিয়ায় গণহত্যা সম্পর্কে গোপন দলিল প্রকাশ করার পর ২০০৯ সালে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পায় উইকিলিকস।
তবে অনেক গোপন নথি প্রকাশের পরও উইকিলিকস বা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ তত দিন পর্যন্ত বিশ্ববাসীর কাছে অপরিচিতই ছিলেন, যত দিন না তাঁরা আঘাত হানেন খোদ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মর্মমূলে। সেই কাজটি ঘটে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে উইকিলিকসের সহযোগিতামূলক উদ্যোগের পর। গার্ডিয়ান-এর সম্পাদক অ্যালান রাসব্রিজারের প্রস্তাবে নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদক বিল কেলার যখন সম্মতি জানালেন, নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনে পাঠালেন যুদ্ধসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রতিবেদক ও কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড রিপোর্টিংয়ে সিদ্ধহস্ত প্রতিবেদকদের; জার্মানি থেকে এসে যোগ দিল ডের স্পিগেল পত্রিকার একই রকমের তুখোড় প্রতিবেদকদের একটা বাহিনী। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার কার্যালয়ে তখন শুরু হয়ে গেল খুবই ব্যতিক্রমী, অতি-র‌্যাডিক্যাল এক ধরনের সাংবাদিকতার সঙ্গে প্রথাগত সাংবাদিকতার যৌথ গোপন কর্মযজ্ঞ, পৃথিবীর সাংবাদিকতার ইতিহাসে যেমনটি আর কখনোই ঘটেনি। লন্ডনে গার্ডিয়ান-এর অফিসে পৃথিবীর তিনটি নেতৃত্বস্থানীয় দেশের তিন শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকদের সঙ্গে বসলেন সাংবাদিকতাজগতের ‘এলিয়েন’ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, যিনি বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেছেন গার্ডিয়ান ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার; কারণ, তিনি মনে করেন, পত্রিকা দুটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ক্ষমতার সঙ্গে তাল দিয়ে চলে, জনগণকে আসলে যা জানানো দরকার তা জানায় না; যা জানানো দরকার বলে তারা নিজেরা মনে করে, শুধু তা-ই জানায়। আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাঠানো মার্কিন গোপন দলিলগুলো বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার পেছনে অ্যাসাঞ্জের মিশন ছিল ওই দুটি দেশে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় যুদ্ধ বন্ধ করা। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর জনগণ এবং সারা বিশ্বের মানুষ তথ্যপ্রমাণসহ জেনে যাক আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিনদের নেতৃত্বে ন্যাটো বাহিনী কীভাবে নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে চলেছে। তিনটি পত্রিকাকে তিনি দেন আফগানিস্তানের যুদ্ধ সম্পর্কে ৯২ হাজার গোপন নথি, আর ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কে প্রায় চার লাখ গোপন দলিল।
গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস ও ডের স্পিগেল একযোগে আফগান যুদ্ধ সম্পর্কিত নথিগুলোর ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করে ২০১০ সালের জুলাই মাসে। ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত নথিগুলোর ভিত্তিতে লেখা প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করে অক্টোবরে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে তারা ওই সব নথি থেকে এমন ব্যক্তিদের নাম মুছে ফেলে, নাম প্রকাশের ফলে যাঁদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। প্রথাগত সাংবাদিকতার এই নীতি অ্যাসাঞ্জ তখন মেনে নেন।
তারপর অ্যাসাঞ্জ তাদের দেন দুই লাখ ৫১ হাজার ২৭৮টি মার্কিন গোপন কূটনৈতিক তারবার্তার ফাইলটি। এবার ওই তিন পত্রিকার সঙ্গে যোগ দেয় আরও দুই নামকরা পত্রিকা: ফ্রান্সের লা মঁদ আর স্পেনের আল-পাইস। ২০১০ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে এই পাঁচটি পত্রিকা কূটনৈতিক তারবার্তাগুলোর ভিত্তিতে একযোগে প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করলে বিশ্বজুড়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রবল ঝড় ওঠে। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস, যাকে অ্যাসাঞ্জ নিজে বলতে ভালোবাসেন ‘মিডিয়া ইনসারজেন্সি’ বা বিদ্রোহী যোগাযোগমাধ্যম। ভীষণ ক্ষেপে গেল মার্কিন প্রশাসন: হিলারি ক্লিনটন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বললেন ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক জীবিত ব্যক্তি’। সারা পেলিন বললেন, অ্যাসাঞ্জকে আল-কায়েদা জঙ্গিদের মতো ধাওয়া করে হত্যা করা উচিত। প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ অন্যরা বলতে শুরু করলেন, গুপ্তচরবৃত্তি আইন ব্যবহার করে অ্যাসাঞ্জের বিচার করা হবে, যার অধীনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এর মধ্যে অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে জারি হয়ে গেল ইন্টারপোলের হুলিয়া: ওই বছরের আগস্ট মাসে সুইডেনে দুই নারীর সঙ্গে যৌন অসদাচরণ করার অভিযোগ উঠেছিল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ‘অভিযোগ গুরুতর নয়’ বলে মামলা দুটো নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল; সেই দুই মৃত মামলাকে প্রবল তেজি করে বাঁচিয়ে তোলা হলো। অ্যাসাঞ্জ তখন লন্ডনে ফেরারি; মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে একদিন পুলিশের কাছে গেলেন তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জবাব দিতে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়ে দিল। অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের মামলা উঠল লন্ডনের এক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে; বিখ্যাত সাংবাদিক জন পিলজারসহ নামকরা কিছু ব্যক্তি অ্যাসাঞ্জের জামিনদার হতে চাইলেও ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর জামিন মঞ্জুর করলেন না এই বলে যে অ্যাসাঞ্জের পালিয়ে গিয়ে লাপাত্তা হওয়ার সামর্থ্য আছে। পরবর্তী শুনানিতে ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে বিশেষ কিছু শর্তে মুক্তি দিলেন: লন্ডন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে এক বন্ধুর বাড়িতে গৃহবন্দির জীবন কাটাতে হবে তাঁকে। পায়ে বাঁধা থাকবে ইলেকট্রনিক ট্যাগ—কখন কোথায় যাচ্ছেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষ সব জানতে পারবে। বাড়ির বাইরে চব্বিশ ঘণ্টা চালু থাকবে শক্তিশালী ক্যামেরা। তাঁকে প্রতিদিন একবার কাছের পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করে আসতে হবে। এ বছরের জুলাই মাসে অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণ মামলা উঠল হাইকোর্টে; প্রথম দফায় শুনানিতে কিছুরই নিষ্পত্তি হয়নি। তবে অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনে যেতে হবে, এখন পর্যন্ত এ সম্ভাবনাই প্রবল। হাইকোর্টে হেরে গেলে অ্যাসাঞ্জ আপিল করবেন ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্টে। আইনি লড়াইটা তিনি লড়ে যাবেন একদম শেষ পর্যন্ত। কারণ, সুইডেনে গেলেই যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে সেখান থেকে পাকড়াও করে নিয়ে যাবে: এসপিওনেজ অ্যাক্টের আওতায় বিচার করে পাঠাবে ফায়ারিং স্কোয়াডে। অ্যাসাঞ্জ শহীদ হতে চান না: যারা তাঁকে বলছে ‘সাইবার শহীদ’, তিনি তাদের বলছেন, ‘এখনো শহীদ হইনি। শহীদ হওয়ার কথাটা সরিয়ে রাখুন আপাতত।’

