8 April 2016

ভাসু বিহার

 ভাসু বিহার

বগুড়া শহর থেকে অটো রিকশা নিয়ে সহজে যাওয়া যায় ভাসুবিহার। শহরের ঠনঠনিয়া বাস স্ট্যান্ড অথবা সাতমাথা থেকে জায়গাটিতে যেতে অটো রিকশা রিজার্ভ করে নিতে হবে।
ভাসু বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। এটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়, মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বিহার ইউনিয়নের ভাসু বিহার নামক গ্রামে অবস্থিত। স্থানীয়রা একে নরপতির ধাপ হিসেবে চেনে। ধারণা করা হয়, এটি একটি সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ। খননকার্যের ফলে সেখানে ব্রোঞ্জের বৌদ্ধমুর্তি, পোড়ামাটির ফলকসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে এখানে এসেছিলেন। তার ভ্রমণ বিবরণীতে তিনি এটাকে ‘পো-শি-পো’ বা বিশ্ববিহার নামে উল্লেখ করেছেন। এটি বিদ্যাপীঠ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ব্রিটিশ আমলে ভাসু বিহার স্থানীয় মানুষের কাছে ‘ভুশ্বুবিহার’ নামে অভিহিত ছিল।
এর অবস্থান শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার হাটে। এখানে ১৯৭৩-৭৪ সালে প্রথমবারের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয় এবং তা পরবর্তী দুই মৌসুম অব্যাহত থাকে। খননের ফলে দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম এবং একটি মন্দিরের স্থাপত্তিক কাঠামো সহ প্রচুর প্রত্নবস্তু পাওয়া যায়। ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৪৬ মিটার। এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের ২৬টি কক্ষ রয়েছে। কক্ষগুলির সামনে চারদিকে ঘোরানো বারান্দা এবং পূর্ব বাহুর মাঝখানে প্রবেশ পথ আছে। বড় সংঘারামটি ছোটটির মতই দেখতে তবে এর আয়তন ও কক্ষ সংখ্যা বেশি। বড় আকারের একটি খোলা অংশকে ঘিরে এসব ছোট আকারের বৌদ্ধভিক্ষুদের আবাসকক্ষ । দেখে মনে হয়, খোলা বড় অংশটি ছিল মিলনায়তন।
প্রথম বিহার  উত্তর-দক্ষিণে ১৪৮.১৩ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৩৯ মিটার পরিমাপের প্রায় আয়তক্ষেত্রাকার বিহারটি পোড়া ইটের তৈরি। দুই ইটের মাঝখানে মর্টার হিসেবে কাদামাটির ব্যবহার লক্ষণীয়। আয়তক্ষেত্রাকার আঙিনার চারদিকে কাদামাটির তৈরি ১১ মিটার × ১০ মিটার আয়তনের মোট ২৬টি কক্ষ রয়েছে। পূর্বদিকের বাহুর মধ্যভাগে তোরণের সম্মুখভাগটি (ফাসাদ) ছিল আকর্ষণীয়। বিহার কক্ষ সারিতে অবস্থিত অভ্যন্তরীণ হলঘরের মতো একটি কক্ষে প্রবেশ করার জন্য একটি স্তম্ভবিশিষ্ট প্রবেশপথ ছিল। তোরণটিতে দুটি রক্ষীকক্ষও ছিল।
ভাসু বিহার, বগুড়া
দ্বিতীয় বিহার ভূমি পরিকল্পনায় দ্বিতীয় বিহারটি ১ম বিহারের প্রায় অনুরূপ এবং উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত। উন্মুক্ত আঙিনার চারদিকের বারান্দা সংলগ্ন বিহারের ৩০টি কক্ষের অবস্থান। পূর্ব ও পশ্চিমে ৭টি এবং দক্ষিণ বাহুর মাঝখানে প্রবেশপথ ছাড়াও ৮টি করে কক্ষ রয়েছে। দক্ষিণ বাহুর মধ্যখানে প্রধান তোরণটি বাইরের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং সেদিকেই মন্দিরটি অবস্থিত। বিহারটির উত্তর এবং পশ্চিমে গভীর নিচু খাদটি প্রাচীন কোন নদীখাত বা জলাশয়ের চিহ্ন বহন করে। সেকারণে হয়ত বা বিহারের পূর্বদিকে প্রবেশপথ রাখা হয় নি, যা বাংলার বৌদ্ধবিহারের স্থাপত্যিক ঐতিহ্য অনুসারে থাকার কথা ছিল। তোরণটিতে দুটি রক্ষীকক্ষও ছিল।
প্রধান মন্দির প্রধান মন্দিরটি ছিল কমপ্লেক্সের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বে, দু নম্বর বিহারের দক্ষিণে এবং এক নম্বর বিহারের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বে। মন্দিরটি প্রায় ক্রুশাকৃতি এবং এখানে ধাপবিশিষ্ট সিঁড়ির প্রদক্ষিণ পথ ছিল। পশ্চিম দিক থেকে মন্দিরে প্রবেশ করতে হতো। সমাবেশ স্থল বা মন্ডপটি ছিল মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতায় প্রদক্ষিণ পথ ছিল। ভিত্তির সর্বনিম্ন অংশের বহিসম্মুখভাগ পোড়ামাটির ফলকে অলঙ্কৃত ছিল।

 (বাংলাপিডিয়া অবলম্বনে)































No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...