28 March 2016

বেহুলার বাসরঘর


বেহুলার বাসরঘর/গোকুলমেধ 



বগুড়া শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে ২ কিমি দক্ষিণে গোকুল নামের গ্রামে গোকুলমেধ বা বেহুলার বাসরঘর অবস্থিত । এটি বেহুলা লক্ষিন্দরের লোহার বাসর ঘর নামে পরিচিত। স্থানটির সাথে মঙ্গল কাব্যের মনসামঙ্গল অংশের ইতিহাস জড়িত বলে গবেষকগণ অনুমান করেন।  খ্রিস্টাব্দ সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে এটি নির্মিত । কারো কারো মতে, সম্রাট অশোক এ বেহুলার বাসরঘর নির্মণ করেছেন। ১৭২ টি কক্ষ এবং ২৪ কোণ বিশিষ্ট গোসলখানা রয়েছে ।
লোকে বেহুলার বাসরঘরের ছবির নিচে ‘মহাস্থানগড়’ ক্যাপশন দিয়ে থাকে। এটা গোকুল গ্রামে। মূল মহাস্থান গড় দুর্গ নগরী দু কিলোমিটার উত্তরে।

মনসার পিতার নাম শিব। শিব সর্বভারতীয় প্রধান দেবতা। শিব পদ্মপল্লবে বীর্যপাত ঘটিয়ে মনসার জন্ম দিয়েছিলেন যার কারণে মনসার আরেক নাম পদ্মাবতী। চাঁদ সওদাগর ছিলেন শিবের একজন একনিষ্ঠ অনুসারী। মনসা তাকে নিজের পূজারী বানানোর পরিকল্পনা করে। মনসা কৌশল অবলম্বন করে চাঁদ সওদাগরের মত বদলানোর চেষ্টা করলেও, চাঁদ সওদাগর শিবের কাছ থেকে দীক্ষা পাওয়া মন্ত্র ও বেদবাক্য দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। একসময় মনসা চাঁদ সওদাগরের কাছে সুন্দরী নারীর বেশে এসে হাজির হলে, চাঁদ সওদাগর তাকে তার গোপন কথা জানিয়ে দেয়। চাঁদ তার বেদবাক্যের ফলে প্রাপ্ত অলৌকিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। চাঁদ শঙ্করের সাহায্য গ্রহণ করে। পূর্ণশক্তির ক্ষমতা চাঁদ সওদাগরের চেয়েও বেশি হলেও মনসা তাকে হত্যা করে চাঁদ সওদাগরকে পুনরায় অসহায় করে ফেলে। এরপরও চাঁদ সওদাগর মনসার পূজা করতে অস্বীকৃতি জানালে মনসা সাপ পাঠিয়ে তার ছয় সন্তানকে হত্যা করে। সুদিন দেখে, চাঁদ, ১৪ টি জাহাজের বহর সাজিয়ে বাণিজ্যে বের হল সিংহলের উদ্দেশে । সিংহল বাণিজ্য শেষ করে বিপুল সম্পদসমেত ফেরার পথে কালিদাহ সাগরে মনসাদেবী মহা প্রলয় সৃষ্টি করল এবং সবগুলো জাহাজ পানিতে ডুবে গেল।
এরপর চাঁদ সওদাগরের জাহাজ ডুবে যায় এবং মনসা তাকে একটি দ্বীপে নিয়ে আসে। এই দ্বীপে চাঁদ পুরনো বন্ধু চন্দ্রকেতুর দেখা পায়। চন্দ্রকেতু চাঁদ সওদাগরকে মনসার অনুসারী বানানোর চেষ্টা করলেও সে তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে। সে ভিক্ষুকে পরিণত হয়েও কেবল শিব আর দূর্গার পূজা করতে থাকে। মনসার কাছে মাথা নোয়াতে অস্বীকার করায় সে তার স্বর্গের দুই বন্ধুর সাহায্য গ্রহণ করে। তারা পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্ম নিতে রাজি হয়। একজন চাঁদ সওদাগরের পুত্র ও অন্যজন চাঁদের ব্যবসায়িক বন্ধু সাহার কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। চম্পকনগরে ফিরে এসে চাঁদ সওদাগর নতুন করে তার জীবন গড়তে শুরু করে। তার একটি সন্তান জন্ম লাভ করে। এ সন্তানটি লক্ষিন্দর। কাছাকাছি সময়ে সাহার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় যার নাম রাখা হল বেহুলা।
দুটি শিশুই একসাথে বেড়ে ওঠে এবং যৌবনে উপনীত হয়। বেহুলা ও লক্ষিন্দর দুজনকে দু জনার জন্য নির্বাচন করা হয়। তাদের রাশি গণনা করে দেখা যায়, বিয়ের রাতে লক্ষিন্দর সাপের ছোবলে মৃত্যুবরণ করবে। তাদের বিয়ে ঠিক হয়। চাঁদ সওদাগর সতর্কতা হিসেবে এমন একটি বাসর ঘর তৈরি করেন যা সাপের পক্ষে ছিদ্র করে প্রবেশ করা সম্ভব নয়।
কিন্তু সকল সাবধানতা স্বত্ত্বেও, মনসা তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সফল হয়। তার পাঠানো একটি সাপ ছোট একটি ফুটো দিয়ে বাসর ঘরে প্রবেশ করে লক্ষিন্দরকে ছোবল দিয়ে হত্যা করে।
সাপের দংশনে নিহতদের স‌ৎকার না করে তাদের মৃতদেহ ভেলায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হত এ আশায়, দংশিত হয়ত কোন অলৌকিক পদ্ধতিতে জীবন ফিরে পাবে। মৃত স্বামীর সাথে ভেলায় চড়ে বসল বেহুলা সবার বাধা অগ্রাহ্য করে। একসময় ভেলা নেতাই ধোপানীর ঘাটে ভেড়ে এবং ধোপানীরে কাছে বেহুলা তার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইলে, ধোপানী একখণ্ড বাসক ডালে মন্ত্র পড়ে লক্ষিন্দরকে পুনর্জীবিত করে । বেহুলাকে নিয়ে ধোপানী শিবের নিকট উপস্থিত হয়। শিব মনসাদেবীর বিচার করে এবং চাঁদের ৬ পুত্র ও ডুবে যাওয়া ১৪ টি জাহাজ ফিরিয়ে দেয় ।
















 








No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...