কে এই অ্যাসাঞ্জ?
ম্যাগনেটিক আইল্যান্ডে টম সয়ার
১৯৭১ সালের জুলাই মাস, বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছেন, একটা বর্বর সামরিক সরকার ও তার নৃশংস সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে, তখন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট শহর টাউন্সভিলে জন্ম হলো আরেক যোদ্ধার, যিনি প্রায় চার দশক পর আঘাত হানবেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর, সবচেয়ে অমানবিক ও প্রতারক রাষ্ট্রশক্তির নিরাপত্তাব্যবস্থার মর্মমূলে: শুরু করবেন ‘প্রথম সাইবার বিশ্বযুদ্ধ’। মা-বাবা এক ভ্রাম্যমাণ থিয়েটার চালাতেন, তাই শৈশব থেকেই যাযাবরের জীবন। তাঁর বয়স যখন আট, তখন মা-বাবার ছাড়াছাড়ি; মা বিয়ে করলেন এক সংগীতশিল্পীকে, যিনি আবার এক গুপ্ত কাল্ট পরিবারের সদস্য, যারা শিশুদের চুরি করে এনে কাল্টভুক্ত করে। সেখানে এক ছোট ভাইয়ের জন্ম হলো, কিন্তু স ৎবাবা হয়ে উঠলেন নিপীড়ক। দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পালালেন মা ক্রিস্টিন ক্লেয়ার। জুলিয়ানের বয়স তখন এগারো। স ৎবাবা পিছু নিলেন; ছোট ভাইটিকে কেড়ে নিতে চান তিনি। পাঁচ বছর ধরে চলল আইনি লড়াই, সেই সঙ্গে মা ক্রিস্টিনকে ধাওয়া করে চলল অপহরণের আতঙ্ক। পাঁচ বছরে মোট ৩৭ বার তাঁকে থাকার জায়গা বদল করতে হয়েছে। ম্যাগনেটিক আইল্যান্ড নামের এক ছোট্ট দ্বীপে কেটেছে জুলিয়ানের শৈশবের কয়েকটি বছর। সেখানে তাঁর একটি ঘোড়া ছিল; ঘোড়ায় চড়ে দাপিয়ে বেড়াতেন সারা দ্বীপ। নিজের হাতে ভেলা বানিয়ে মাছ ধরতে যেতেন সমুদ্রে; সাঁতার কাটতেন, রোদে পুড়তেন, বৃষ্টিতে ভিজতেন। জুলিয়ান এখন বলেন, ‘আমার ছেলেবেলা ছিল টম সয়ারের ছেলেবেলা।’
লেখাপড়া? বাড়িতে মায়ের কাছে হাতেখড়ি। মা তাঁকে স্কুলে দেননি। মা মনে করতেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের কৌতূহলী মনটাকে মেরে ফেলে, আর কর্তৃপক্ষের প্রতি অতিরিক্ত অনুগত করে তোলে। মা নিজেও স্কুল-পালানো মেয়ে; ১৭ বছর বয়সে ক্লাসের বইপত্রে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মোটরসাইকেল নিয়ে। কিশোর অ্যাসাঞ্জকে তিনি পড়ে শোনাতেন চিরায়ত গ্রিক সাহিত্য: এস্কাইলাস, ইউরিপিডিস, সফোক্লিসের নাটক। বড় হয়ে অ্যাসাঞ্জ মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও পদার্থবিদ্যা পড়েছেন কিছুদিন, কিন্তু কোর্স শেষ করেননি। বিশেষত, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র-শিক্ষকদের কারবার দেখে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। ইরাকের মরুভূমিতে মার্কিন বাহিনীর ট্যাংক বালুর মধ্যে কী করে আরও দ্রুত চলতে পারে, সেই গবেষণায় লিপ্ত ছিলেন তাঁরা। অ্যাসাঞ্জ প্রচুর পড়েন, দর্শন থেকে শুরু করে নিওরোসায়েন্স পর্যন্ত, অনেক বিষয়ে তাঁর আগ্রহ। জর্জ অরওয়েলের উপন্যাস পড়ে তিনি টোটালিটারিয়ান রাষ্ট্রের স্বরূপ চিনতে পেরেছেন; অরওয়েলের ভক্ত তিনি। বুখারিনের গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ডের কাহিনি অবলম্বনে লেখা আর্থার কোয়েসলারের ডার্কনেস অ্যাট নুন তাঁর অন্যতম প্রিয় উপন্যাস। আলেকসান্দর সোলঝেনি ৎসিনের ফ্যার্স্ট সার্কেল পড়ে অ্যাসাঞ্জ ২০০৬ সালে মন্তব্য লিখেছেন: ‘ঠিক আমার নিজের জীবনের অ্যাডভেঞ্চারগুলোর মতো!’

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
বচনামৃত
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই দাঁড়িয়ে থাকে পাহাড়সমান গোপন তথ্যের ওপর

উইকিলিকসের ইতিহাসে, কেউ এই দাবি করেনি যে আমাদের ফাঁস করা তথ্যগুলো ভুয়া

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য গোপন রাখতে চায়, কারণ তারা প্রায়শই আইন অথবা সদাচরণের বিধি ভঙ্গ করে

তথ্য ফাঁস করতে না দেওয়া সেন্সরশিপেরই নতুন এক কায়দা

সঠিক তথ্য উত্তম

ভালো সাংবাদিকতার স্বভাবই এমন যে তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক হবেই।

আমি বলতে চাই, সত্যের ওপর সবচেয়ে বড় আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাবলয়েড সাংবাদিকতা

উইকিলিকস ও বাংলাদেশ
উইকিলিকসের প্রকাশ করা আড়াই লাখের বেশি মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তার মধ্যে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো তারবার্তার সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। ১৯৮৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে তারবার্তাগুলো। অবশ্য ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের মধ্যে তারবার্তা আছে মাত্র পাঁচটি। বেশির ভাগ তারবার্তা ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পাঠানো। অধিকাংশ তারবার্তাই ‘আনক্ল্যাসিফাইড’; খুব অল্পসংখ্যক আছে ‘সিক্রেট’ শ্রেণীর আর বাকিগুলো ‘কনফিডেনশিয়াল’ শ্রেণীর।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন কূটনীতিকেরা তাঁদের তারবার্তাগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতিক, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের সম্পর্কে যা কিছু লিখেছেন, তার সবই কি সত্য?
সেটা বিচার করার উপায় আমাদের হাতে নেই। যাঁদের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে কূটনীতিকেরা তারবার্তাগুলো লিখেছেন, তাঁরা জানেন কতটা সত্য, কতটা সত্য নয়। তবে আমাদের রাজনীতিকেরা অনেক কিছুই অস্বীকার করেন। কূটনীতিকেরা তাঁদের সদর দপ্তরকে প্রকৃত পরিস্থিতি জানানোরই চেষ্টা করেন, ভিত্তিহীন কথা তাঁরা লিখবেন কী যুক্তিতে, তা বোঝা কঠিন। তাঁদের কিছু কিছু মন্তব্য সঠিক নাও হতে পারে, কিন্তু যেসব তথ্য তাঁরা দিয়েছেন, সেগুলো ভিত্তিহীন—এমনটা মনে হয় না।
কম্পিউটার হ্যাকার ও তারপর
মায়ের সঙ্গে যাযাবর জীবনের এক পর্যায়ে এক জায়গায় তাঁরা একটি বাসায় থাকতেন; বাসাটির বিপরীত দিকে ছিল একটি ইলেকট্রনিকসের দোকান। কিশোর জুলিয়ান সেখানে গিয়ে কমোডর ৬৪ কম্পিউটারের বোতাম চাপাচাপি করতেন।
তারপর একটা সময় মা তাঁকে একটি কম্পিউটার কিনে দিলেন; জুলিয়ান অচিরেই এমন দক্ষ হয়ে উঠলেন, বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রামের গোপন পাসওয়ার্ড ভেঙে লুকোনো সব তথ্য পড়ে ফেলতে পারতেন।
১৯৮৭ সালে, যখন তাঁর বয়স ১৬, তখন তিনি হাতে পেলেন একটি মডেম, সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত কম্পিউটারটিকে পরিণত করলেন একটি পোর্টালে; ওয়েবসাইটের চল তখনো শুরু হয়নি, কিন্তু কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও টেলিকম সিস্টেমগুলো পরস্পর সংযুক্ত হয়েছিল। আর গোপন একটা ইলেকট্রনিক ভুবন ছিল, যেখানে জুলিয়ানের মতো ক্ষিপ্র বুদ্ধিসম্পন্ন কিশোরেরা ঢুকে পড়তে পারত।
তিনি তত দিনে মেলবোর্নে চলে এসেছেন, সেখানকার ‘কম্পিউটার গিক’দের মধ্যে অচিরেই তাঁর এমন খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি ইউরোপ-আমেরিকার সবচেয়ে সুরক্ষিত কম্পিউটার নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যেও ঢুকে পড়তে পারেন। এ সময় তিনি দুজন হ্যাকারের সঙ্গে মিলে ‘ইন্টারন্যাশনাল সাবভারসিভস’ নামে একটি গ্রুপ গঠন করেন। কানাডার টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি নরটেলসহ ২৪টি প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষিত কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে একদিন অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ হানা দিল তাঁর মেলবোর্নের বাসায়। ধরে নিয়ে গেল তাঁকে: অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে ১০ বছরের কারাবাস নিশ্চিত। তিনি অভিযোগ মেনে নিয়ে ভুল স্বীকার করলেন, আর কখনো এমন কাজ করবেন না বলে অঙ্গীকার করে কয়েক হাজার ডলার জরিমানা দিয়ে মুক্তি পেলেন।
জুলিয়ান তারপর শুরু করলেন সবার জন্য বিনা খরচে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার তৈরির কাজ। তিনি বিশ্বাস করেন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ মানবসভ্যতার অভিন্ন অর্জন, বাণিজ্যিক স্বার্থে তা কুক্ষিগত করে রাখা অনৈতিক। মানবাধিকারকর্মীদের নিখরচায় ব্যবহারের জন্য তিনি তৈরি করে দিলেন কিছু মূল্যবান সফটওয়্যার।

ফাঁসের সালতামামি
২০০৭ সালের নভেম্বরে তারা প্রকাশ করে কিউবার গুয়ানতামো বেতে মার্কিন কারাগারে বন্দীদের সঙ্গে জেনেভা কনভেনশন-বিরোধী অমানবিক আচরণের বর্ণনাসংবলিত দলিলপত্র: গুয়ানতানামো বে হ্যান্ডবুক। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডের অন্যতম বৃহ ৎ ব্যাংক জুলিয়াস বায়েরের কেইম্যান্ড আইল্যান্ড শাখা থেকে পাওয়া কয়েক শ গোপন নথি, যা থেকে প্রমাণ মেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বৈরশাসক ও রাজনীতিকদের একটা বড় অংশ কীভাবে নিজ নিজ দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বাইরে পাচার করেছেন। একই বছরে তারা প্রকাশ করে আরও অনেক গোপন নথি, যেমন সায়েনটোলজি হ্যান্ডবুক (একটি ধর্মীয় কাল্টের অভ্যন্তরে গোপন অনাচারের বিবরণ), আমেরিকান ফ্র্যাটারনিটি হ্যান্ডবুক, কেনিয়ার দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক ড্যানিয়েল আরাপ মোই-এর দুর্নীতিসংক্রান্ত দলিলপত্র, দেশটিতে সংঘটিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশের গোপন প্রতিবেদন, সারা পেলিনের ইয়াহু মেইল অ্যাকাউন্টের বার্তা, ব্রিটেনের অতি-উগ্রপন্থী জাতীয়তাবাদী দল ব্রিটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির সদস্যদের নামের একটি গোপন তালিকা, মার্কিন কংগ্রেসের গবেষণা সার্ভিসের প্রায় সাত হাজার গোপন প্রতিবেদন, আইসল্যান্ডের কাউপটিং ব্যাংকের মালিকেরা ও তাঁদের নিকটজনেরা মিলে ব্যাংকটি থেকে বিনা মর্টগেজে বা খুবই সামান্য মর্টগেজে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে শোধ না করায় ব্যাংকটিতে লালবাতি জ্বলে ওঠা সম্পর্কে গোপন নথিপত্র, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার সময়কার পেজার বার্তা, জার্মানির এক শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি কীভাবে চিকি ৎসকদের ঘুষ-উপঢৌকন দিয়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে নিজেদের তৈরি ওষুধ প্রেসক্রাইব করার চর্চা করে, সে সম্পর্কে এক গোপন তদন্ত প্রতিবেদন, এ ছাড়া আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধ সম্পর্কে গোপন নথিপত্র আর মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন তারবার্তা।

উইকিলিকসের অভ্যুদয়
২০০৬ সালের ডিসেম্বরে অ্যাসাঞ্জ চালু করলেন উইকিলিকস। নামেই পরিচয়: গোপন তথ্য ফাঁস করাই তার প্রধান কাজ। সব গোপন তথ্য? ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও থাকবে না? না, তা নয়। অ্যাসাঞ্জ বলেন, স্বচ্ছ (ট্রান্সপারেন্ট) হতে হবে রাষ্ট্রকে, প্রতিষ্ঠানকে। ব্যক্তির একান্ত গোপনীয় বিষয় নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। তিনি প্রাইভেসি ভাঙার কথা বলেন না। কিন্তু যেসব ব্যক্তি এমন পদে থাকেন, যাঁদের হাতে এমন ক্ষমতা থাকে, যা বিপুলসংখ্যক মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের কাজকর্মে কোনো গোপনীয়তা থাকতে পারবে না।
অ্যাসাঞ্জ মনে করেন, সব সরকার ও ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান মিথ্যা বলে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে। সরকারমাত্রই ষড়যন্ত্রপ্রবণ। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে গোপনীয়তা। গোপনীয়তা ভেঙে দিতে পারলেই ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করা সম্ভব। এ রকম ভাবনা বা দর্শন থেকেই তিনি চালু করেন উইকিলিকস। ‘কন্সপিরেসি অ্যাজ গভর্নেন্স’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন অ্যাসাঞ্জ, সেটাকে বলা হয় উইকিলিকসের ইশতেহার। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা যদি নিষ্ক্রিয়ভাবে অন্যায়-অবিচার দেখে যাই, কিছুই না করি, তবে আমাদের অবস্থা দাঁড়ায় সে অন্যায়ের পক্ষে। নিষ্ক্রিয়ভাবে অন্যায়-অবিচার দেখতে দেখতে আমরা দাসে পরিণত হই। অধিকাংশ অন্যায়-অবিচার ঘটে খারাপ শাসনব্যবস্থার কারণে; শাসনব্যবস্থা ভালো হলে অন্যায়-অবিচার কমে যায়।...আমাদের এমন কিছু করতে হবে যেন খারাপ শাসনব্যবস্থার জায়গায় ভালো কিছু আসে।’
চালু হওয়ার এক মাস পরেই, মানে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে উইকিলিকস ঘোষণা দেয়, তাদের হাতে প্রায় ১২ লাখ গোপন নথি আছে, সেগুলো তারা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে, বোঝার চেষ্টা করছে কোনটার গুরুত্ব কী। ধীরে ধীরে তারা সেগুলো ইন্টারনেটে ছাড়বে। প্রায় এগারো মাস ধরে তারা নথিগুলো নিয়ে কাজ করে। উইকিলিকসের কোনো অফিস নেই, স্থায়ী কর্মী বলে কিছু নেই। কেউ উইকিলিকসে চাকরি করে না। মোটামুটি স্থায়ী চারজনের মধ্যে দুজন কম্পিউটার টেকিনিশিয়ান আর দুজন আর্কিটেক্ট, মানে ওয়েবসাইটের ডিজাইনার। ওঁরা খুবই কম টাকা নেন।
অ্যাসাঞ্জ বলেন, তাঁর সঙ্গে কাজ করেন কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবক, তাঁরা কাজের বিনিময়ে কোনো টাকা-পয়সা নেন না। অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে তাঁদের কখনো মুখোমুখি দেখাও হয়নি। তাঁদের যোগাযোগ হয় ইন্টারনেটের এনক্রিপটেড লাইনের চ্যাটরুমে। অ্যাসাঞ্জ তাঁদের নির্দিষ্ট কিছু কাজ দেন, তাঁরা সেগুলো করে ইন্টারনেটেই অ্যাসাঞ্জকে পাঠিয়ে দেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, হল্যান্ড, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যাসাঞ্জের অনেক বন্ধুবান্ধব আছেন, যাঁদের কেউ আইনজীবী, কেউ ব্যাংকার, কেউ মানবাধিকারকর্মী, কেউ ইন্টারনেট অ্যাকটিভিস্ট।

ড্যানিয়েল ডমশাইট-বার্গের আসা ও যাওয়া
২০০৭ সালের ডিসেম্বরে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে যোগ দেন জার্মানির এক তুখোড় কম্পিউটারবিজ্ঞানী। তাঁর নাম ড্যানিয়েল ডমশাইট-বার্গ। উইকিলিকসের ইশতেহার ও অন্যান্য লেখালেখি পড়ে তাঁর মনে হয়েছে, তিনি যে স্বপ্ন দেখেন—পৃথিবীকে মানুষের জন্য আরেকটু বাসযোগ্য করা, অন্যায়-অবিচার কমিয়ে আনা, সরকারগুলোকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দায়িত্বশীল করা—উইকিলিকস সেই কাজেই নেমেছে।
ড্যানিয়েল একটা ভালো চাকরি করতেন। এক সময় সেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে উইকিলিকসের সার্বক্ষণিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। উইকিলিকসকে সুসংগঠিত করার কাজে অ্যাসাঞ্জকে বেশ সহযোগিতা করেন ড্যানিয়েল। জার্মানি, সুইডেন, আইসল্যান্ডসহ অনেক দেশে অ্যাসাঞ্জের বক্তৃতার আয়োজন করেন, টিভিতে সাক্ষা ৎকারের ব্যবস্থা করেন। আইসল্যান্ডে সংবাদমাধ্যমে অবাধ স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে—এ রকম একটি আইন সে দেশের পার্লামেন্টে তোলার ব্যাপারে তিনি বড় ভূমিকা পালন করেন। আইসল্যান্ডের একজন সাংসদসহ বিপ্লবী চিন্তাভাবনার মানুষ উইকিলিকসের কাজের সঙ্গে জড়িত হন।
বাগদাদে মার্কিন হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে ১৮ জন নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করার ভিডিও ফুটেজটি উইকিলিকস পেয়েছিল এনক্রিপটেড অবস্থায়, সেটা ডিক্রিপ্ট করে কোলাটারাল মার্ডার নামে প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরির কাজটা খুব গোপনে করা হয় আইসল্যান্ডের রেকইয়াভিক শহরে। অ্যাসাঞ্জের আইসল্যান্ডের বন্ধু-সমর্থকেরা সেই কাজে তাঁকে খুবই সহযোগিতা করেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ড্যানিয়েল ডমশাইট-বার্গের সঙ্গে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বন্ধুত্বটা টেকেনি। ড্যানিয়েলের অভিযোগ: ব্যক্তিত্বের সংঘাত বেধে গিয়েছিল; জুলিয়ান খুব কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠেছিলেন, শেষের দিকে ড্যানিয়েলকে সহ্যই করতে পারতেন না। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে জুলিয়ান উইকিলিকসের গোপন চ্যাটরুমে ড্যানিয়েলকে লেখেন: ‘ইউ আর সাসপেনডেড!’ ১৫ সেপ্টেম্বর ড্যানিয়েল উইকিলিকস থেকে বের হয়ে যান। দুই দিন পরেই তিনি ‘ওপেনলিকস ডট ওআরজি’ নামে একটি নতুন ওয়েবসাইট নিবন্ধন করেন। জুলিয়ানের সঙ্গে উইকিলিকসে কাজ করার সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছেন তিনি। ইনসাইড উইকিলিকস: মাই টাইম উইথ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অ্যাট দ্য ওয়ার্ল্ডস মোস্ট ডেঞ্জারাস ওয়েবসাইট নামের ওই বইয়ে জুলিয়ানের সঙ্গে তাঁর পরিচয়, বন্ধুত্ব, একসঙ্গে মিলে অনেক কাজ, অনেক পরিকল্পনা, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, বিচ্ছেদের বিবরণসহ আরও অনেক তথ্য আছে।

নিজেই যখন ‘লিকে’র শিকার
গত বছর অ্যাসাঞ্জ যখন গার্ডিয়ানসহ পাঁচটি পত্রিকার সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তাগুলো বেছে বেছে প্রকাশ করেন, তখন মূলধারার ওই সংবাদপত্রগুলোর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল সব তারবার্তা যেমন আছে তেমন, মানে অসম্পাদিত অবস্থায় উইকিলিকস প্রকাশ করবে না। কারণ, সেসব গোপন তারবার্তায় সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অনেক মানুষের নাম-পরিচয় লেখা আছে, যাঁরা মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন, নানা রকমের তথ্য দিয়েছেন, বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।
এসব মানুষের মধ্যে আছেন অনেক মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক, ছাত্র, সাংবাদিক, রাজনীতিক, বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এবং অনেক সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরাকে অনেক সাধারণ মানুষের সঙ্গে মার্কিনদের কথা হয়েছে। তারবার্তাগুলোতে তাঁদের নাম আছে। এই লোকগুলোর নাম-পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়লে তাঁরা বিপদে পড়তে পারেন।
তাই, প্রথাগত সাংবাদিকতার নীতি অনুসারে, তারবার্তাগুলো প্রকাশ করার কথা তাঁদের নাম-পরিচয় মুছে দিয়ে। গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমসসহ পাঁচটি পত্রিকা সেটাই করে আসছিল। কিন্তু গত মাসের শেষে সবগুলো কূটনৈতিক তারবার্তা অবিকল, অসম্পাদিত অবস্থায় (আনরিড্যাক্টেড) ইন্টারনেটে প্রকাশ হয়ে পড়ে। গার্ডিয়ানসহ পাঁচটি পত্রিকা একসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে অ্যাসাঞ্জের নিন্দা জানিয়ে বলল, অ্যাসাঞ্জ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন, তিনি খুবই দায়িত্বহীনের মতো কাজ করেছেন।
অ্যাসাঞ্জ বললেন, পুরো ফাইলটি তিনি নিজে ইন্টারনেটে প্রকাশ করেননি; গার্ডিয়ান-এর সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি তাঁদের একটি পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন; গার্ডিয়ান-এর অনুসন্ধানী সম্পাদক ডেভিড লেই আর প্রতিবেদক লুক হার্ডিং উইকিলিকসকে নিয়ে যে বইটি প্রকাশ করেছেন, তাতে তাঁরা সেই পাসওয়ার্ডটি ছাপিয়ে দিয়েছেন। সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই কেউ একজন পুরো ফাইলটা উইকিলিকসের সার্ভার থেকে ডাউনলোড করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে। দোষ উইকিলিকসের নয়, গার্ডিয়ান-এর ওই দুই সাংবাদিকের। ডেভিড লেই বললেন, অ্যাসাঞ্জের দেওয়া পাসওয়ার্ডটি তাঁরা তাঁদের বইতে ছেপেছেন, কারণ অ্যাসাঞ্জ নাকি তাঁদের ওই পাসওয়ার্ড দিয়ে বলেছিলেন, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাসওয়ার্ডটি বদলে ফেলা হবে। অবশ্য এখন উইকিলিকসের ওয়েবসাইটেই তারবার্তাগুলো অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশে আমরাও সেগুলো নামাচ্ছি উইকিলিকস থেকে। অ্যাসাঞ্জ যখন দেখলেন, ফাইলটা ফাঁস হয়েই গেছে, তখন তিনি ওটা নিজেদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করলেন।

উইকিলিকস চলে কীভাবে
ভক্ত-সমর্থকদের চাঁদার টাকায় চলে উইকিলিকস। প্রথম দিকে, যখন ওয়েবসাইটটির তেমন পরিচিতি ছিল না, তখন তাদের অর্থসংকট ছিল প্রকট। পুরোনো কম্পিউটার, পুরোনো সার্ভার দিয়ে চলেছে অনেক দিন। একবার তো নতুন হার্ডওয়্যার কেনার টাকার অভাবে উইকিলিকসকে অফলাইনে চলে যেতে হয়েছিল। তখন তাঁরা সমর্থকদের উদ্দেশে ইন্টারনেটে এই বার্তা পাঠায়: ‘উইকিলিকসকে চালু রাখতে হলে নতুন হার্ডওয়্যার কিনতে হবে, আমাদের হাতে টাকা নেই। আপনারা যদি চান উইকিলিকস চালু থাকুক, তাহলে সহযোগিতা করুন।’
ইন্টারনেটের মাধ্যমে চাঁদা সংগ্রহ করে উইকিলিকস। পেপল নামের একটি ইন্টারনেট অর্থ লেনদেন সার্ভিসে উইকিলিকসের তিনটি অ্যাকাউন্ট ছিল। যখনই কোনো চাঞ্চল্যকর গোপন তথ্য উইকিলিকস প্রকাশ করেছে, তার পরপরই তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা আসতে শুরু করেছে। যেমন, ড্যানিয়েল ডমশাইট-বার্গের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ১ মার্চ তাঁদের পেপলের প্রধান অ্যাকাউন্টে ছিল মাত্র এক হাজার ৯০০ ইউরো। জুলিয়াস বায়ের ব্যাংকের গোপন নথি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চাঁদা আসতে শুরু করে, দুই দিনের মধ্যে তহবিলের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৭০০ ইউরো, আর ১১ মার্চ তা ওঠে পাঁচ হাজার ইউরোতে। ২০০৯ সালের আগস্টে উইকিলিকসের অ্যাকাউন্টে জমা হয় ৩৫ হাজার ইউরো।
২০১০ সালের জুলাই থেকে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের নথিপত্র প্রকাশের পর থেকে তাদের অ্যাকাউন্টে চাঁদা আরও অনেক বেড়ে ওঠে। আর সে বছরের নভেম্বরে মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তার প্রকাশ শুরু করলে পেপল, আমাজন ইত্যাদি ইন্টারনেট সেবাদান কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের চাপে উইকিলিকসের সঙ্গে সব আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দেয়। সমর্থকদের টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। ভীষণ আর্থিক সংকটে পড়ে যায় উইকিলিকস। উপরন্তু অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে প্রবল হয়ে ওঠে সুইডেনের প্রত্যর্পণ মামলা; এর ব্যয় মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে অ্যাসাঞ্জের পক্ষে। তবে তাঁর সৌভাগ্য যে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকজন বড় আইনজীবী খুবই কম খরচে তাঁর পক্ষে মামলা লড়েছেন। অর্থসংকটে পড়ে কদিন আগে অ্যাসাঞ্জ তহবিল সংগ্রহের জন্য কিছু জিনিস নিলামে বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন: তাঁর স্বাক্ষর করা ও আঙুলের ছাপ দেওয়া একটি ছবির দর উঠেছে ৯০০ মার্কিন ডলার, এ ছাড়া লন্ডনের কারাগারে তাঁর ব্যবহূত একটি কফির মগসহ আটটি আইটেম তিনি নিলামে বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
কেউ কেউ জানতে চান, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমসসহ যে পাঁচটি পত্রিকাকে অ্যাসাঞ্জ গোপন নথিপত্র দিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে টাকা নেননি? সেরকম প্রশ্নই আসে না। কারণ, প্রথমত, গোপন নথিপত্র অ্যাসাঞ্জ বা উইকিলিকস নিজে সংগ্রহ করেনি, সেগুলো তাদের সম্পত্তি নয়। ওগুলো তারা পেয়েছে অজানা উ ৎস থেকে, কোনো হুইসেলব্লোয়ার (সন্দেহ করা হয়, মার্কিন তরুণ সেনা ব্র্যাডলি ম্যানিং) সেগুলো উইকিলিকসে আপলোড করেছে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে। উইকিলিকসে এমন ব্যবস্থা আছে, যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো ধরনের নথিপত্র আপলোড করতে পারে, উইকিলিকস তাদের নাম-ধাম বা ই-মেইল-ঠিকানা কিছুই জানতে চায় না।
দ্বিতীয়ত, অ্যাসাঞ্জ মনে করেন, গোপনীয়তা ভাঙার যে মিশনে তিনি নেমেছেন, সেটা কোনো বাণিজ্যিক উদ্যোগ নয়, এখানে টাকা-পয়সার কোনো ব্যাপারই নেই। যেসব হুইসেলব্লোয়ার উইকিলিকসকে গোপন নথিপত্র দেয়, তারাও সেসবের বিনিময়ে কোনো টাকা দাবি করে না। অ্যাসাঞ্জ মনে করেন, উইকিলিকস একটি বিশেষ ধরনের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, যা কিছু সে প্রকাশ করে, সবই বিশ্বের সব মানুষের জন্য বিনা মূল্যে ব্যবহারযোগ্য।

সুইডিশ বিড়ম্বনা
মেয়েদের ব্যাপারে অ্যাসাঞ্জের বেশ আগ্রহ। মেয়েরাও তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে সুইডেনে এক সেমিনারে গিয়ে দুই যুবতীর সঙ্গে অ্যাসাঞ্জের আলাদাভাবে শারীরিক সম্পর্ক ঘটে।
দুই যুবতী পরস্পরের সঙ্গে সদ্য পরিচিত হয়েছেন, তাঁরা টেলিফোনে আলাপের একপর্যায়ে জেনে ফেলেন, অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দুজনেরই শারীরিক সংস্রব ঘটেছে। তাঁরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। দুই যুবতী যখন জেনে গেলেন অ্যাসাঞ্জ বহুগামী (যেমন তাঁরা নিজেরাও), এবং তাঁর সঙ্গে তাঁদের হয়েছে অনিরাপদ দৈহিক সংসর্গ, তখন তাঁরা স্বাস্থ্যগত উদ্বেগ বোধ করলেন। তাঁরা অ্যাসাঞ্জকে টেলিফোনে বললেন, ‘ক্লিনিকে চলো, তোমার রক্ত পরীক্ষা করতে হবে; আমাদের জানা দরকার, তোমার কোনো এসটিডি (সেকচুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিস—যৌনসংসর্গের মাধ্যমে বাহিত রোগ) আছে কি না।’
অ্যাসাঞ্জ এমনিতেই গোপনচারী স্বভাবের মানুষ, তার ওপর ‘আফগান ওয়ার ডায়েরি’ আর ‘ইরাক ওয়ার ডায়েরি’ প্রকাশ করার পর থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টরা তাঁর পিছু লেগেছেন। তিনি কি সুইডেনের একটা ক্লিনিকে গিয়ে পরীক্ষার জন্য রক্ত দিতে পারেন? এতই নির্বোধ? তিনি এক ডজন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, সবগুলোর সিমকার্ড কেনা হয় রাস্তা থেকে—অনিবন্ধিত। মোবাইল ফোনগুলো সব সময় বন্ধ করে রাখেন। শুধু তা-ই নয়, কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের সাহায্যে কেউ যেন তাঁর অবস্থান নির্ণয় করতে না পারে, সে জন্য তিনি মোবাইল ফোনের ব্যাটারিও খুলে রাখেন। যখন কাউকে ফোন করার প্রয়োজন হয়, কেবল তখনই একটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তিনি হোটেলে ওঠেন না, বন্ধুদের বাসায় ঘুমান; ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন না, খুচরো টাকা পকেটে রাখেন; অনেক সময় বন্ধু-সমর্থকদের ওপর নির্ভর করেন।
তো, এ রকম একজন মানুষকে যখন ওই দুই যুবতী বললেন, ক্লিনিকে চলো, তখন অ্যাসাঞ্জ লাপাত্তা হয়ে গেলেন। যুবতীরা আর তাঁকে খুঁজেই পেলেন না; শঙ্কিত হয়ে তাঁরা গেলেন স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে পরামর্শ করতে। সেখানে যে মহিলা পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁদের আলাপ হলো, তিনি এমনই নারীবাদী যে তাঁকে পুরুষবিদ্বেষী বললেও অন্যায় হয় না। তিনি দুই যুবতীর সব কথা শুনে বললেন, ‘তোমরা ধর্ষণের মামলা করো।’ ব্যস, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে নথিভুক্ত হলো ধর্ষণের মামলা। জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে অ্যাসাঞ্জ সুইডিশ পুলিশের কাছে গেলেন। ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বৃত্তান্ত শুনে বললেন, অভিযোগ গুরুতর নয়। মামলা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ল। কিন্তু মাস তিনেক পর, ২৮ নভেম্বর থেকে যখন মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তাগুলোর প্রকাশ শুরু হলো, তখন অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে সেই মামলা পুনরুজ্জীবিত করা হলো; অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল সুইডিশ পুলিশ; কিন্তু অ্যাসাঞ্জ তত দিনে সুইডেনে নেই, চলে গেছেন লন্ডন। ইন্টারপোলকে দিয়ে সুইডিশ পুলিশ ইউরোপিয়ান অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করাল। অ্যাসাঞ্জ নিরুদ্দেশ হলেন। ডিসেম্বরের ৭ তারিখে লন্ডন পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁকে আটক করে হাজতে পাঠানো হলো। তার পরের ঘটনা আগেই বলা হয়েছে।

অ্যাসাঞ্জের পরিণতি কী?
সুইডেনে প্রত্যর্পণ মামলায় অ্যাসেঞ্জ হেরে গেলে তাঁকে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে লন্ডন থেকে স্টকহোমে যেতে হবে। সেখানে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে তাঁর বছর দুয়েক কারাদণ্ড হতে পারে।
কিন্তু অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের বড় উদ্বেগ হলো, এ মামলার উদ্দেশ্য তথাকথিত ধর্ষণের বিচার করা নয়। যুক্তরাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি আইনের আওতায় অভিযোগ গঠনের চেষ্টা করবে। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অ্যাসাঞ্জকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দণ্ড দেওয়া খুব কঠিন, প্রায় অসম্ভব। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে বলা আছে, কোনো কিছু প্রকাশের দায়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না; অ্যাসাঞ্জ গোপন নথিগুলো প্রকাশ করেছেন মাত্র, গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে সেগুলো তিনি হস্তগত করেননি। তাঁকে দণ্ড দিতে হলে নিউইয়র্ক টাইসকেও দণ্ড দিতে হবে; কারণ, ওই পত্রিকাও গোপন নথিপত্রগুলো প্রকাশ করেছে।
অ্যাসাঞ্জকে দণ্ড দেওয়া কঠিন হবে আরও এই কারণে যে তিনি সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন, তাঁর পক্ষে প্রবল জনমত রয়েছে, মার্কিন বুদ্ধিজীবী সমাজেও তাঁর অনেক সমর্থক আছেন; দেশটির প্রথম হুইসেলব্লোয়ার হিসেবে সুপরিচিত ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ড্যানিয়েল এলসবার্গ (ভিয়েতনাম যুদ্ধ সম্পর্কে গোপন নথি পেন্টাগন পেপারস ফাঁস করেন) তাঁদের অন্যতম। ইন্টারনেট অ্যাকটিভিস্টদের মধ্যেও অ্যাসাঞ্জ ভীষণ জনপ্রিয়। মূলধারার সংবাদমাধ্যম তাঁর অতিবিপ্লবাত্মক প্রবণতার জন্য সমালোচনা করলেও সবাই মনে করেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ তাঁদের দূরবর্তী সহকর্মী; তাঁকে ধ্বংস করার চেষ্টা নিউইয়র্ক টাইমস ও গার্ডিয়ান-এর মতো পত্রিকা কোনোভাবেই সমর্থন করবে না।
সর্বশেষ ফাঁসের পর অ্যাসাঞ্জ সত্যিই সমস্যাপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়ে গেছেন; কিন্তু তিনি আশাবাদী মানুষ, লড়াকু এবং চূড়ান্ত অর্থে বিদ্রোহী। হতাশা বলে কোনো শব্দ তাঁর অভিধানে নেই। ‘সাইবার শহীদ’ হতে তিনি একেবারেই নারাজ। বিশ্ববাসীও তাঁকে শহীদ হিসেবে নয়, বীর হিসেবেই দেখতে চায়।

তথ্যসূত্র: ডেভিড লেই ও লুক হার্ডিংয়ের লেখা বই উইকিলিকস: ইনসাইড জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জে’স ওয়ার অন সিক্রেসি, নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশনা ওপেন সিক্রেটস: উইকিলিকস, ড্যানিয়েল ডমশাইট-বার্গের বই ইনসাইড উইকিলিকস: মাই টাইমস উইথ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এবং গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, সিডনি মরনিং হেরাল্ডসহ অনেক সংবাদপত্রের ইন্টারনেট সংস্করণ।



Source:
ছুটির দিনে

24 September 2011

Ah, Celucas!

