10 March 2016

রোয়াইল বাড়ি দুর্গ



রোয়াইল বাড়ি একটি গ্রাম ও ইউনিয়নের নাম। আরবি শব্দ ‘রোয়াইল’ এর অর্থ ছোট আকারের অশ্বারোহী বাহিনী’। কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে রোয়াইল বাড়ি গ্রাম। এ গ্রামেই রোয়াইল বাড়ি দুর্গ নির্মাণ করেন নসরত শাহ। এ গ্রামের পশ্চিম দিকে বয়ে চলেছে বেতাই নদী।
১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ কামরূপের নীলাম্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং কামরূপ দখল করে নেন। তাঁর ছেলে নসরত শাহ কিছুদিন কামরূপ শাসন করেন। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যে শত্রুর প্রতি আক্রমণে পরাস্ত হয়ে কামরূপ ছেড়ে পালিয়ে এসে রোয়াইল বাড়ি গ্রামে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং এ দুর্গ নির্মাণ করেন। বাংলার বারভূঁইয়ার অন্যতম ঈশা খাঁ এ অঞ্চলের দখল নেন এবং কিশোরগঞ্জে জঙ্গলবাড়ি দুর্গ এবং রোয়াইল বাড়ি দুর্গের আধপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জঙ্গলবাড়ির সাথে রোয়াইল বাড়ি পর্যন্ত সহজে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি সড়ক তৈরি করেন যা ধ্বংস হতে হতে এখন নিশ্চিহ্ন। ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পারিষদ দেওয়ান জালাল এখানকার আধিপত্য গ্রহণ করেন। তিনি রোয়াইলবাড়ি দুর্গের ব্যাপক সংস্কার এবং বহিরাঙ্গনে একটি সুদৃশ্য মসজিদ নির্মাণ করেন। যা মসজিদ- এ জালাল বা জালাল মসজিদ নামে পরিচিত ছিল। কালক্রমে রোয়াইল বাড়ি দুর্গটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং মাটিচাপা পড়ে থাকে দীর্ঘকাল।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে খননের ফলে রোয়াইল বাড়ি দুর্গের বিভিন্ন ধ্বংসচিহ্ন আবিষ্কৃত হয়: চিনামাটির বিভিন্ন জিনিস, টেরাকোটা নিদর্শন, বর্শা, ভবনের মূলভিত্তি, পিলার, ছাদবিহীন ভবনের সামনে বড় দিঘি, বাঁধানো ঘাট, মসজিদ এবং কবরস্থান। প্রায় ৪৬ একর জায়গা জুড়ে রোয়াইল বাড়ি দুর্গ অবস্থিত। এটি এখন পুরাকীর্তির মর্যাদা পেয়েছে কিন্তু সংরক্ষণের ব্যবস্থা লক্ষ করা যায় না। সামনের জোড়া দিঘি ভরাট এবং দখল হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশের এলাকায় অযত্নের ছাপ। দুর্গের পাশেই একটি প্রাচীন বট গাছের নিচে আছে বাঁধানো কিছু কবর। পাড়াগাঁর মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি ইতিহাস। এখানে থাকার কোন ব্যবস্থা নেই। যেতে হবে টেক্সি চেপে বা মটর সাইকেলে চড়ে।
 
 ছাদহীন দুর্গ




পিলারের ধ্বংসাবশেষ



 দাঁড়িয়ে আছে কারুকার্যময় পিলার



 দেয়ালে টেরাকোটা আর খোদাই করা চিত্র



 দেয়ালচিত্রে জমেছে শ্যাওলা



 দুর্গের অভ্যন্তর





 দুর্গের পুরু দেয়াল: পোড়ামাটির টেরাকোটা



 প্রশস্ত দেয়াল





 সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন



 দৃঢ় ও সুদৃশ্য পিলার



 সামনে থেকে দেখা দুর্গের বাইরের দৃশ্য



 মাটির স্তূপ থেকে উত্থিত হয়েছে ইতিহাস



 ভেতরের দিকের পুরু দেয়াল আর টেরাকোটার কারুকার্যময় দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ



 ভেতরের দৃশ্য : অবহেলা পরিণত হোক সযত্ন সংরক্ষণে



পাশের উঁচু টিলা থেকে দেখা









 
সংরক্ষণ করতে হবে ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক নিদর্শন। এগুলি আমাদের বিবর্তনের বর্ণনা।

Roail Bari Fort, Kendua, Netrokona


No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...