24 April 2016

জগদ্দল মহাবিহার

জগদ্দল বৌদ্ধবিহার/মহাবিহার
জগদ্দল, ধামুইর, নওগাঁ।
জগদ্দল ঢিবিটি নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল গ্রামে অবস্থিত। নওগাঁ জেলা শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে।
নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার ১২’শ খিষ্ট্রাব্দে প্রাচীন নির্দশন জগদ্দল বিহার বা বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যময় ইতিহাস। জগদ্দল বিহারের অবস্থান নওগাঁর ধামইরহাট জয়পুর হাট সড়কের উত্তর দিকে।
প্রতœত্বত্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উৎখননের সময় এখান থেকে প্রচুর প্রাচীন নির্দশন পাওয়া যায়। এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক নির্দশন ও টক্কামারী দিঘীসহ নানান স্থাপনা। ধামইরহাট উপজেলার জয়পুর ধামইরহাট রাস্তার উত্তর দিকে অবস্থিত জগদ্দল বিহার একটি প্রাচীন কীর্ত্তি। বর্তমানে স্থানীয় জনগণ এটাকে বটকৃষান রায় নামক একজন জমিদার বাড়ির ধ্বংসাশেষ বলে মনে করে। কিন্তু ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, রামপাল গৌড় রাজ্য পুনরুদ্ধারের পর রামাবর্তী নগরের রাজধানী স্থাপন করেন। আইন-ই-আকবরী রচয়িতা আবুল ফজল এ স্থানকে রমৌতি বলে উল্লেখ করছেন। প্রাচীন বাংলার ধর্মমঙ্গল কাব্য গুলিতে রামাবর্তীর উল্লেখ আছে। রামপালের পুত্র মদন পালের তাম্র শাষণে ও রামাবর্তী নগরীর উল্লেখ আছে। দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছেন, এই রামাবর্তীর নগরে রামপাল জগদ্দল মহাবিহারের প্রতিষ্ঠা করেন।
'জগদ্দল মহাবিহারের স্থাপত্য নকশা দেখে আমরা নিশ্চিত যে বিহারটি লোটাস (পদ্ম) বিহার। দেশে এই প্রথম পদ্মবিহারের সন্ধান পাওয়া গেল। বিহারের চার কোণে পদ্ম ফুলের পাপড়ির মতো নকশা করা ছিল। মেঝে থেকে বিভিন্ন স্তরে ২৪ থেকে ২৫ ফুট উঁচু ছিল। এখানে যে একটি বিশাল জনপদ ছিল, তা কয়েকটি স্থান অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। জগদ্দলের পূর্বে নিকেশ্বর বা নিকাই শহর ও পশ্চিমে জগৎনগর নামে বিশাল জনপদ ছিল। জগদ্দল বিহারে মোক্ষাকর, দানশীল, শুভাকর ও বিভূতিচন্দ্র নামে চারজন বৌদ্ধ পণ্ডিত থাকতেন। তিব্বতীয় ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ করা হতো।' 'রামচরিতম'-এর উদ্ধৃতি অনুযায়ী 'জগদ্দল মহাবিহার' বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত। পাল যুগে দ্বাদশ শতকে পাল সম্রাট রামপাল এটি নির্মাণ করেন। মূলত জগদ্দল বিহার ছিল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বৌদ্ধ ধর্মের গ্রন্থগুলো এখানে অনুবাদ করা হতো।
জগদ্দল বিহারের পশ্চিম বাহুর মধ্যস্থলে খননের কাজ চলছে। এখানে বেরিয়ে এসেছে মূল মন্দির, সামনের দিকের বিশালাকার হলঘরের অংশ ও চারটি বৌদ্ধ ভিক্ষু কক্ষের অংশ বিশেষ। পূর্বমুখী মন্দিরটি প্রায় বর্গাকার। এর তিনদিকে প্রশস্ত প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। প্রবেশপথের প্রশস্ততা এক দশমিক ১২ মিটার। তিনটি ধাপ পেরিয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করা যায়। মন্দিরে প্রবেশপথে বিশাল আকারের কালো পাথর দিয়ে চৌকাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল। বিহারের মেঝে থেকে বিভিন্ন স্তরে ২৪ থেকে ২৫ ফুট উঁচু ছিলো। এখানে যে একটি বিশাল জনপদ ছিলো, তা কয়েকটি স্থান অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। জগদ্দলের পূর্বে নিকেশ্বর বা নিকাই শহর ও পশ্চিমে জগৎনগর নামে বিশাল জনপদ ছিলো। জগদ্দলে মোক্ষাকর, দানশীল, শুভাকর ও বিভূতিচন্দ্র নামে চারজন বৌদ্ধ পন্ডিত থাকতেন। তিব্বতীয় ভাষায় বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ অনুবাদ করা হতো সেসময়। বিহারের উত্তর পাশের ২১ ফুট নিচ পর্যন্ত খনন করে ভিত্তি পাওয়া গেছে। একই সাথে সেখানে উদ্ধার হয়েছে পানি নিষ্কাশনের পাথরের তৈরি ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ড্রেনের বাহিরের অংশে রয়েছে সাদা পাথরের তৈরি অনেকটা হাতিসদৃশ্য প্রাণিমূর্তি,
ব্রোঞ্জের তৈরি ১০ ইঞ্চি উচ্চতার একটি বৌদ্ধমূর্তি ও কালো পাথরের তৈরি ১৫ ইঞ্চি উচ্চতার একটি বৌদ্ধমূর্তি। এছাড়া একটি শিলালিপি, দুটি দশদিকপাল মূর্তি সম্বলিত পাত্র, কালো পাথরের তৈরি ১০টি মূর্তির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলঙ্কার, লোহার পেরেক, লোহার ছোট মার্বেল, মাটির তৈরি পাত্রসহ অসংখ্য নিদর্শন পাওয়া গেছে।
বিহারটি প্রাচীন বাংলার শিক্ষা-দীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, উত্তরবঙ্গের জগদ্দল বিহারের দু’জন স্বনামধন্য পন্ডিত হলেন, আচার্য দানশীল ও বিভূতি চন্দ্র। প্রায় ৬০ খানা তস্ত্রগ্রন্থের তিব্বতী অনুবাদ করেছেন আচার্য দানশীল। রাজপুত্র বিভূতি চন্দ্র ছিলেন একাধারে গ্রন্থকার, টীকাকার, অনুবাদক ও সংশোধক। জগদ্দল বিহারের আচার্য মোক্ষাকর গুপ্ত ‘তর্কভাষা’ নামে বৌদ্ধ ন্যায়ের ওপর একটি পুঁথি লিখেছিলেন। শুভাকর গুপ্ত ধর্মাকর প্রভৃতি মনীষী আচার্যরা কোন না কোন সময় এই মহাবিহারের অধিবাসী ছিলেন। কথিত আছে যে, কাশ্মীরের প্রসিদ্ধ সাধু ও পন্ডিত সাক্যশ্রীভদ্র ১২০০ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন বৌদ্ধবিহার দর্শন করে জগদ্দল বিহারে এসেছিলেন। বাংলার জগদ্দল বিহারের বৌদ্ধ পন্ডিত বিদ্যাকর ‘সুভাষিত রত্নকোষ’ নামে একটি কোষকাব্য সঙ্কলন সমাপ্ত করেছিলেন। প্রাচীন বাংলার এমন উন্নত জ্ঞানসাধন কেন্দ্র আজ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত।

সূত্র: ইন্টারনেট
 






















 
 Jagaddal Bouddho Bihar (Buddhist Vihara of Jagatdal)
Jagaddal, Dhamuirhat, Naogaon, Rajshahi

No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...