9 April 2016

গোবিন্দ ভিটা

গোবিন্দ ভিটা

মহাস্থানগড় দুর্গ নগরীর প্রাচীরের অদূরে করতোয়া নদীর তীরে মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত।এখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন, ইটের মাপ, ব্যবহৃত নির্মাণ মসলা, স্থাপত্যিক বিন্যাসের ভিত্তিতে মনে করা, মন্দিরটি খ্রীস্টীয় সাত শতকে নির্মিত হয়েছিল।  মন্দিরটিতে একাধিকবার পুনঃনির্মানের চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। 
এখানে সর্ব প্রথম ১৯২৮-২৯ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে খিস্ট্র পূর্ব ২য় শতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন যুগের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিস্কৃত হয়েছে। গুপ্তপূর্বযুগের উল্লেখযোগ্য কোন স্থাপত্যিক কাঠামো পাওয়া যায়নি। খননের ফলে যে সব ইমারত উম্মোচিত হয়েছে তারমধ্যে পূর্ব ও পশ্চিমের দুটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মন্দির দুটি একটি মজবুত বেষ্টনি প্রাচীরের মধ্যে অবস্থিত যা শেষ গুপ্ত যুগ থেকে মুসলমান যুগ পর্যন্ত মোট চারটি পর্যায়ে বিভক্ত। 
 গোবিন্দ ভিটা প্রত্নস্থলটি ১৯২৮-২৯ সালে কে.এন দীক্ষিত খনন করেছিলেন। ১৯৬০ সালে ড.নাজিমউদ্দীন আহমদ এখানে একটি গভীর খাদ খনন করেন। দীক্ষিতের খননে পূর্ব ও পশ্চিমে পাশাপাশি অবস্থিত দুসেট মন্দির এবং পরপর চারটি যুগের নিদর্শনসমূহ পাওয়া গিয়েছে। (১) পশ্চিম পাশে রয়েছে পরবর্তী গুপ্তযুগে (ছয়-সাত শতক) নির্মিত বারান্দাযুক্ত একটি মন্দির যার ভিত্তিভূমি অত্যন্ত গভীর এবং অফসেট যুক্ত। (২) পশ্চিম পাশেই প্রাথমিক পাল যুগে (৮-৯ শতক) প্রতিষ্ঠিত একটি বারান্দাযুক্ত মন্দির রয়েছে যার ভিত্তি স্তরে স্ত্তরে উঁচু করে নির্মিত হয়েছিল। (৩) পশ্চিম পাশের এ উঁচু ভিত্তিটি পরবর্তী পাল ও সেন যুগে এবং এমন কি মুসলমানদের সময়েও ব্যবহৃত হয়েছিল। মন্দিরের পাশে একটি চন্ডীদেবীর প্রস্তর প্রতিমা (১১ শতক) এবং একটি নৃত্যরত গণেশের প্রস্তর প্রতিমা (১১ শতক) পাওয়া গিয়েছে। (৪) পশ্চিম পাশের মন্দিরের উপরে মুসলিম তথা সুলতানি যুগে (১৫-১৬ শতক) নির্মিত একটি ইটের প্লাটফর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে।
গোবিন্দ ভিটার পূর্ব পাশের মন্দির অংশে সুস্পষ্ট চারটি যুগের সাংস্কৃতিক নিদর্শনসমূহ আবিষ্কৃত হয়েছে। যথা: (১) পরবর্তী গুপ্ত যুগে নির্মিত বর্গাকৃতির মন্দির যার মধ্যে প্রদক্ষিণপথ বেষ্টিত একটি আয়তাকার ডায়াস রয়েছে। (২) প্রাথমিক পাল যুগে নির্মিত একটি কমপ্লেক্স এবং বহুপার্শ্ব বিশিষ্ট প্রস্তর বেদি। (৩) পরবর্তী পাল যুগে নির্মিত কিছু ক্ষয়িষ্ণু দেওয়াল এবং একটি সম্ভাব্য অগ্নিশিলা। মুসলিম তথা সুলতানি যুগে নির্মিত একটি ভগ্ন মেঝের মধ্যে ১৮টি মুদ্রা ভর্তি একটি মাটির পাত্র। মুদ্রাগুলি বাংলার সুলতানগণ জারি করেছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাল যুগেই দুটি মন্দির ঘিরে একটি সাধারণ বেষ্টনী প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া মন্দির সংলগ্ন নদীর তীরে এ যুগে নির্মিত পাথরের রক্ষা বাঁধ বা রক্ষা প্রাচীর এবং একটি পাথরের বাঁধানো ঘাট ছিল যা ১৯২২ সালের প্লাবনে ভেসে গিয়েছে।






পাশেই করতোয় নদী





করতোয় দেখা যায় অদূরেই















শীলাদেবীর ঘাট

মহাস্থান গড়ের পূর্বপাশে করতোয়া নদীর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। ঘাটের সামনে রয়েছে একটি শ্মশান। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। শাহ সুলতান বলখীর কাছে পরশুরাম যুদ্ধে পরাজিত হবার পর আত্মশুদ্ধিতার এবং সতীত্ব হারাবার ভয়ে শীলাদেবী এ ঘাটে আত্মহত্যা করেন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।
সূত্র : বিভিন্ন পাঠ, বাংলাপিডিয়া, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, স্থানীয় ইতিহাস, প্রত্নস্থানের ইতিহাস।





Govinda Bhita
Shila Devi's Ghat
Mohasthangarh, Shibganj Upazila, Bogra


No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...