21 August 2011

Investigation

তারেককে পলাতক দেখিয়ে ঈদের পর বিচার শুরু

প্রশান্ত কর্মকার
আজ সেই ভয়াল ২১ আগস্ট। ২০০৪ সালের এই দিনে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আইভি রহমানসহ ২২ জনকে হত্যা করা হয়। ওই হামলায় আহত হন শেখ হাসিনাসহ কয়েক শ নেতা-কর্মী।
সাত বছর পর ওই নৃশংস ঘটনার বিচার শুরু হচ্ছে। তারেক রহমানসহ ১২ জনকে পলাতক দেখিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলারই বিচার শুরু হবে ঈদের পর।
এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় মামলা দুটির শুনানির তারিখ রয়েছে ২৫ আগস্ট। ওই দিন সম্পূরক অভিযোগপত্রভুক্ত নতুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনবিষয়ক শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে। ঈদের পর মামলা দুটির বিচারকাজ পুরোদমে শুরু হবে। তিনি বলেন, আদালত সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে তারেক রহমানসহ পলাতক ১২ আসামির বিরুদ্ধে প্রথমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে পলাতক আসামিদের আত্মসমর্পণ ও হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ আইন ও পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। বিচার শুরু করতে কোনো বাধা নেই।
এর মধ্যে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলাটি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে এবং হত্যা মামলাটি দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে রয়েছে। উভয় মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। আইন ও পদ্ধতিগতভাবে মামলা দুটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন। এ জন্য দুটি মামলা একত্রে বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনের বিধানমতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন সৈয়দ রেজাউর রহমান।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২১ আগস্টের মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত করে ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তাতে জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তাঁর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে মুফতি হান্নান ও আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৩ জন কারাগারে আটক আছেন। মাওলানা তাজউদ্দিনসহ আটজন পলাতক আছেন। এক আসামি জুয়েল এই মামলায় জামিন পেলেও অন্য মামলায় কারাগারে আছেন।
বর্তমান সরকারের আমলে মামলাটির অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর গত ৩ জুলাই তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।
বাকি আসামিরা হলেন: বিএনপির সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার (বরখাস্ত), পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক (আইজি) আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, খোদা বকস চৌধুরী; মহানগর পুলিশের তৎকালীন উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, জোট সরকারের আমলে তদন্তে নিযুক্ত সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মুন্সী আতিকুর রহমান, আবদুর রশিদ এবং হুজির কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবদুস সালাম, শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ বাট ওরফে ইউসুফ বাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, বাবু ওরফে রাতুল বাবু, খালেদা জিয়ার ভাগনে সাইফুল ইসলাম ডিউক, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ, বিএনপির নেতা ও ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান।
সম্পূরক অভিযোগপত্রের ৩০ আসামির মধ্যে ১৭ জন কারাগারে। একজন জামিনে মুক্ত আছেন। তারেক রহমানসহ বাকি ১২ জনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তারেক রহমান ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান। এর পর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে আছেন।
মামলায় রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৯১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
পলাতক আসামিরা: সম্পূরক অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে তারেক রহমান ছাড়া আরও পলাতক রয়েছেন হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদ, মো. হানিফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, ওবায়দুর রহমান, খান সাঈদ হাসান, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, এ টি এম আমিন। প্রথম অভিযোগপত্রের পলাতক ব্যক্তিরা হলেন, মাওলানা তাজউদ্দিন, ঝিনাইদহের ইকবাল, বরিশালের মাওলানা আবু বকর, মাগুরার খলিলুর রহমান, ঢাকার দোহারের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও গোপালগঞ্জের মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার। এ ছাড়া হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক।
কর্মসূচি: ১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সপ্তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে।
আজ রোববার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গণভবনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ইফতার করবেন প্রধানমন্ত্রী। কাল সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, ২১ আগস্ট জাতির ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, এই হামলার লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়া।

Source: 

No comments:

Post a Comment

বালিয়া মসজিদ জ্বীনের মসজিদ  স্থানীয়ভাবে এবং লোকমুখে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিত এ মসজিদটির প্রকৃত নাম ‘বালিয়া মসজিদ’। জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ...