4 November 2011

সুশাসন


সুশাসন যাবে না নির্বাসনে

সুলতানা কামাল
বেশ কয়েক বছর আগে, বছর পাঁচেক হবে, একটা মিটিংয়ের জন্য অসলোতে যেতে হয়েছিল। আসা-যাওয়ার পথে চোখে পড়ল, বেশ কিছু রাস্তায় ট্রাফিক লাইট সরিয়ে রাউন্ড অ্যাবাউট বসানো হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলাম যে কেন হঠাৎ এমন জোরেশোরে ব্যবস্থার পরিবর্তন। নরওয়েজীয় সঙ্গীর কাছ থেকে উত্তর পেলাম, ট্রাফিক সিগন্যালে কিছু মিনিট গাড়িগুলোকে লাল সংকেতে পড়তে হয় এবং বিপরীতমুখী ট্রাফিক একেবারে না থাকলেও দাঁড়িয়ে থেকে সময় ও তেল নষ্ট করতে হয়, তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে রাউন্ড অ্যাবাউটের। অন্যদিকে গাড়ি না থাকলে কারও আর অপেক্ষা করে সময় বা তেল খরচ করতে হবে না। একই সঙ্গে দুঃখিত আর অবাক হওয়ার পালা আমার। আমরা এখনো ট্রাফিক আলো দিয়েই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাস বা চর্চাটুকু গড়ে তুলতে পারিনি, নির্ভরশীল থেকে গেলাম পুলিশি ডান্ডার ওপর। নরওয়ের ঘটনাটি দুটো বিষয় সামনে নিয়ে আসে। এক, জনগণ চলাচলের শৃঙ্খলা এত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যে বাতি তাকে যে নির্দেশ দিচ্ছে, সুযোগ থাকলেও সে তা ভঙ্গ করবে না। অন্যদিকে নীতিনির্ধারকেরাও ভেবেছেন, মানুষজনের যেন সময় বা সামর্থ্যের বিন্দুমাত্র অপচয় না ঘটে।
কথায় কথা টানে। সেই লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে নির্দোষ, নিরীহ এক পথচারীর নিহত হওয়ার ঘটনা স্মরণে আনা যেতে পারে। লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে—এ সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ ছেলেটিকে গুলি করে। ছেলেটি তার আগের মুহূর্তে ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে উদ্যত হয়েছিল এবং ইতিউতি সন্ত্রস্ত আচরণ করছিল। পরে জানা যায়, সে নেহাত সাধারণ একজন বিদেশি, যে লন্ডনে এসেছিল ভাগ্যের খোঁজে। সেই ঘটনার যখন আইনি প্রক্রিয়া চলছিল, সেই পুলিশের একসময়ে সেদিন জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছিল। আমি ঘটনাচক্রে তখন লন্ডনে থাকায় কাগজে বিবরণটি পড়ছিলাম। পুলিশের সদস্যও অল্প বয়সী ছেলে। আদালতে সেদিন যে ছেলেটি নিহত হয়েছে, তার মা-বাবাও উপস্থিত; উপস্থিত পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্যরাও। জবানবন্দিতে পুলিশ ছেলেটি যা বলেছিল, হুবহু উদ্ধৃত করতে পারছি না; কিন্তু তা ছিল এ রকম: ‘আজ আদালতে আমার হাতে যে মানুষটির মৃত্যু ঘটেছে, তার মা-বাবা বসে আছেন। তাঁদের কাছে আমার এটুকুই বলার আছে যে আমি যখন গুলিটা ছুড়ি, আমার সেই মুহূর্তের একমাত্র মোটিভ ছিল লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের অসংখ্য নিরীহ যাত্রীর নিরাপত্তা বিধান করা, যা আমার পেশাগত দায়িত্ব এবং সেই মুহূর্তে আমি কোনো রকম সন্দেহ ছাড়া বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম যে ছেলেটি বোমা বহন করছে। সেই বিশ্বাসবশেই আমি তাকে তাক করে গুলি ছুড়েছি।
‘আমি জানি, আমার এই কথা নিহত ছেলেটির মা-বাবার কাছে অর্থহীন মনে হবে, কিন্তু তাঁরা যদি আমার এই কথাগুলো গ্রহণ করেন, তাতে অন্তত আমার বিবেক স্বস্তি পাবে, আমার মা-বাবাও কম কষ্ট পাবেন।’ পুলিশ সদস্যটির বিচার হয়ে যথাযথ শাস্তি হয়েছিল, হয়তো এখনো শাস্তিভোগ করছে। তার পক্ষে কৈফিয়ত দিতে দাঁড়িয়ে যাননি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যে দুটি আইনের শাসনের চমৎকার ঘটনার উল্লেখ করলাম, এ রকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায় এবং সেসব ঘটনা ঘটছে আমাদের এই পৃথিবীটারই চেনা দেশগুলোতে, চেনা মানুষদেরই সমাজে। তারা সাধারণ গণতান্ত্রিক, মানবাধিকার বোধসম্পন্ন মানুষেরা যেমনভাবে জীবন চালায়, তার চর্চা করেছে এবং করেছে বলেই একদিকে যেমন রাস্তাঘাটে চলতে জনগণের ন্যূনতম অসুবিধা না হয়, রাষ্ট্রের এবং সরকারের নীতিনির্ধারণে তার প্রতিফলন ঘটেছে। একইভাবে যে অন্যায়, যে ত্রুটি রাষ্ট্রীয় নির্দেশেই ঘটে গেছে, জনগণের মনে নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করেছে, তার সুষ্ঠু বিচারেও রাষ্ট্র কোনো রকম দোদুল্যমানতা দেখায়নি। এই ঘটনাগুলোতে রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে যে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, প্রত্যয় এবং রাষ্ট্রপক্ষের যে সুবিবেচনা ফুটে উঠেছে, সোজা কথায় বলতে হয় আমরা আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জীবনে তার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারিনি।
আমাদের রাষ্ট্র বলতে সরকার, সরকার বলতে রাষ্ট্র। জনগণ সেখানে ঠাঁই পায় না। জনগণও যে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, সে বোধ সরকারগুলোর মধ্যেও কাজ করে না, জনগণকেও তা ভুলতে দেওয়া হয়েছে। যে পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার এবং জনগণ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, তা রূপ নিয়েছে শুধু বিজয়ী রাজনৈতিক দলের আলাপ-আলোচনা, প্রশস্তি-বন্দনার ক্ষেত্র হিসেবে। জনগণ অন্য যে রাজনৈতিক দল বা দলগুলোকে নির্বাচন করেছে তাদের হয়ে কথা বলার জন্য, নির্বাচনের ফলাফলের জন্য যাদের বসতে হবে বিরোধী দলে, তাঁরা তা করবেন না। ১৪ দলের জোট চমৎকার এক নিরপেক্ষ, অবাধ, মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং খুবই উল্লেখযোগ্যভাবে দেশের প্রান্তিক, ধর্মীয় ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার অঙ্গীকার, বিশেষত নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথার ওপরে এত বড় ‘ম্যান্ডেট’ পেয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেল, যে সরকারের সবচেয়ে বড় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত ধর্মনিরপেক্ষতা; ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায় সেই সরকারেরই স্থানীয় সমর্থক বা দলীয় সদস্যরাও মহা উৎসাহে ফতোয়াবাজি করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সরাসরি পাহাড়িদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। সন্দেহ হয় সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দলের কোনো পরিচয় আছে কি না, অথবা দলের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সাধারণ সদস্য বা সমর্থকেরা একাত্ম বোধ করেন কি না।
এ সরকারের আমলে আশাপ্রদ কিছু কাজ অবশ্যই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন (মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে মানবাধিকারকর্মীদের প্রশ্ন থাকা সাপেক্ষেও) হওয়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হওয়া এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে সর্বজনবিদিত এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, নারীনীতির ঘোষণা, পারিবারিক সহিংসতা রোধ আইন এবং সর্বোপরি অত্যন্ত প্রগতিশীল একটি শিক্ষানীতি আমরা পেয়েছি। নারীর যৌন হয়রানি রোধে সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপগুলো উৎসাহিত করেছে আমাদের। মানবাধিকার কমিশন পুনর্গঠিত হয়েছে, দুদক কাজ করছে তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে। তথ্য অধিকার আইন হয়েছে এবং কমিশন গঠিত হয়েছে। সংসদ কার্যকর নয় বটে, তবে সংসদীয় কমিটিগুলো কাজ করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন কমিশন ও তার কর্তব্য প্রশংসনীয়ভাবে সমাধা করেছে এ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনেই। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নারীনীতি ঘোষিত হলেও কমিটি তৈরি হয়ে তদনুযায়ী আইন তৈরি হতে দীর্ঘ সময় লাগছে। পারিবারিক সহিংসতা রোধে আইনের কার্যবিধির কোনো খবর পাওয়া গেছে বলে শুনিনি এখনো। মানবাধিকার কমিশন, তথ্য অধিকার কমিশন অসম্পূর্ণতা নিয়ে টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে। দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। দৃষ্টিকটুভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির সাহস সঞ্চার হয়েছে, অনেকটা তা স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতার ফলে শঙ্কা হয়, এর শেষ দেখতে পাব কি না। কাজ যতটা হয়েছে তার ফল পাওয়ার সুযোগ রয়ে গেছে সীমিত।
১৪ দলের নেতৃত্ব ও সংগঠনে আছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন, সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনে যাঁরা যুক্ত থেকেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, কাজ করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নিষ্ঠুর-নির্মম আঘাতে হারিয়েছেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-সুহূদ। এ দলগুলোর শক্তির উৎস জনগণের সমর্থন, তাদের ভালোবাসা। এদের অধিকাংশেরই কখনো কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তির ওপর ভর করে চলতে হয়নি, তাই এদের ওপর জনগণের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা তো বেশি ছিলই, কিন্তু সরকারি দলের প্রতিক্রিয়া দেখলে মনে হয়, সেটা তাদের মানুষের একটু বেশি করে কাছে যাওয়ার তাগিদটা যেন তেমন করে দিতে পারছে না, বরং যেন এই প্রত্যাশা তাদের মনে বিরক্তির সঞ্চার করছে। এ বড়ই দুর্ভাগ্যজনক সমগ্র জাতির জন্য।
আমাদের বিশ্বাস, একেবারে প্রথমেই যদি সেই ব্রিটিশ পুলিশ ছেলেটির মতো জবাবদিহির মুখে দাঁড় করানো হতো এখানকারও বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের, যারা একই ধরনের কাজের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বারবার ভুল করছে, তাহলে হয়তো বাপ্পির মতো অনেক নিরীহ মানুষকেই প্রাণ দিতে হতো না, এক হায়দারের বদলে অন্য হায়দার গ্রেপ্তার হতো না, কাদেরের পায়ে পুলিশ চাপাতির ধার পরীক্ষা করার দুঃসাহস দেখাত না, লিমনরা পঙ্গু হতো না, হঠাৎ হঠাৎ মানুষ চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে লাশ হয়ে ফেরত আসত না, অথবা একেবারেই হারিয়ে যেত না। মানুষ যদি গণতন্ত্রের চর্চায় অভ্যস্ত হতো, প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা আর স্বাধীন পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকত, সরকার আর মানুষের সম্পর্কে রাউন্ড অ্যাবাউট তৈরির মতো ঘটনা ঘটত, নারীনীতি এত দিনে আইনের মধ্য দিয়ে কার্যকর হতে পারত, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বচ্ছ, স্পষ্ট, শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারত; তাহলে শুনতে হতো না বিচার না পেয়ে পেয়ে মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে, পিটিয়ে মেরে ফেলছে মানুষ মানুষকে, একে অনবরতই অন্যের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। সরকার আর তার মুখপাত্ররা এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারতেন না। বরং কখনো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকলে যে দু-একটি ঘটনার বিচার নিষ্পত্তি হচ্ছে বটে, সেগুলোকেই বিচ্ছিন্ন বলা চলে।
স্বপ্নের স্বদেশ বাংলাদেশ বলতে অন্তত আমরা যারা সেই অবুঝ শিশু বয়স থেকে খালি পায়ে মা অথবা বাবার হাত ধরে দুই চোখে অশ্রুধারা নিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গাইতে গাইতে আজিমপুর থেকে শহীদ মিনারে এসে বাড়ির সবচেয়ে সযত্নে ফোটানো ফুলটি তর্পণ করেছি, যারা রুখে দাঁড়িয়েছি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ভয় পাইনি বন্দুকের সম্মুখে জুঁই ফুলের গান গাওয়ার স্লোগান দিয়ে বুক পেতে দিতে, ‘স্বাধীনতা’র চারটি অক্ষর বুকে ধরে হেঁটে গেছি মিলিটারির সামনে দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পথ পাড়ি দিয়েছি একেবারেই অজানার উদ্দেশে, দেশে যতবার হানা দিয়েছে অগণতান্ত্রিক আগ্রাসী শক্তি, ক্ষুদ্রশক্তি নিয়েই দাঁড়িয়েছি তার বিরুদ্ধে। মৌলবাদ, সামরিকতন্ত্র, স্বৈরাচার, জঙ্গিবাদ সবকিছুর ঝড়ঝাপটার মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের আলোর ছটাটা অন্তরে ধারণ করে মুক্ত আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে থাকি—তারা তো এই নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা করেই যে তারা দেশে সত্যিকার অর্থে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে, মানবাধিকারের প্রতি আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধাশীল থাকবে এবং সাধারণ জনমানুষ মনে করবে যে প্রকৃতই তাদের প্রতিনিধিরা দেশ চালাচ্ছেন। আইনের শাসনের সার্থকতা তো সেখানেই।
আইনের শাসন বলতে তো আমরা রবীন্দ্রনাথের তাসের দেশ বা সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশ বুঝি না, বেতার-টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বন্দুক-কামান নিয়ে ক্ষমতা দখল বুঝি না। বুঝতে চাই না। আইনের শাসন তো শুধু লাঠি আর বন্দুকের শাসন নয়। আইনের শাসন হচ্ছে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলার শাসন। নীতিনির্ধারণ, নীতির আলোকে আইন তৈরি, সেই আইনকে সম্মান করে চলা, তা যেমন জনগণের দায়িত্ব, সরকারেরও দায়। আসবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্ন, যার যার ক্ষেত্রে এখতিয়ারভুক্ত কাজে নিষ্ঠার প্রতিফলন। দুর্নীতিমুক্ত, নৈতিকতা, আর জনগণের অংশগ্রহণ এখানে হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ সপ্রতিভ, সপ্রাণ। এখন যেন মন্ত্রীরা সব ছায়া-মন্ত্রীর ভূমিকায় চলে যান আর বিরোধী দলের যে ছায়া-মন্ত্রিসভার দায়িত্ব পালন করার থাকে, তাদের ছায়াও দেখা যায় না কার্যকর ভূমিকা পালনে। ফলে আইনের শাসন দাঁড়ায় দুঃশাসনে আর সুশাসন যায় নির্বাসনে।
১৪ দলীয় জোটে নেতৃত্বদানকারী দলটি যথাযথভাবেই মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়ার দাবি করতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত যে বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িকতার আন্দোলনের পুরোধার ভূমিকাও তাদেরই। তাদের ওপর যখন অগণতান্ত্রিক, মানবিকতাবিরোধী মৌলবাদ তোষণকারীর ছায়া পড়ে, তারা যখন জনমানুষ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিতে থাকে, তাদের কাছ থেকে সুশাসনের যে প্রত্যাশা তার অল্প কিছুই মাত্র পূরণ করতে পারে বা তা পূরণে প্রত্যাশিত সক্ষমতা দেখাতে পারে না, তখন তার ছায়াটা যে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সবার ওপর গিয়ে পড়ে, সেটা যেন তারা কিছুতেই অনুধাবন করতে চায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঋদ্ধ আমরা আইনের শাসন বলতে বুঝতে চাই না ত্রাস বা সন্ত্রাস দিয়ে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা, বুঝতে চাই না বিচারব্যবস্থার ওপর সম্মান হারিয়ে ফেলা, বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া, দুর্নীতির প্রশ্নে দ্বিধান্বিত থাকা। আইনের শাসন প্রকৃত অর্থে হবে সুশাসনের ন্যায্য অনুষঙ্গী।
সুলতানা কামাল: নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র। চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ড, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

Source:

No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...