তাঁকে এক বছরের সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত
নিজস্ব প্রতিবেদক

মো. ইউসুফ আলীর ওপর পুলিশের নির্যাতন। গত বৃহস্পতিবার হরতাল সমর্থক সন্দেহে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। রাজধানীর দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার একটি ভবন থেকে ছবিটি তোলা।


হরতালের সময় পুলিশের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিটির এক বছরের সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর দিলকুশা এলাকায় পুলিশ তাঁর গলা ও বুকে বুট দিয়ে চেপে ধরে।
গতকাল শুক্রবার পত্রিকায় ছবিটি ছাপা হয় (বাঁ দিকে ছবি)। মতিঝিল থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম ইউসুফ আলী। থানার কাগজপত্রে তাঁর বাবার নাম মোহাম্মদ আলী, গ্রামের বাড়ি নীলফামারী সদরের ব্যাঙমারী ডাঙ্গাপাড়া বলে লেখা রয়েছে। বর্তমান ঠিকানা শাহজাহানপুরের ২৮/এ রেলওয়ে কলোনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিলকুশা এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে হরতালের সমর্থনে জামায়াতের একটি মিছিল বের হয়। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিছিলকারীরা বিভিন্ন ভবনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ সময় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ফটকে ইউসুফ আলীকে আটক করে পুলিশ। তাঁকে সেখানে ফেলে মারধর ও বুট দিয়ে চাপা দেওয়া হয়। এ সময় ইউসুফ বলতে থাকেন, ‘ভাই, আমি মিছিল করি নাই।’ পুলিশ তাঁর কথায় কান না দিয়ে ভ্যানে তোলার পর আবার মারধর করে।
পুলিশ জানিয়েছে, থানায় আনার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ কামাল হোসেনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ইউসুফকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। থানার কাগজপত্রে ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিবরণীতে লেখা রয়েছে, ‘বিক্ষোভ মিছিল করে সদর রাস্তা দিয়া আসার সময় উচ্ছৃঙ্খল মিছিলকারীদের বিক্ষোভের কারণে গাড়ি চলাচল বিঘ্ন ঘটেছে ও জনমনে ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছে।’ তাঁকে দণ্ডবিধির ৩৫৩ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
প্রথম আলোর নীলফামারী প্রতিনিধি ইউসুফের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মিলন ও তৌহিদুল নামের দুজন গ্রামবাসী জানান, ইউসুফ ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেন।
এদিকে গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলী ও ঢাকায় অবস্থানরত কেন্দ্রীয় নেতাদের জরুরি বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বিষয়টি তোলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরে এ বিষয়ে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা আলোচনা করেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বলা হয়, এ ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে তা সরকারের জন্য বিব্রতকর। তবে এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। অনেকেই মনে করেন, এটা কারসাজিমূলক অথবা পরিকল্পিত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কেউ ষড়যন্ত্রমূলক এটা করতে পারে। কারণ, হরতালের দিন বিরোধী দলের এ রকম কোনো পিকেটিং ছিল না যে পুলিশকে কঠোর কোনো ব্যবস্থায় যেতে হবে। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়। ঘটনার সত্যতা জানতে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এ বিষয়ে ফোনে কথা বলতে অসম্মতি জানান।

Courtesy:



সরল গরল

বুটের তলায় দলিত ও দণ্ডিত ইউসুফ

মিজানুর রহমান খান
পুলিশের বুটের তলায় পিষ্ট ও বিচারে দণ্ডিত ইউসুফের স্বজনদের সঙ্গে গতকাল টেলিফোনে কথা হয় নীলফামারীর গ্রামের বাড়িতে। কথা হয় আরও অনেকের সঙ্গে। ২৫ বছরের এই যুবক ভূমিহীন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান। দু-এক শতক জমির ওপর তাঁদের বাঁশের বেড়া, ছিন্ন টিনের চালা। তাঁর বাবা মো. আলী নেথা বানিয়াপাড়া মসজিদে ইমামতি করেন। বেতন ৬০০ টাকা। একটি মক্তব চালিয়ে পান মুষ্টির চাল। বড় ভাই আবদুল হালিম কটকটি ফেরি করেন। গ্রামের লোকেরা বলেছেন, ফিতরা ও জাকাতের টাকায় লেখাপড়া হয়েছে ইউসুফ আলীর। আলিম পাস করার পর দু-তিন বছর আগে মতিঝিলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে একটি ছোট চাকরি পেয়েছেন। তিনি ব্যাংককর্মী নন।
এখন তদবির করতে ওই পরিবারের কারও ঢাকায় আসা সহজ কথা নয়। তাঁরা পারিবারিকভাবে জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করেন। আবদুল হালিম জোর দিয়ে বলেন, ‘ভাত খাবার পয়সা পাই না, আবার দল করব!’ ইউসুফের মা হালিমা আমাকে বলেছেন, ‘মোর ভালো ছাওয়া কষ্ট করি লেখাপড়া করছে।’ টিভিতে ঘটনা জানার পর থেকে তাঁরা বিপর্যস্ত।
ইউসুফ আলীর ওপর পুলিশি নির্যাতনের বিচার হয়নি। বিচার হয়েছে নির্যাতিতের। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির এটি একটি করুণ চিত্র। নির্বাচিত সংসদ সামরিক আদালতের মডেলে ২০০৯ সালে যে আদালত গঠন করেছিল, সেই আদালত তাঁর বিচার করেছেন। কর্নেল তাহেরের বিচারের ক্ষেত্রে সামরিক বিধানেরও লঙ্ঘন ঘটেছিল। মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল না, কিন্তু ভূতাপেক্ষ আইন দিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ইউসুফের দশা কিছুটা তাহেরের মতোই। ‘ক্যাঙারু কোর্ট’-এর আইনও লঙ্ঘিত হয়েছে।
সামরিক শাসন চলে গেলেই সামরিক খাসলত বদলে যায় না। ইউসুফ আলীর ওপর নির্যাতন শেষে তাঁকে এক বছরের কারাদণ্ডের মধ্য দিয়ে তা-ই প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থায় বিচার বিভাগ পৃথক্করণে আমলাদের আক্রোশ প্রশমিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। তখন নির্বাহী হাকিমদের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে শুধু অর্থদণ্ডের ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান নির্বাচিত সরকার সেনা-সমর্থিত সরকারকে লজ্জা দিয়ে আমলাদের দিয়ে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড প্রদানের বিধান চালু করে, যা সংবিধানের চরম লঙ্ঘন। বিশ্বের অন্য কোথাও এ ধরনের আদালতব্যবস্থা দেখা যায় না। আক্ষরিক অর্থেই একে সামরিক আদালতের সঙ্গে তুলনা করা চলে। জরুরি অবস্থায় শেরেবাংলা নগরে স্থাপিত আদালতগুলোকে আমাদের রাজনীতিকেরা হরহামেশা ক্যাঙারু কোর্ট বলতেন। কিন্তু তাঁদের হাত দিয়েই বিরোধী দল দলনে অন্য রকম ক্যাঙারু কোর্ট চালু হয়েছে। এই আদালতে কোনো সাক্ষ্য লাগে না। অভিযুক্তের আইনজীবী থাকে না। পুরো বিচারব্যবস্থাই অভিযুক্ত ব্যক্তির তথাকথিত স্বেচ্ছা-জবানবন্দিনির্ভর। কেউ দোষ স্বীকার করলেই তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে, অস্বীকার করলে নয়; নিয়মিত মামলা দায়ের করা যায়।
পত্রপত্রিকায় ইউসুফ আলীকে নির্যাতন ও মতিঝিল থানায় বসে তাঁর বিচার করার খবর বেরিয়েছে। গতকাল প্রথম আলোতে ‘তাঁকে এক বছরের সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পুলিশ জানিয়েছে, থানায় আনার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শেখ কামাল হোসেনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ইউসুফকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন।
গতকাল দুপুরে আমি মতিঝিল থানায় ফোন করি। জানতে চাইলে এসআই গোলাম হাফেজ বলেন, থানায় কোনো কোর্ট বসেনি। ঘটনাস্থলেই আদালত তাঁকে শাস্তি দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের অপরাধবিষয়ক সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, মতিঝিল অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে তথাকথিত ওই আদালত বসেছিল।
ওই কার্যালয় ঘটনাস্থল মতিঝিল মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রধান অফিস থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরে। এই একটিমাত্র তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের ওপর ইউসুফ আলীর ওপর কী ধরনের অবিচার করা হয়েছে, তা প্রমাণযোগ্য।
২০০৯ সালের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনে কোনো অভিযুক্তকে দণ্ডদানের ক্ষেত্রে কতগুলো শর্ত আরোপ করা হয়েছে। ওই আইনের ৪ নম্বর ধারা বলেছে, কোর্ট ‘কতিপয় অপরাধ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে আমলে নেবে’। ইউসুফ আলী যে অপরাধই করে থাকুন না কেন, তা কি নির্বাহী হাকিমের ‘সম্মুখে সংঘটিত কিংবা উদ্ঘাটিত’ হয়েছিল? এই শর্ত পূরণ না হলে ‘তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই আমলে গ্রহণ করে’ অভিযুক্তকে দণ্ড আরোপ করা কীভাবে সম্ভব? নির্বাহী হাকিম যদি প্রত্যক্ষদর্শী হন, তাহলেও তিনি শাস্তি দিতে পারবেন না। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তা স্বীকার করতে হবে। এখন এ স্বীকারোক্তি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল কি না, তা অনুধাবনে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত আলোকচিত্রই যথেষ্ট। অবশ্য আমাদের শাসক তারকা নেতারা তা বুঝতে না পেরে বিভ্রান্ত!
ইউসুফ আলীর ওপর নির্যাতন চালানোর পর তাঁর কাছ থেকে ‘স্বীকারোক্তি’ পাওয়ার যে বিবরণ নির্বাহী হাকিম শেখ কামাল হোসেন লিপিবদ্ধ করেছেন, তা জবরদস্তি ও বানোয়াট বলে ধরে নেওয়া চলে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা আছে, ‘এই আইনের অধীন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করিবার সময় কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে গৃহীত হইবার পরপরই মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী একজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষিপ্ত অভিযোগ লিখিতভাবে গঠন করিয়া উহা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করিয়া শুনাইবেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি গঠিত অভিযোগ স্বীকার করেন কি না তাহা জানিতে চাহিবেন এবং স্বীকার না করিলে তিনি কেন স্বীকার করেন না উহা বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানিতে চাহিবেন।’
ইউসুফকে হাতে ব্যান্ড বাঁধা এক পুলিশ বুট দিয়ে তাঁর বুক দলিত-মথিত করেছে। এই আলোকচিত্র সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে ওই নির্বাহী হাকিম ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ওই শর্তাদি পূরণ করেননি, সাজানো বয়ান লিখেছেন।
বিষয়টি গত শুক্রবার ক্ষমতাসীন দলের সম্পাদকমণ্ডলী ও ঢাকায় অবস্থানরত কেন্দ্রীয় নেতাদের জরুরি বৈঠকে আলোচিত হয়েছিল। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ শীর্ষস্থানীয় নেতারা হতভাগ্য ইউসুফ আলীর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। গতকাল প্রথম আলো জানাচ্ছে, ‘ওই বৈঠকে বলা হয়, এ ঘটনা সত্য হয়ে থাকলে তা সরকারের জন্য বিব্রতকর। তবে এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। অনেকেই মনে করেন, এটা কারসাজিমূলক অথবা পরিকল্পিত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কেউ ষড়যন্ত্রমূলক এটা করতে পারে। কারণ, হরতালের দিন বিরোধী দলের এ রকম কোনো পিকেটিং ছিল না যে পুলিশকে কঠোর কোনো ব্যবস্থায় যেতে হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়। ঘটনার সত্যতা জানতে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।’
আমরা আসলে কোনো অংশেই ওই তারকাখচিত মহতী সভার বিজ্ঞ সদস্যদের মতোই ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে খাটো করতে পারি না। খটরমটর হয়তো এর পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারণে। ষড়যন্ত্র হলে তা অন্তত দুই কিসিমের হয়েছে। ওই নাদান পুলিশ সরকারের ভাবমূর্তি নস্যাৎ করতে কিংবা তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে তাঁর বুটজুতা দিয়ে ইউসুফের বক্ষ বিদীর্ণে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অতঃপর নির্বাহী হাকিম নির্যাতিত ইউসুফ আলীর বক্ষপিঞ্জরে আদালতের হাতুড়ির ঘা বসিয়েছিলেন। পুলিশ যদি ইউসুফ আলীর বুক বুট দিয়ে পলিশ করে অপরাধ করে থাকে, তাহলে নির্বাহী হাকিমকেও একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা যাবে।
এখন সত্যিই কী ঘটেছিল, সেটা সরকারের কোনো শরবত তদন্ত প্রতিবেদন থেকে আদৌ কখনো জানা যাবে, তেমনটা ভরসা করা কঠিন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের সঙ্গে কদিন আগে দেখা হয়েছিল। বললাম, ‘ঢাল-তলোয়ার কবে আপনার হাতে আসবে? লড়াইয়ের ময়দানে কবে নামতে পারবেন?’ তিনি অভয় দিলেন। বললেন, ‘প্রয়োজনীয় লোকবল প্রায় হাতে পেয়ে যাচ্ছি আর কি।’ ওই তারকা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা যদি দেখি তদন্তের দন্তই বরং উৎপাটিত হচ্ছে, তাহলে অবাক হব না। তবে যেন মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অগ্রাধিকার দেয়। বাসি বলে যেন পায়ে না দলে।
আমরা অবিলম্বে ইউসুফের মুক্তি ও তাঁকে হেনস্তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচার চাই।

পাদটীকা: আমলাচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতব্যবস্থা অবশ্যই বিলুপ্ত করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে, কিন্তু তা চালাবেন বিচারিক হাকিমেরা। পাকিস্তানে আসিফ আলী জারদারি বিরোধী দলকে ঠেঙাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। অনেকটাই বাংলাদেশ মডেলে। তবে বাংলাদেশের শাসকদের লজ্জায় ফেলেছেন জারদারি। তিনি সমালোচনার মুখে ওই অধ্যাদেশ বাতিল করেছেন।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com




সংসদীয় কমিটির প্রশ্ন

পিকেটারের বুকে পুলিশের বুট কেন

বিএনপির ডাকা হরতালে জনৈক পিকেটারের বুকে পুলিশের এক সদস্যের বুট দিয়ে চাপা দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা চেয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ছবিটির বিষয়ে জানতে চেয়েছে কমিটি।
আজ রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। কমিটির সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, মুজিবুল হক, হাবিবুর রহমান, নুরুল ইসলাম, সানজিদা খানম ও সফিকুল ইসলাম অংশ নেন। স্বরাষ্ট্রসচিব আবদুস সোবহান সিকদার, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংসদ মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, গত হরতালের সময় একজন পিকেটারের বুকে পুলিশের লাথি মারার ঘটনাটি নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পুলিশের আইজিপির কাছে পুলিশের এ আচরণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।
সভায় কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এ ধরনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ কারণে বিষয়টির অবশ্যই তদন্ত প্রয়োজন।
ব্রিফিংয়ে কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর অতি উত্সাহী আচরণ নিয়ে কমিটি আগে থেকেই সজাগ। কমিটির আগের বৈঠকগুলোতেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গত হরতালের বিষয়টিও তাই মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। সভায় দেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে ঝিনাইদহ জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে অভিযোগপত্র দেওয়া মামলাগুলো সম্পর্কে জানতে চাওয়া ছাড়া এ বিষয়ে আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনী থেকে র্যাবে পদায়নে অনুসরণযোগ্য একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
এদিকে বৈঠকে পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) পদটি প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এই বিষয়টি আটকে আছে।